২৪ সালের ৫ আগস্ট দীর্ঘ ১৬ বছর শাসন করা শেখ হাসিনা গোপনে দেশত্যাগ করার পর পরই দৃশ্যপট পাল্টে যায় বাংলাদেশ রাজনীতির। এক সময়ের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা তখন থেকেই একে একে গা ঢাকা দিতে শুরু করেন। তবে পালিয়ে গেলেও ফেলে যাননি তাদের বিশাল অঙ্কের সম্পদ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান এখন টিকিয়ে রাখতেই খোঁজা হচ্ছে নতুন অংশীদার।
বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, পলাতক সাবেক এমপি-মন্ত্রী থেকে শুরু করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারাও তাঁদের ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষা করতে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলছেন। এতে একদিকে যেমন বদলে যাচ্ছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের চিত্র, অন্যদিকে তৈরি হচ্ছে নতুন প্রশ্ন — ক্ষমতার সুযোগ নিয়ে গড়ে ওঠা এই সাম্রাজ্য টিকে থাকবে কতদিন?
নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ও আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও তাঁর ভাই সেলিম ওসমান মিলে গড়ে তুলেছিলেন প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা সাম্রাজ্য। গার্মেন্টস, শিপিং, পরিবহন ও আবাসন খাতজুড়ে বিস্তৃত এই সাম্রাজ্য পরিচালনার দায়িত্ব এখন নিয়েছেন এক বিএনপি নেতা, যিনি নিজেই রাজধানীর গুলশানে শামীম ওসমানের বাড়ির ভাড়াটিয়া ছিলেন।
সাবেক শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বর্তমানে কারাবন্দী। তার মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের এক ডজনের বেশি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে ঋণের চাপে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক থেকে তিনি নিয়েছেন ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণ। সেই ব্যবসাও এখন টিকিয়ে রাখতে খোঁজা হচ্ছে অংশীদার।
নারায়ণগঞ্জের আরেক সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীও রয়েছেন কারাগারে। তার গাজী গ্রুপের বেশ কিছু কারখানা বন্ধ। পরিবার সূত্র জানিয়েছে, তারা নতুন বিনিয়োগকারী বা অংশীদার খুঁজছেন।
চট্টগ্রামের হাছান মাহমুদ, ঢাকার সাইফুজ্জামান চৌধুরী, রাজশাহীর শাহরিয়ার আলম, কুমিল্লার তাজুল ইসলাম, কুষ্টিয়ার মাহবুব-উল-আলম হানিফ, মুন্সিগঞ্জের নসরুল হামিদ ও কুমিল্লার সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের মতো নেতাদের সম্পদের পরিমাণ শত কোটি থেকে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এই সম্পদ ও ব্যবসার বড় অংশ এখন পরিচালিত হচ্ছে স্ত্রী, ভাই, সন্তান বা অংশীদারদের মাধ্যমে। কেউ কেউ ব্যবসার একাংশ বিক্রি করে দিচ্ছেন বা পরিচালনার জন্য খুঁজছেন নতুন অংশীদার।
এদিকে, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের এমডি ও আওয়ামী লীগ নেতা দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, নিপা গ্রুপের চেয়ারম্যান খসরু চৌধুরী, আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ও নিজাম উদ্দিন হাজারীর মতো নেতারাও রয়েছেন বিত্তবানের তালিকায়। এই নেতারাও এখন নিজ নিজ ব্যবসা ধরে রাখতে নতুন অংশীদার খুঁজছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সরকার পরিবর্তনের পর দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় যে বড় পরিবর্তন এসেছে, তা শুধু রাজনীতি নয়—ছড়িয়ে পড়েছে দেশের অর্থনীতির ভেতরেও। এখন দেখার বিষয়, এই পাল্টে যাওয়া দৃশ্যপটে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের চেহারা কেমন দাঁড়ায়।