Dhaka 9:18 pm, Sunday, 17 August 2025

দক্ষিণ কোরিয়ায় দাবানলে ভয়াবহ ক্ষতি, ২৪ জনের মৃত্যু, কী চলছে? এসব

দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে একাধিক দাবানলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ২৪ জনে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিহতদের বেশিরভাগের বয়স ৬০ থেকে ৭০ এর মধ্যে। আহত হয়েছেন ২৬ জন, যাদের মধ্যে ১২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।এই দাবানলে ২৩ হাজারের বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হান ডাক-সু বলেছেন, ‘আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল এটি।’ আগুনে উইসং শহরের ১ হাজার ৩০০ বছরের পুরনো একটি মন্দির পুড়ে গেছে। যেখান থেকে অনেক সাংস্কৃতিক নিদর্শন সরিয়ে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছিল।
গত শুক্রবার সানচেং কাউন্টিতে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং পরে তা উইসেওং কাউন্টিতে ছড়িয়ে পড়ে।প্রবল ও শুষ্ক বাতাসের কারণে দাবানল পার্শ্ববর্তী কাউন্টি গিয়ংবুক, উইসেওং, আন্দং, চেওংসং, ইয়ংইয়ং এবং সানচেং-এ ছড়িয়ে পড়ে।
গতকাল বুধবার উইসেওং পাহাড়ে একটি অগ্নিনির্বাপক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে পাইলট নিহত হন। কর্মকর্তারা কারণ অনুসন্ধান করছেন। হাজার হাজার অগ্নিনির্বাপক কর্মী এবং প্রায় ৫ হাজার সামরিক কর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।পাশাপাশি কোরিয়ায় অবস্থানরত মার্কিন সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টারও মোতায়েন করা হয়েছে।দক্ষিণ কোরিয়ায় দাবানল তুলনামূলকভাবে অস্বাভাবিক। তবে বর্তমান দাবানল ইতিমধ্যেই এর ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক। প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর (৪২ হাজার একর) বন ধ্বংস হয়ে গেছে, আয়তনের দিক থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে তৃতীয় বৃহত্তম দাবানল এটি।আন্দংয়ের একটি গ্রামের একজন বাসিন্দা বিবিসি কোরিয়াকে বলেন, ‘আমাদের বাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।প্রায় সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে।’ উইসংয়ে বসবাসকারী ৩০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি বলেন, ‘উপরের তলা এবং পাশের বাড়ি উভয়ই পুড়ে গেছে।’
উইসংয় শহরে আগুনে ৬১৮ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত প্রদেশের বৃহত্তম মন্দিরগুলোর মধ্যে একটি গৌনসা ধ্বংস হয়ে যায়। ৬৮ বছর বয়সী এক সন্ন্যাসী বলেন, গৌনসা মন্দির ধ্বংসের কথা শুনে তিনি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মন্দিরের কার্যকারিতা পুনরুদ্ধারের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব।’বন কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, জোসেন রাজবংশের (১৩৯২-১৯১০) জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচিত একটি বৌদ্ধ স্থাপত্য কাঠামোও ধ্বংস হয়েছে। আন্দং-এ ট্রাক চালক লি সেউং-জু বলেছেন, তিনি গাড়ি চালানোর সময় পাহাড়গুলোকে পুড়তে দেখেছেন। এএফপি অনুসারে, ৩৯ বছর বয়সী এই ব্যক্তি বলেন, ‘এটি ছিল সর্বনাশের মতো।ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান বলেন, তীব্র বাতাস এখনও অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার প্রচেষ্টায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ‘আগুন নেভাতে সাহায্য করার জন্য আমরা বৃষ্টিপাতের আশায় ছিলাম।’ কোরিয়া আবহাওয়া প্রশাসনের মতে, গতকাল বুধবার এই অঞ্চলে কোনো বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস ছিল না এবং আজ বৃহস্পতিবার মাত্র অল্প পরিমাণে পাঁচ থেকে ১০ মিমি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।দক্ষিণ কোরিয়া স্বাভাবিকের চেয়ে শুষ্ক পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং কম বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এই বছর ইতিমধ্যেই ২৪৪টি দাবানলের ঘটনা ঘটেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২.৪ গুণ বেশি। সরকার দাবানলের অন্যতম প্রধান কারণ অবৈধভাবে কিছু পোড়ানোর বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ জোরদার করার এবং ব্যক্তিগত অসাবধানতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

 

 

ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

জনপ্রিয় সংবাদ

গভ. ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের এস এস সি-২০২৫ জিপিএ- ৫ প্রাপ্ত কৃতি ল্যাবরেটরিয়ানদের সংবর্ধনা প্রদান

দক্ষিণ কোরিয়ায় দাবানলে ভয়াবহ ক্ষতি, ২৪ জনের মৃত্যু, কী চলছে? এসব

প্রকাশঃ 07:09:57 am, Thursday, 27 March 2025
দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে একাধিক দাবানলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ২৪ জনে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিহতদের বেশিরভাগের বয়স ৬০ থেকে ৭০ এর মধ্যে। আহত হয়েছেন ২৬ জন, যাদের মধ্যে ১২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।এই দাবানলে ২৩ হাজারের বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হান ডাক-সু বলেছেন, ‘আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল এটি।’ আগুনে উইসং শহরের ১ হাজার ৩০০ বছরের পুরনো একটি মন্দির পুড়ে গেছে। যেখান থেকে অনেক সাংস্কৃতিক নিদর্শন সরিয়ে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছিল।
গত শুক্রবার সানচেং কাউন্টিতে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং পরে তা উইসেওং কাউন্টিতে ছড়িয়ে পড়ে।প্রবল ও শুষ্ক বাতাসের কারণে দাবানল পার্শ্ববর্তী কাউন্টি গিয়ংবুক, উইসেওং, আন্দং, চেওংসং, ইয়ংইয়ং এবং সানচেং-এ ছড়িয়ে পড়ে।
গতকাল বুধবার উইসেওং পাহাড়ে একটি অগ্নিনির্বাপক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে পাইলট নিহত হন। কর্মকর্তারা কারণ অনুসন্ধান করছেন। হাজার হাজার অগ্নিনির্বাপক কর্মী এবং প্রায় ৫ হাজার সামরিক কর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।পাশাপাশি কোরিয়ায় অবস্থানরত মার্কিন সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টারও মোতায়েন করা হয়েছে।দক্ষিণ কোরিয়ায় দাবানল তুলনামূলকভাবে অস্বাভাবিক। তবে বর্তমান দাবানল ইতিমধ্যেই এর ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক। প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর (৪২ হাজার একর) বন ধ্বংস হয়ে গেছে, আয়তনের দিক থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে তৃতীয় বৃহত্তম দাবানল এটি।আন্দংয়ের একটি গ্রামের একজন বাসিন্দা বিবিসি কোরিয়াকে বলেন, ‘আমাদের বাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।প্রায় সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে।’ উইসংয়ে বসবাসকারী ৩০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি বলেন, ‘উপরের তলা এবং পাশের বাড়ি উভয়ই পুড়ে গেছে।’
উইসংয় শহরে আগুনে ৬১৮ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত প্রদেশের বৃহত্তম মন্দিরগুলোর মধ্যে একটি গৌনসা ধ্বংস হয়ে যায়। ৬৮ বছর বয়সী এক সন্ন্যাসী বলেন, গৌনসা মন্দির ধ্বংসের কথা শুনে তিনি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মন্দিরের কার্যকারিতা পুনরুদ্ধারের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব।’বন কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, জোসেন রাজবংশের (১৩৯২-১৯১০) জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচিত একটি বৌদ্ধ স্থাপত্য কাঠামোও ধ্বংস হয়েছে। আন্দং-এ ট্রাক চালক লি সেউং-জু বলেছেন, তিনি গাড়ি চালানোর সময় পাহাড়গুলোকে পুড়তে দেখেছেন। এএফপি অনুসারে, ৩৯ বছর বয়সী এই ব্যক্তি বলেন, ‘এটি ছিল সর্বনাশের মতো।ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান বলেন, তীব্র বাতাস এখনও অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার প্রচেষ্টায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ‘আগুন নেভাতে সাহায্য করার জন্য আমরা বৃষ্টিপাতের আশায় ছিলাম।’ কোরিয়া আবহাওয়া প্রশাসনের মতে, গতকাল বুধবার এই অঞ্চলে কোনো বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস ছিল না এবং আজ বৃহস্পতিবার মাত্র অল্প পরিমাণে পাঁচ থেকে ১০ মিমি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।দক্ষিণ কোরিয়া স্বাভাবিকের চেয়ে শুষ্ক পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং কম বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এই বছর ইতিমধ্যেই ২৪৪টি দাবানলের ঘটনা ঘটেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২.৪ গুণ বেশি। সরকার দাবানলের অন্যতম প্রধান কারণ অবৈধভাবে কিছু পোড়ানোর বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ জোরদার করার এবং ব্যক্তিগত অসাবধানতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।