Dhaka 10:09 pm, Monday, 18 August 2025

বেরিয়ে এল থলের বিড়াল, ওবায়দুল কাদেরকে খুশি করতে যে অনৈতিক কাজ করেন মিতা

সাম্প্রতিক প্রশাসনিক পদক্ষেপে ফের মানচিত্রে দৃশ্যমান হতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের উপকূলীয় দ্বীপ সন্দ্বীপ। বঙ্গোপসাগরের বুকে নতুন করে জেগে ওঠা চরগুলো এতদিন নোয়াখালীর অন্তর্ভুক্ত হিসেবে বিবেচিত হলেও, এবার তা ফের সন্দ্বীপের আওতায় ফিরতে যাচ্ছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের পর সৃষ্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই সন্দ্বীপ-নোয়াখালীর সীমানা বিরোধ ফের সামনে আসে। হাইকোর্টে রুল জারি ও সরকারের নির্দেশনায় এ নিয়ে প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু হয়। ১০ এপ্রিল চূড়ান্ত বৈঠকে ভাসানচরসহ ছয়টি মৌজা সন্দ্বীপের অন্তর্ভুক্ত বলেই উঠে আসে সরকারি প্রতিবেদনে।

জানা গেছে ওবায়দুল কাদেরকে খুশি করতে ভাসানচরকে হাতে তুলে দেন সাবেক এমপি মিতা। সরকারের শীর্ষ মহল থেকে দ্রুত সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেওয়া হয়।

জানা গেছে, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৭ সালে দ্বীপটির মালিকানায় থাকা ৬ মৌজাসহ উরিরচরের দুটি ইউনিয়নকে নোয়াখালী জেলার অধীনে দিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ, পতিত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে তৎকালীন প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। দলের সাধারণ সম্পাদককে খুশি ও নিজের নমিনেশন পোক্ত করার জন্য খোদ সন্দ্বীপের পতিত এমপি মাহফুজুর রহমান মিতাও সে সময় এর বিরোধিতা করেননি বলে তার ঘনিষ্ঠরা জানান। উলটো নোয়াখালীর পক্ষে ডিও লেটার দেন। তৎকালীন সরকারের ওই সিদ্ধান্তে গোটা সন্দ্বীপের সাধারণ মানুষ সে সময় ফুঁসে উঠেছিলেন। মামলা হয় উচ্চ আদালতে। সন্দ্বীপের বাসিন্দা মনিরুল হুদা হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকারের একরোখা সিদ্ধান্তের কারণে বাতিল করা সম্ভব হয়নি সন্দ্বীপবিরোধী ওই একতরফা আদেশ। সাবেক এমপি মাহফুজুর রহমান মিতা আত্মগোপনে থাকায় এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, সন্দ্বীপ দ্বীপটির আয়তন এখন প্রায় ৭২১ বর্গকিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে। জাহাইজ্যারচর, ভাসানচর, উরিরচর ইতোমধ্যেই দ্বীপটির সঙ্গে মিশে গেছে। এসব চর পলি জমে ক্রমাগত বড় হচ্ছে এবং সন্দ্বীপের ভূখণ্ডে যুক্ত হয়ে এক বিশাল দ্বীপাঞ্চলের জন্ম দিচ্ছে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় তৈরি হওয়া সর্বশেষ প্রতিবেদনে ভাসানচর, শালিকচর, চর বাতায়ন, চর মোহনা, চর কাজলা ও কাউয়ারচর—এই ছয়টি মৌজাকে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার অংশ হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে। গুগল ম্যাপ বিশ্লেষণ, সিএস ও আরএস রেকর্ড, এবং মাঠ পর্যায়ের পর্যালোচনা শেষে এসব তথ্য উঠে আসে।

সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিগ্যান চাকমা জানান, “ভাসানচর সন্দ্বীপ থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে, আর হাতিয়া থেকে প্রায় ২১ কিলোমিটার দূরে। ইতিহাস, ভূগোল ও প্রশাসনিক নথি অনুযায়ী এটি সন্দ্বীপেরই অংশ।”

সন্দ্বীপ ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সভাপতি নুরুল আক্তার জানান, “ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ায় সন্দ্বীপ এখন বিনিয়োগকারীদের নজরে এসেছে। এখানে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সুযোগ রয়েছে।” এলজিইডি প্রকৌশলী মো. আব্দুল আলীম বলেন, “সড়ক উন্নয়ন দ্রুত গতিতে চলছে। ফেরি সার্ভিসের কারণে যান চলাচল বেড়েছে, সড়কগুলো এখন দ্রুত সংস্কার করা হবে।”

অতীতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে বিলীন হওয়া চরের মালিকানা পুনরুদ্ধার এখন সন্দ্বীপবাসীর কাছে আশার আলো। ১০ এপ্রিলের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে স্পষ্ট হয়ে উঠবে, সন্দ্বীপের হারানো ভূখণ্ড কীভাবে ফিরছে নিজেদের গর্ভে।

ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

জনপ্রিয় সংবাদ

খুলনায় লাজ ফার্মাকে নকল ওষুধ বিক্রির দায়ে ৫ লাখ টাকা জরিমানা

বেরিয়ে এল থলের বিড়াল, ওবায়দুল কাদেরকে খুশি করতে যে অনৈতিক কাজ করেন মিতা

প্রকাশঃ 06:22:57 am, Wednesday, 9 April 2025

সাম্প্রতিক প্রশাসনিক পদক্ষেপে ফের মানচিত্রে দৃশ্যমান হতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের উপকূলীয় দ্বীপ সন্দ্বীপ। বঙ্গোপসাগরের বুকে নতুন করে জেগে ওঠা চরগুলো এতদিন নোয়াখালীর অন্তর্ভুক্ত হিসেবে বিবেচিত হলেও, এবার তা ফের সন্দ্বীপের আওতায় ফিরতে যাচ্ছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের পর সৃষ্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই সন্দ্বীপ-নোয়াখালীর সীমানা বিরোধ ফের সামনে আসে। হাইকোর্টে রুল জারি ও সরকারের নির্দেশনায় এ নিয়ে প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু হয়। ১০ এপ্রিল চূড়ান্ত বৈঠকে ভাসানচরসহ ছয়টি মৌজা সন্দ্বীপের অন্তর্ভুক্ত বলেই উঠে আসে সরকারি প্রতিবেদনে।

জানা গেছে ওবায়দুল কাদেরকে খুশি করতে ভাসানচরকে হাতে তুলে দেন সাবেক এমপি মিতা। সরকারের শীর্ষ মহল থেকে দ্রুত সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেওয়া হয়।

জানা গেছে, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৭ সালে দ্বীপটির মালিকানায় থাকা ৬ মৌজাসহ উরিরচরের দুটি ইউনিয়নকে নোয়াখালী জেলার অধীনে দিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ, পতিত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে তৎকালীন প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। দলের সাধারণ সম্পাদককে খুশি ও নিজের নমিনেশন পোক্ত করার জন্য খোদ সন্দ্বীপের পতিত এমপি মাহফুজুর রহমান মিতাও সে সময় এর বিরোধিতা করেননি বলে তার ঘনিষ্ঠরা জানান। উলটো নোয়াখালীর পক্ষে ডিও লেটার দেন। তৎকালীন সরকারের ওই সিদ্ধান্তে গোটা সন্দ্বীপের সাধারণ মানুষ সে সময় ফুঁসে উঠেছিলেন। মামলা হয় উচ্চ আদালতে। সন্দ্বীপের বাসিন্দা মনিরুল হুদা হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকারের একরোখা সিদ্ধান্তের কারণে বাতিল করা সম্ভব হয়নি সন্দ্বীপবিরোধী ওই একতরফা আদেশ। সাবেক এমপি মাহফুজুর রহমান মিতা আত্মগোপনে থাকায় এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, সন্দ্বীপ দ্বীপটির আয়তন এখন প্রায় ৭২১ বর্গকিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে। জাহাইজ্যারচর, ভাসানচর, উরিরচর ইতোমধ্যেই দ্বীপটির সঙ্গে মিশে গেছে। এসব চর পলি জমে ক্রমাগত বড় হচ্ছে এবং সন্দ্বীপের ভূখণ্ডে যুক্ত হয়ে এক বিশাল দ্বীপাঞ্চলের জন্ম দিচ্ছে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় তৈরি হওয়া সর্বশেষ প্রতিবেদনে ভাসানচর, শালিকচর, চর বাতায়ন, চর মোহনা, চর কাজলা ও কাউয়ারচর—এই ছয়টি মৌজাকে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার অংশ হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে। গুগল ম্যাপ বিশ্লেষণ, সিএস ও আরএস রেকর্ড, এবং মাঠ পর্যায়ের পর্যালোচনা শেষে এসব তথ্য উঠে আসে।

সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিগ্যান চাকমা জানান, “ভাসানচর সন্দ্বীপ থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে, আর হাতিয়া থেকে প্রায় ২১ কিলোমিটার দূরে। ইতিহাস, ভূগোল ও প্রশাসনিক নথি অনুযায়ী এটি সন্দ্বীপেরই অংশ।”

সন্দ্বীপ ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সভাপতি নুরুল আক্তার জানান, “ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ায় সন্দ্বীপ এখন বিনিয়োগকারীদের নজরে এসেছে। এখানে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সুযোগ রয়েছে।” এলজিইডি প্রকৌশলী মো. আব্দুল আলীম বলেন, “সড়ক উন্নয়ন দ্রুত গতিতে চলছে। ফেরি সার্ভিসের কারণে যান চলাচল বেড়েছে, সড়কগুলো এখন দ্রুত সংস্কার করা হবে।”

অতীতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে বিলীন হওয়া চরের মালিকানা পুনরুদ্ধার এখন সন্দ্বীপবাসীর কাছে আশার আলো। ১০ এপ্রিলের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে স্পষ্ট হয়ে উঠবে, সন্দ্বীপের হারানো ভূখণ্ড কীভাবে ফিরছে নিজেদের গর্ভে।