Dhaka 12:26 am, Tuesday, 19 August 2025

জুলাই গণঅভ্যুত্থান: ফিরে দেখা খুলনার ৩১ জুলাই  

২০২৪ জুলাইয়ে রাজধানীর সঙ্গে সঙ্গে ফুঁসে উঠছিল খুলনা। রাজপথ-রেলপথ অবরোধ, দফায়-দফায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ, আগুন, গুলি, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডে নিক্ষেপ, লাঠিপেটা হয়ে ওঠে নিত্যদিনের ঘটনা।

জেল, জুলুম, গুরুত্বর আহত সবকিছুকে একই সুতায় গেঁথে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল ছাত্র-জনতা।
শহরের পথে-প্রান্তরে, অলিতে-গলিতে গোটা জুলাইজুড়ে ছিল ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের বর্বরতা। যেখানেই ছাত্র-জনতার ফুঁসে ওঠা ক্ষোভ, সেখানেই প্রকাশ্যে পুলিশের গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল আর লাঠিপেটা।

এর আগে খুলনায় অভ্যুত্থানের কর্মসূচি শুরু হয় ১০ জুলাই দৌলতপুরে রেলপথ ব্লকেডের মধ্য দিয়ে। এরপর থেকে পুলিশ বাড়ি, মেস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আবাসিক হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের ধরে এনে নিদারুণভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করতে থাকে। ১৯ জুলাই শিক্ষার্থীরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে গায়েবানা জানাজার আয়োজন করলে বাধা দেয় পুলিশ। ২২ থেকে ২৬ জুলাই প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর শহরের গুরুত্বপূণ সড়কে প্রতি মুহূর্তে শিক্ষাথীদের সাথে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। তবে ৩১ জুলাই আন্দোলনে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় খুলনা। ওইদিন রাতে সার্কিট হাউজে আওয়ামী লীগের তৎকালীন জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা আন্দোলনরত শিক্ষাথীদের কাছ থেকে জোর করে বিবৃতি আদায়ের চেষ্টা করলে তা নাকচ করেন শিক্ষার্থীরা।

 

খুলনা মহানগরীর বেশ কয়েকটি স্থানে ২০২৪ সালের ৩১ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। যা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। আন্দোলনকারীরা চারটি গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশ নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে আন্দোলনে যুক্ত কমপক্ষে ৩৫ জনকে আটক করে। সংঘর্ষে ৬০ জন শিক্ষার্থী আহত হয় বলে দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।

‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য আন্দোলনকারীদের দুপুর ১২টায় মহানগরীর রয়্যাল মোড়ে জড়ো হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই ওই মোড়ের নিয়ন্ত্রণ নেয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা। শিক্ষার্থীরা সকাল ১১টা থেকে কেউ সেখানে এলেই পুলিশ তাকে আটক করে। এ ছাড়া আশপাশের এলাকাগুলোতেও অভিযান চালিয়ে শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা ময়লাপোতা মোড় থেকে সাতরাস্তা মোড় হয়ে রয়্যাল মোড়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় আন্দোলনকারীরা দুটি প্রাইভেটকার ভাঙচুর করে। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ময়লাপোতা মোড়ে আহছান উল্লাহ কলেজের একটি কক্ষে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে পুলিশ তাদের আটক করার চেষ্টা করেও পারে না।

এর কিছু সময় পর আন্দোলনকারীরা ময়লাপোতা মোড়ের দিক থেকে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে আসে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তখন পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে তারা শেরে বাংলা রোডের দিকে চলে যায়। এরপর পুলিশের দুটি ভারী যান এবং বিজিবি সদস্যরা ওই এলাকায় টহল দেয়।

দুপুর দেড়টার দিকে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী ডালমিল মোড় থেকে লাঠি নিয়ে মিছিল বের করে। পুলিশ আন্দোলনকারী ভেবে তাদের ধাওয়া দিলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে শেরেবাংলা রোড থেকে ছাত্রলীগের আরেকটি মিছিল ময়লাপোতা হয়ে সাত রাস্তার দিকে চলে যায়।

দুপুর আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীরা আবার সাতরাস্তা মোড়ে জড়ো হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়লে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী দোলখোলা মোড় ও শান্তিধাম মোড়ে।

বিকেল ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা মডার্ন ফার্নিচার মোড়ে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। সেখানেও পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মৌলভীপাড়া এবং বিকেল ৪টার দিকে পিটিআই ও টুটপাড়া কবরখানা মোড়ে আবারও সংঘর্ষ হয়। রাজপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা মহানগর কমিটির সাবেক আহ্বায়ক আল শাহরিয়ার।

সেই দিনের ভয়াবহ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে এক কাতারে দাঁড়িয়েছিলাম খুলনার ছাত্র-জনতাকে সাথে নিয়ে।

 

৩১ জুলাই, ২০২৪ দিনটি ছিল খুলনার ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। ৩০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, খুলনা এর পক্ষ থেকে সারাদেশে ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা, মামলা, গুম এবং খুনের প্রতিবাদে ও জাতিসংঘ কর্তৃক তদন্তপূর্বক বিচারের দাবিতে এবং ছাত্র সমাজের নয় দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ শে জুলাই (বুধবার) দুপুর ১২টায় রয়েল এর মোড় থেকে জেলা জজ কোর্টের উদ্দেশ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি পদযাত্রা করার কথা ছিল। কর্মসূচিতে যোগদানের উদ্দেশ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে জমায়েত হতে গেলে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয়। তখন শিক্ষার্থীদের জড়ো হওয়ার পূর্বেই পুলিশ নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে ৫৪ জনের অধিক মানুষকে ধরপাকড়ের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এসময় শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে নিরাপদ স্থানে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন সড়কে পুলিশ ও বিজিবির টহল চলে। পরবর্তীতে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির উদ্দেশ্যে পুনরায় শিক্ষার্থীরা নগরীর নিরালা মোড় থেকে জমায়েত হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করে ময়লাপতা মোড় থেকে সাত রাস্তা মোড়ে আসলে পুনরায় পুলিশ ও বিজিবির বাঁধার সম্মুখীন হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের স্থান ত্যাগ করার জন্য পুলিশ ১০ মিনিটের আল্টিমেটাম দেয়। কিন্তু ১০ মিনিট হওয়ার আগেই পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যাপক লাঠিচার্জ শুরু করে এবং শিক্ষার্থীদের চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে। এসময় শিক্ষার্থীদের সর্বমোট আহত ৬৫, গুরুতর আহত ১২ এবং গ্রেপ্তার ৮৬ জন।

সেদিন ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীদের ওপরও পুলিশ চালায় অমানুষিক নির্যাতন। আন্দোলনরত ছাত্রীদের বেধড়ক পেটানোর পর জোর করে আটকও করা হয়েছিল। তাদেরই একজন খুলনা আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী অপসরা হাসান অপরূপা। বীভৎস সেই দিনের কথা মনে হলে এখনও আঁতকে উঠেন তিনি।

অপসরা হাসান অপরূপা বাংলানিউজকে বলেন, আন্দোলনে যোগ দিতে ৩১ জুলাই দুপুরে রয়্যালের মোড়ে একটি পরিবহন কাউন্টারে বন্ধবী ঊর্মী ও তাসমিয়াকে নিয়ে অবস্থান করছিলাম। তখন পুলিশ আমাদের দেখতে পায় এবং টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তোলে আর বলে তোর বাবা-মা বিএনপি করে। তোকে ধরলে বাবা-মা পাওয়া যাবে। সে সময় আমাদের সাথে ১২-১৫ জন মেয়েকে আটক করা হয়। সবাইকে ছেড়ে দিলেও আমাকে বিএনপি নেতার মেয়ে হওয়ায় আটকে রাখে। রাত ২টায় একঝাঁক আইনজীবীর জেরার মুখে পুলিশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। সে সময় পুলিশ আমাকে থানার একটি বারান্দায় নোংরা পরিবেশে ফ্যানবিহীন রাখে। মোবাইল কেড়ে নেয়। আন্দোলনের সব ছবি ডিলিট করে দেয়। আমার সাথে চরম দুর্ব্যবহার করে তাসলিমা নাসের এক পুলিশ কর্মকর্তা। যা আমি কোনোভাবেই ভুলতে পারছি না।

ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

জনপ্রিয় সংবাদ

খুলনায় লাজ ফার্মাকে নকল ওষুধ বিক্রির দায়ে ৫ লাখ টাকা জরিমানা

জুলাই গণঅভ্যুত্থান: ফিরে দেখা খুলনার ৩১ জুলাই  

প্রকাশঃ 06:16:49 am, Thursday, 31 July 2025

২০২৪ জুলাইয়ে রাজধানীর সঙ্গে সঙ্গে ফুঁসে উঠছিল খুলনা। রাজপথ-রেলপথ অবরোধ, দফায়-দফায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ, আগুন, গুলি, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডে নিক্ষেপ, লাঠিপেটা হয়ে ওঠে নিত্যদিনের ঘটনা।

জেল, জুলুম, গুরুত্বর আহত সবকিছুকে একই সুতায় গেঁথে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল ছাত্র-জনতা।
শহরের পথে-প্রান্তরে, অলিতে-গলিতে গোটা জুলাইজুড়ে ছিল ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের বর্বরতা। যেখানেই ছাত্র-জনতার ফুঁসে ওঠা ক্ষোভ, সেখানেই প্রকাশ্যে পুলিশের গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল আর লাঠিপেটা।

এর আগে খুলনায় অভ্যুত্থানের কর্মসূচি শুরু হয় ১০ জুলাই দৌলতপুরে রেলপথ ব্লকেডের মধ্য দিয়ে। এরপর থেকে পুলিশ বাড়ি, মেস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আবাসিক হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের ধরে এনে নিদারুণভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করতে থাকে। ১৯ জুলাই শিক্ষার্থীরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে গায়েবানা জানাজার আয়োজন করলে বাধা দেয় পুলিশ। ২২ থেকে ২৬ জুলাই প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর শহরের গুরুত্বপূণ সড়কে প্রতি মুহূর্তে শিক্ষাথীদের সাথে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। তবে ৩১ জুলাই আন্দোলনে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় খুলনা। ওইদিন রাতে সার্কিট হাউজে আওয়ামী লীগের তৎকালীন জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা আন্দোলনরত শিক্ষাথীদের কাছ থেকে জোর করে বিবৃতি আদায়ের চেষ্টা করলে তা নাকচ করেন শিক্ষার্থীরা।

 

খুলনা মহানগরীর বেশ কয়েকটি স্থানে ২০২৪ সালের ৩১ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। যা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। আন্দোলনকারীরা চারটি গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশ নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে আন্দোলনে যুক্ত কমপক্ষে ৩৫ জনকে আটক করে। সংঘর্ষে ৬০ জন শিক্ষার্থী আহত হয় বলে দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।

‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য আন্দোলনকারীদের দুপুর ১২টায় মহানগরীর রয়্যাল মোড়ে জড়ো হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই ওই মোড়ের নিয়ন্ত্রণ নেয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা। শিক্ষার্থীরা সকাল ১১টা থেকে কেউ সেখানে এলেই পুলিশ তাকে আটক করে। এ ছাড়া আশপাশের এলাকাগুলোতেও অভিযান চালিয়ে শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা ময়লাপোতা মোড় থেকে সাতরাস্তা মোড় হয়ে রয়্যাল মোড়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় আন্দোলনকারীরা দুটি প্রাইভেটকার ভাঙচুর করে। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ময়লাপোতা মোড়ে আহছান উল্লাহ কলেজের একটি কক্ষে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে পুলিশ তাদের আটক করার চেষ্টা করেও পারে না।

এর কিছু সময় পর আন্দোলনকারীরা ময়লাপোতা মোড়ের দিক থেকে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে আসে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তখন পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে তারা শেরে বাংলা রোডের দিকে চলে যায়। এরপর পুলিশের দুটি ভারী যান এবং বিজিবি সদস্যরা ওই এলাকায় টহল দেয়।

দুপুর দেড়টার দিকে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী ডালমিল মোড় থেকে লাঠি নিয়ে মিছিল বের করে। পুলিশ আন্দোলনকারী ভেবে তাদের ধাওয়া দিলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে শেরেবাংলা রোড থেকে ছাত্রলীগের আরেকটি মিছিল ময়লাপোতা হয়ে সাত রাস্তার দিকে চলে যায়।

দুপুর আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীরা আবার সাতরাস্তা মোড়ে জড়ো হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়লে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী দোলখোলা মোড় ও শান্তিধাম মোড়ে।

বিকেল ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা মডার্ন ফার্নিচার মোড়ে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। সেখানেও পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মৌলভীপাড়া এবং বিকেল ৪টার দিকে পিটিআই ও টুটপাড়া কবরখানা মোড়ে আবারও সংঘর্ষ হয়। রাজপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা মহানগর কমিটির সাবেক আহ্বায়ক আল শাহরিয়ার।

সেই দিনের ভয়াবহ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে এক কাতারে দাঁড়িয়েছিলাম খুলনার ছাত্র-জনতাকে সাথে নিয়ে।

 

৩১ জুলাই, ২০২৪ দিনটি ছিল খুলনার ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। ৩০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, খুলনা এর পক্ষ থেকে সারাদেশে ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা, মামলা, গুম এবং খুনের প্রতিবাদে ও জাতিসংঘ কর্তৃক তদন্তপূর্বক বিচারের দাবিতে এবং ছাত্র সমাজের নয় দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ শে জুলাই (বুধবার) দুপুর ১২টায় রয়েল এর মোড় থেকে জেলা জজ কোর্টের উদ্দেশ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি পদযাত্রা করার কথা ছিল। কর্মসূচিতে যোগদানের উদ্দেশ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে জমায়েত হতে গেলে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয়। তখন শিক্ষার্থীদের জড়ো হওয়ার পূর্বেই পুলিশ নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে ৫৪ জনের অধিক মানুষকে ধরপাকড়ের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এসময় শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে নিরাপদ স্থানে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন সড়কে পুলিশ ও বিজিবির টহল চলে। পরবর্তীতে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির উদ্দেশ্যে পুনরায় শিক্ষার্থীরা নগরীর নিরালা মোড় থেকে জমায়েত হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করে ময়লাপতা মোড় থেকে সাত রাস্তা মোড়ে আসলে পুনরায় পুলিশ ও বিজিবির বাঁধার সম্মুখীন হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের স্থান ত্যাগ করার জন্য পুলিশ ১০ মিনিটের আল্টিমেটাম দেয়। কিন্তু ১০ মিনিট হওয়ার আগেই পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যাপক লাঠিচার্জ শুরু করে এবং শিক্ষার্থীদের চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে। এসময় শিক্ষার্থীদের সর্বমোট আহত ৬৫, গুরুতর আহত ১২ এবং গ্রেপ্তার ৮৬ জন।

সেদিন ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীদের ওপরও পুলিশ চালায় অমানুষিক নির্যাতন। আন্দোলনরত ছাত্রীদের বেধড়ক পেটানোর পর জোর করে আটকও করা হয়েছিল। তাদেরই একজন খুলনা আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী অপসরা হাসান অপরূপা। বীভৎস সেই দিনের কথা মনে হলে এখনও আঁতকে উঠেন তিনি।

অপসরা হাসান অপরূপা বাংলানিউজকে বলেন, আন্দোলনে যোগ দিতে ৩১ জুলাই দুপুরে রয়্যালের মোড়ে একটি পরিবহন কাউন্টারে বন্ধবী ঊর্মী ও তাসমিয়াকে নিয়ে অবস্থান করছিলাম। তখন পুলিশ আমাদের দেখতে পায় এবং টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তোলে আর বলে তোর বাবা-মা বিএনপি করে। তোকে ধরলে বাবা-মা পাওয়া যাবে। সে সময় আমাদের সাথে ১২-১৫ জন মেয়েকে আটক করা হয়। সবাইকে ছেড়ে দিলেও আমাকে বিএনপি নেতার মেয়ে হওয়ায় আটকে রাখে। রাত ২টায় একঝাঁক আইনজীবীর জেরার মুখে পুলিশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। সে সময় পুলিশ আমাকে থানার একটি বারান্দায় নোংরা পরিবেশে ফ্যানবিহীন রাখে। মোবাইল কেড়ে নেয়। আন্দোলনের সব ছবি ডিলিট করে দেয়। আমার সাথে চরম দুর্ব্যবহার করে তাসলিমা নাসের এক পুলিশ কর্মকর্তা। যা আমি কোনোভাবেই ভুলতে পারছি না।