দেশের তথ্য ডেস্কঃ
সম্প্রতি চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচির (চতুর্থ এইচপিএনএসপি) আওতায় বাস্তবায়ন হওয়া সিবিএইচসি অপারেশনাল প্ল্যান থেকে প্রধান হিসাবরক্ষক ও অর্থ কর্মকর্তা (সিএএফও) তানযিলা চৌধুরীর গাড়িতে প্রতি মাসে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকার জ্বালানি তেল দেওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। প্রতি মাসে এভাবে জ্বালানি তেল দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিলে বর্তমানে সিবিএইচসি থেকে জ্বালানি তেল দেওয়া বন্ধ রয়েছে। চলতি জুনে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
সরেজমিনে সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাবরক্ষক ও অর্থ কর্মকর্তার (সিএএফও) কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, যে গাড়িটিতে সিবিএইচসি থেকে জ্বালানি তেল দেওয়া হতো, ওই গাড়িটি ব্যবহার করছেন সিএএফও তানযিলা চৌধুরী।
সিবিএইচসি থেকে অনিয়মের মাধ্যমে জ্বালানি তেল নিয়েছেন কি না—জানতে চাইলে সিএএফও তানযিলা চৌধুরী কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি জ্বালানি তেল চেয়ে নেননি।
অডিট আপত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে সিবিএইচসি অপারেশনাল প্ল্যানের লাইন ডিরেক্টর কাইয়ুম তালুকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে জ্বালানি তেল দেওয়া হয়েছে, আরেক জায়গা থেকে দেওয়া হয়েছে গাড়ি। জ্বালানি তেল দিলেও অডিট আপত্তি বন্ধ নেই। প্রতিবছরই দেওয়া হচ্ছে অডিট আপত্তি।’
জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে ২৫ থেকে ৩০টি গাড়ি নিয়ে ব্যবহার করছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এসব গাড়ির জ্বালানি তেল ও ড্রাইভার দেওয়া হয় প্রকল্প থেকেই। এই কর্মকর্তাদের সবার সরকারের দেওয়া গাড়ি আছে। সেসব গাড়ির জ্বালানি তেল এবং ড্রাইভারও পাচ্ছেন তাঁরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব কর্মকর্তার অধিদপ্তরের গাড়ি ব্যবহারের এখতিয়ার নেই। কিন্তু তাঁরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অধিদপ্তরের গাড়ি ব্যবহার করছেন, জ্বালানি নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন কালের কণ্ঠকে জানান, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রাধিকার পাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত ঋণ এবং গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা, ২০২০ (সংশোধিত) অনুযায়ী, প্রাধিকার পাওয়া কর্মকর্তারা সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর থেকে গাড়ি সুবিধা গ্রহণ ও গাড়ি সেবা নগদায়ন করতে পারবেন। কিন্তু সুদমুক্ত ঋণ (৪০ লাখ টাকা) নিয়ে গাড়ি কিনলে যানবাহন অধিদপ্তরের গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন না। সুদমুক্ত ঋণে কেনা গাড়ির পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মাসে ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। নীতিমালায় বলা হয়েছে, গাড়ির জন্য সুদমুক্ত ঋণ নেওয়া কোনো কর্মকর্তা সাধারণভাবে তাঁর দপ্তর থেকে রিকুইজিশন ভিত্তিতে কোনো গাড়ি সরকারি বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবেন না।
জানতে চাইলে বিষয়টি নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যের অডিট অফিসার যদি এভাবে প্রকল্প থেকে জ্বালানি তেল নিয়ে অডিটে ছাড় দেন, তাহলে তা গর্হিত কাজ। তাঁর এই অপরাধ অডিট অধিদপ্তরের সুনাম সম্পর্কে জনগণের কাছে ভুল মেসেজ যাবে। কাজটি দুই পক্ষের যোগসাজশে হয়েছে। যারা এভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করছে, তাদের চিহ্নিত করে জবাবদিহি ও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’