আবারো রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে এ কম্পনটি টের পাওয়া যায়। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ গোলাম মোস্তফা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পটির রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৪। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশপাশে, যা ঢাকা থেকে প্রায় ১০৫ কিলোমিটার দূরে। বর্তমানে তারা বিষয়টি নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন।
ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে অনেকে পোস্ট দিতে শুরু করেন। অনেকে আতঙ্কিত হয়ে বাসা-বাড়ি থেকেও বেরিয়ে আসেন।
এর আগে শুক্রবার সকালেও মিয়ানমারে ৪.১ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। দেশটির জাতীয় ভূকম্পন কেন্দ্র (এনসিএস) জানিয়েছে, কম্পনটি ছিল ১০ কিলোমিটার গভীরে এবং এতে আফটারশকের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরণের একের পর এক ভূমিকম্প বড় কোনো বিপদের পূর্বাভাস হতে পারে। বাংলাদেশ, বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চল ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ভূ-তাত্ত্বিক অবস্থান অনুযায়ী বাংলাদেশ তিনটি প্রধান টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত—ইউরেশিয়ান প্লেট, ইন্ডিয়ান প্লেট এবং বার্মা মাইক্রোপ্লেট। ফলে মাঝারি থেকে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা অস্বীকার করা যাচ্ছে না।
২০২৩ সালে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) প্রকাশিত একটি গবেষণায় জানানো হয়, যদি ঢাকায় ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তাহলে ৮ লাখ ৬৪ হাজার ভবন ধসে পড়বে। দিনের বেলায় ভূমিকম্প হলে ২ লাখ ১০ হাজার এবং রাতের বেলায় হলে ৩ লাখ ২০ হাজার মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৭.৫ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভূমিকম্প ঝুঁকির মানচিত্র অনুযায়ী এলাকা ভাগ করা হয়েছে:
উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা: সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান
মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা: ঢাকা, কুমিল্লা, ফরিদপুর
কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা: খুলনা, বরিশাল
২০০১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দেশে ৫৯০টি ভূমিকম্প রেকর্ড হয়েছে, যা বছরে গড়ে ৩৫টি। আর ২০১৭ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৮০টিতে। চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই তিনটি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ছোট ছোট ভূকম্পনগুলো আসলে বড় কোনো ভূমিকম্পের পূর্বাভাস হতে পারে। এখন সময় সচেতন হওয়ার, ভবন নির্মাণে ভূমিকম্প প্রতিরোধী নকশা বাধ্যতামূলক করার এবং জাতীয় পর্যায়ে জরুরি প্রস্তুতি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের।