Dhaka 5:25 am, Sunday, 15 June 2025

বিসিবির পেশাদারিত্ব এমন কেন!

শ্রীলঙ্কা সফর ঘিরে তখন সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল হোসেন শান্ত। একটু পরই তার অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়ার যে জুম মিটিং হচ্ছিল, সেটা হয়তো তখনো টেরই পাননি নাজমুল। কিন্তু মিরপুর ছাড়ার আগে বার্তাটা ঠিকই কানে পৌঁছেছিল—৫০ ওভারের ক্রিকেটের নেতৃত্বের ভার আর থাকছে না নাজমুলের কাঁধে। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদীন ফাহিম নতুন অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজের নাম। মিরাজ অবশ্য স্টেডিয়াম ছাড়ার আগেই সুখবরটা জানতে পেরেছিলেন। কিন্তু পুরো ঘটনাটিতে বড় প্রশ্ন জাগাল বিসিবির পেশাদারিত্ব! আরও একবার প্রশ্নবিদ্ধ হলো দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ক্রিকেটারদের মধ্যেও এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, যা দেশের ক্রিকেটের জন্যও শঙ্কার। যদিও বোর্ডের অনেকে মনে করেন, দলের পরিবেশ আগের চেয়ে ভালোর দিকেই আছে।

 

গত আগস্টে দেশের ক্ষমতার মতো করেই পরিবর্তন এসেছিলেন বিসিবিতেও। দেশের ক্রিকেটের উন্নতির স্বার্থে সংস্কারের নানা রূপরেখাও দিতে দেখা গিয়েছিল গণমাধ্যমে। কিন্তু দশ মাস যেতে না যেতে যেন ভেঙে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কখনো বোর্ড প্রধানকেই সরিয়ে ফেলা কিংবা কখনো অধিনায়ক বদলে ফেলা—কিছুই যেন আর আঁচ করার মতো ঘটনা থাকল না। সে কারণেই অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর মিরাজের বলা একটি বাক্যকে যথার্থ না বলেও থাকা যাচ্ছে না। এক বছরের জন্য দায়িত্ব পেলেও আদৌ পুরো সময় থাকতে পারবেন তো—এমন প্রশ্নে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে মিরাজ যেমনটা বলেছিলেন, ‘আমি জানি না তারা কীভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দেখেন অনেক পরিস্থিতি তো ঘটে। আমরা সেভাবে মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে থাকি।’

 

হ্যাঁ, নাজমুল হোসেন কিংবা মিরাজদের এখন মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা ছাড়াও আর কোনো উপায় নেই। ১৭ জুন থেকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যে টেস্ট সিরিজ শুরু হতে যাচ্ছে। তার আগে নাজমুল হোসেনের নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়া কিংবা বদলে যাওয়াও তো এখন আর কাউকে অবাক করার কথাও না। অথচ পেশাদারিত্বের কথাই সব সময় বলতে দেখা গেছে বিসিবির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকদের। বিশেষ করে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদীন পেশাদারিত্বকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিতেন! অথচ তার অধীনে থাকা বিভাগের অধিনায়কের বদলটা কতটা পেশাদার পদ্ধতিতে হলো—সে প্রশ্নও এখন চারদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে বিষয়টি নিয়ে কালবেলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করলে নাজমুল আবেদীন বলেন, ‘পুরো বিষয়টি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্যে হয়েছে। নাজমুল হোসেন শান্ত কিংবা মিরাজ কেউই আগে থেকে কিছু জানত না।’

 

প্রসঙ্গের সঙ্গে প্রসঙ্গ চলে আসে। দশ মাস আগে বিসিবিকে ঢেলে সাজাতে প্রেসিডেন্ট হয়ে এসেছিলেন ফারুক আহমেদও। কিন্তু কিছুদিন আগে নাটকীয়ভাবে তারও অপসারণ হয়েছে। পদ ছাড়তে না চাইলেও সরকারের সিদ্ধান্তের পর আর পদ আঁকড়ে রাখতে পারেননি তিনি। কোর্ট কাচারিতেও কোনো সুবিধায় মেলেনি তার। তারও প্রশ্ন ছিল ওই একটাই, কী কারণে অপসারণ, সেটাই জানানো হয়নি তাকে! নাজমুল হোসেনও এখন এই প্রশ্নটা হয়তো বারবার নিজেকে করবেন! যখন নিজ থেকেই ছাড়তে ছেয়েছিলেন; তখন সবাই অনুরোধ করে আটকে রেখেছিল তাকে। তারপরও ব্যাটিংয়ে মনোযোগী হতে এক সংস্করণ অর্থাৎ টি-টোয়েন্টিটা নিজের সিদ্ধান্তেই ছেড়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাকি যে দুই সংস্করণ ঘিরে স্বপ্ন ও পরিকল্পনার ছবি মনে আঁকতে ছিলেন, সেখানে তো এখন ছেদ পড়েছে। ওয়ানডে থেকে অনেকটা জোরপূর্বকই সরে যেতে হলো তার। বাকি টেস্টেও যে দীর্ঘদিন থাকতে পারবেন, সে ভরসাও বা পাবেন কোথায়! যেখানে একটা জুম মিটিংই তার নেতৃত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

জনপ্রিয় সংবাদ

বিসিবির পেশাদারিত্ব এমন কেন!

প্রকাশঃ 08:50:17 am, Saturday, 14 June 2025

শ্রীলঙ্কা সফর ঘিরে তখন সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল হোসেন শান্ত। একটু পরই তার অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়ার যে জুম মিটিং হচ্ছিল, সেটা হয়তো তখনো টেরই পাননি নাজমুল। কিন্তু মিরপুর ছাড়ার আগে বার্তাটা ঠিকই কানে পৌঁছেছিল—৫০ ওভারের ক্রিকেটের নেতৃত্বের ভার আর থাকছে না নাজমুলের কাঁধে। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদীন ফাহিম নতুন অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজের নাম। মিরাজ অবশ্য স্টেডিয়াম ছাড়ার আগেই সুখবরটা জানতে পেরেছিলেন। কিন্তু পুরো ঘটনাটিতে বড় প্রশ্ন জাগাল বিসিবির পেশাদারিত্ব! আরও একবার প্রশ্নবিদ্ধ হলো দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ক্রিকেটারদের মধ্যেও এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, যা দেশের ক্রিকেটের জন্যও শঙ্কার। যদিও বোর্ডের অনেকে মনে করেন, দলের পরিবেশ আগের চেয়ে ভালোর দিকেই আছে।

 

গত আগস্টে দেশের ক্ষমতার মতো করেই পরিবর্তন এসেছিলেন বিসিবিতেও। দেশের ক্রিকেটের উন্নতির স্বার্থে সংস্কারের নানা রূপরেখাও দিতে দেখা গিয়েছিল গণমাধ্যমে। কিন্তু দশ মাস যেতে না যেতে যেন ভেঙে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কখনো বোর্ড প্রধানকেই সরিয়ে ফেলা কিংবা কখনো অধিনায়ক বদলে ফেলা—কিছুই যেন আর আঁচ করার মতো ঘটনা থাকল না। সে কারণেই অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর মিরাজের বলা একটি বাক্যকে যথার্থ না বলেও থাকা যাচ্ছে না। এক বছরের জন্য দায়িত্ব পেলেও আদৌ পুরো সময় থাকতে পারবেন তো—এমন প্রশ্নে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে মিরাজ যেমনটা বলেছিলেন, ‘আমি জানি না তারা কীভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দেখেন অনেক পরিস্থিতি তো ঘটে। আমরা সেভাবে মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে থাকি।’

 

হ্যাঁ, নাজমুল হোসেন কিংবা মিরাজদের এখন মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা ছাড়াও আর কোনো উপায় নেই। ১৭ জুন থেকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যে টেস্ট সিরিজ শুরু হতে যাচ্ছে। তার আগে নাজমুল হোসেনের নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়া কিংবা বদলে যাওয়াও তো এখন আর কাউকে অবাক করার কথাও না। অথচ পেশাদারিত্বের কথাই সব সময় বলতে দেখা গেছে বিসিবির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকদের। বিশেষ করে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদীন পেশাদারিত্বকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিতেন! অথচ তার অধীনে থাকা বিভাগের অধিনায়কের বদলটা কতটা পেশাদার পদ্ধতিতে হলো—সে প্রশ্নও এখন চারদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে বিষয়টি নিয়ে কালবেলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করলে নাজমুল আবেদীন বলেন, ‘পুরো বিষয়টি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্যে হয়েছে। নাজমুল হোসেন শান্ত কিংবা মিরাজ কেউই আগে থেকে কিছু জানত না।’

 

প্রসঙ্গের সঙ্গে প্রসঙ্গ চলে আসে। দশ মাস আগে বিসিবিকে ঢেলে সাজাতে প্রেসিডেন্ট হয়ে এসেছিলেন ফারুক আহমেদও। কিন্তু কিছুদিন আগে নাটকীয়ভাবে তারও অপসারণ হয়েছে। পদ ছাড়তে না চাইলেও সরকারের সিদ্ধান্তের পর আর পদ আঁকড়ে রাখতে পারেননি তিনি। কোর্ট কাচারিতেও কোনো সুবিধায় মেলেনি তার। তারও প্রশ্ন ছিল ওই একটাই, কী কারণে অপসারণ, সেটাই জানানো হয়নি তাকে! নাজমুল হোসেনও এখন এই প্রশ্নটা হয়তো বারবার নিজেকে করবেন! যখন নিজ থেকেই ছাড়তে ছেয়েছিলেন; তখন সবাই অনুরোধ করে আটকে রেখেছিল তাকে। তারপরও ব্যাটিংয়ে মনোযোগী হতে এক সংস্করণ অর্থাৎ টি-টোয়েন্টিটা নিজের সিদ্ধান্তেই ছেড়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাকি যে দুই সংস্করণ ঘিরে স্বপ্ন ও পরিকল্পনার ছবি মনে আঁকতে ছিলেন, সেখানে তো এখন ছেদ পড়েছে। ওয়ানডে থেকে অনেকটা জোরপূর্বকই সরে যেতে হলো তার। বাকি টেস্টেও যে দীর্ঘদিন থাকতে পারবেন, সে ভরসাও বা পাবেন কোথায়! যেখানে একটা জুম মিটিংই তার নেতৃত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট।