Dhaka 10:35 am, Sunday, 17 August 2025

সেনাবাহিনী দুর্বল হলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব টিকে থাকবে না

২৪ মার্চ, ২০২৫ ১০:৫৭

সেনাবাহিনী দুর্বল হলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব টিকে থাকবে না
সেনাপ্রধান ও সেনাবাহিনীবিরোধী আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেশে বিভাজন তৈরি করতে পারে এবং কৌশলগতভাবে রাষ্ট্রকেই দুর্বল করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সেনাবাহিনী দুর্বল হয়ে পড়লে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব টিকে থাকবে না। সেই সময়ে প্রতিবেশী দেশ হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়বে। এই পরিস্থিতিই চাচ্ছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসররা।

সেনাপ্রধান ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য ও বিষোদগার সম্পর্কে এমন কথা বলেন তারা। সামরিক বিশেষজ্ঞ রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (রাওয়া) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) আব্দুল হক গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য সময় এখন খুবই স্পর্শকাতর। ফ্যাসিস্ট হাসিনার রেখে যাওয়া প্রেতাত্মারা খুব সরব। দক্ষতার সঙ্গে তারা পরিস্থিতি পাল্টে ফেলতে চাচ্ছে।

বিভিন্নভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তারা কিন্তু গত ১৬ বছর বসে ছিল না। অর্থবিত্ত চুরি-ডাকাতি করেছে, দেশের সম্পদ পাচার করেছে। কিছু লোক বাইরে চলে গেছে; আর যারা দেশে আছে, তারা সম্মিলিতভাবে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে সেনাবাহিনীকে সাধারণ মানুষের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাচ্ছে।

জনগণকেও সরকারের মুখোমুখি করাতে চাচ্ছে। ত্রিমুখী একটি সংঘর্ষ লাগানোর অপচেষ্টায় তারা লিপ্ত। এই অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বন্ধুরা তাদের পরামর্শ দিচ্ছে, উৎসাহ দিচ্ছে এবং সর্বোপরি সাহায্য করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘সেনাবাহিনী হচ্ছে একটি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। সেনাবাহিনী দুর্বল হয়ে পড়লে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব টিকে থাকবে না।

সেই সময় আমাদের প্রতিবেশী দেশ হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়বে। এই পরিস্থিতিই চাচ্ছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসররা। শুধু ফ্যাসিস্ট না, ফ্যাসিস্টের চেয়ে যদি কঠিন শব্দ থাকে সে শব্দ হাসিনা ও তার দোসরদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। শুধু অর্থ লুটপাট না, এ দেশের মানুষের চরিত্রও ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে ওরা। এই চরিত্র ধ্বংস শুধু নিজেদের দলের মধ্যে না, প্রশাসনের চরিত্র ধ্বংস করেছে, পুলিশের চরিত্র ধ্বংস করেছে, রাষ্ট্রের যত স্টেক হোল্ডার রয়েছে, সবার চরিত্র ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। তারা জনগণের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। তারাই এখন চাচ্ছে দেশের পরিস্থিতি নানাভাবে অস্থিতিশীল করতে। এ জন্য দুর্বল লোকজন খুঁজে বের করছে। পরিস্থিতি বোঝার জন্য ম্যাচুরিটি লাগে। বুঝতে হবে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভিতে নাড়া দিতে হয় না। এতে নিজেদেরই ক্ষতি হয়। পরিকক্বতার অভাবে তাদের দলকে দুর্বল ভাববে মানুষ। দলটার প্রতি সাধারণ মানুষ আগ্রহ দেখিয়েছিল; কিন্তু সেনাবাহিনী প্রধান, সেনাবাহিনীর প্রতি রুখে দাঁড়ানোর হুমকি, দেশকে টালমাটাল করার চেষ্টা যারা করে, তাদের প্রতি তো মানুষ আস্থা রাখতে পারবে না। তারা ভুল করেছে। যেকোনো মূল্যে আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি সামরিক ও সামাজিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে বলব, এখনো যদি পরিস্থিতির অবনতি হয়, মানুষ আর্মির কাছে চলে যাবে। এখন যদি আর্মি উঠিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে দেশের পরিস্থিতি কী হতে পারে আপনারা কল্পনা করতে পারছেন? রাস্তায় হাঁটার মতো পরিস্থিতি থাকবে না। এই বিষয়টি অনেকে বোঝেন না। যদি গণ্ডগোল লাগে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসই বলবেন, আর্মি নামাও। তখন বাধ্য হয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে হবে। আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা এই পরিস্থিতিই সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। সামরিকবাহিনী সম্পর্কে ঘরোয়াভাবে যে কথা বলা যায়, প্রকাশ্যে তা বলা উচিত না। সেনাবাহিনী প্রধান একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তাঁর মর্যাদার সঙ্গে সেনাবাহিনীর মর্যাদাও জড়িত। কেউ যদি ঘরোয়া আলোচনায় কিছু বলে থাকেন, সেটা প্রকাশ করা ঠিক না। কেউ কি তাদের ঘরের কথা বাইরে প্রকাশ করেন? কোনো ব্যক্তির নিজস্ব মতামত থাকতেই পারে। সেই মতামত তো বাইরে প্রকাশ করা ঠিক হয়নি। উনি তো কাউকে ডেকে নিয়ে যাননি। যাঁরা এই অপরিপক্ব কাজটি করেছেন, তাঁরাই এখন বলছেন, আমাদের ভুল হয়ে গেছে।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. বায়েজিদ সরোয়ার বলেন, ‘ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময় জনগণের পক্ষে একাত্ম থাকে। ২০২৪-এর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বা জুলাই বিপ্লবের সময় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী বাঁকবদলকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আন্দোলনকারী জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। পরবর্তী সাত মাসে পুলিশসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুর্বল অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে আইন-শৃঙ্খলা, জননিরাপত্তা ও অন্তর্বর্তী সরকারের শক্তিশালী কার্যকর শক্তি হলো সেনাবাহিনী। এমন পরিস্থিতিতে সার্বভৌমত্বের প্রতীক সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে একটি পক্ষের আক্রমণাত্মক বক্তব্য ও বিষোদগার অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত ঘটনা। আমরা জটিল ও কঠিন সময় পার করছি। এই সময় জুলাই বিপ্লবের অসাধারণ সাহসী ও বীরত্বসুলভ ভূমিকা পালনকারী কিছু তরুণ নেতার (বর্তমানে এনসিপি নেতা) সেনাপ্রধান ও সেনাবাহিনীবিরোধী আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেশে বিভাজন তৈরি করতে পারে এবং কৌশলগতভাবে রাষ্ট্রকেই দুর্বল করতে পারে। এখন সব পক্ষের ধৈর্য ও বিচক্ষণতা কাম্য। এই ক্রান্তিলগ্নে প্রয়োজন ঐক্যের।’

মেজর জেনারেল ( অব.) মো. নাঈম আশফাকুর চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, “আমাদের প্রত্যেক নাগরিকের একটাই উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ইন্টিগ্রেশন। আমাদের অবজেক্টিভ হওয়া দরকার ঐক্য। ভিন্নমত থাকতেই পারে। একেকজনের একেক ধরনের মতামত হবে—এটাই বিউটি অব ডেমোক্রেসি। কিন্তু দেশের ইউনিটিকে ধ্বংস করা কারোরই উচিত না। বিশেষ করে যাঁরা কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের নেতৃত্বে আছেন। তিনি স্টুডেন্ড লিডার অথবা পলিটিক্যাল লিডার হলে তাঁর প্রতিটি বক্তব্যের প্রতিটি শব্দ জনগণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ জনগণ তাঁর প্রতিটি শব্দ তাঁর অনুপস্থিতে ইন্টারপ্রিটেশন করবে এবং নিজেদের মতো করে বুঝে নেবে। এই জন্য তিনি কী বাক্য, শব্দ ব্যবহার করবেন, তার প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, কী কী ভাবে হতে পারে এসব দিক বিবেচনা করে মন্তব্য করা উচিত। বিশেষ করে পোস্ট জুলাই রেভল্যুশনের পরের যে অবস্থা, আমরা একটি জটিল সময় পার করছি, রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ চলছে, সব সংস্কার তো আর এত দ্রুত করা যাবে না। রাষ্ট্রের যে প্রতিষ্ঠানগুলো খুবই দুর্বল অবস্থায় আছে সেগুলোর সংস্কার দরকার। নির্বাচনও এগিয়ে আসছে। এই সময় সেনাপ্রধান ও সেনাবাহিনী সম্পর্কে নেতিবাচক এবং ঐক্যবিনষ্টকারী বক্তব্য অপ্রত্যাশিত। কারো প্ররোচনায় এ ধরনের বক্তব্য এসেছে কি না সেটাও জানার বিষয়। আমার মতে, আমাদের ঐক্যের দিকেই এগিয়ে যাওয়া উচিত। অনৈক্যের দিকে নয়। ‘আমি’ ও ‘আপনি’ এই সব শব্দ বাদ রেখে এখন ‘আমরা’ বলতে হবে। ‘আমরা’ কখন, কিভাবে বলতে পারব তার ওপর কাজ করা উচিত। যা ঘটেছে তা অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত। সেনাবাহিনীকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য সাধারণ জনগণও মেনে নিচ্ছে না। আপনি একদিকে বলবেন সেনাবাহিনীই হচ্ছে জাতীয় ঐক্য ও দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য শেষ ভরসা, আবার এই সংস্থার দিকে আঙুল তুলছেন। এটা শুধু সেনাবাহিনীর দিকে আঙুল তোলা নয়, রাষ্ট্রের দিকেও আঙুল তুলছেন।”

 

ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

জনপ্রিয় সংবাদ

গভ. ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের এস এস সি-২০২৫ জিপিএ- ৫ প্রাপ্ত কৃতি ল্যাবরেটরিয়ানদের সংবর্ধনা প্রদান

সেনাবাহিনী দুর্বল হলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব টিকে থাকবে না

প্রকাশঃ 04:56:33 am, Monday, 24 March 2025

২৪ মার্চ, ২০২৫ ১০:৫৭

সেনাবাহিনী দুর্বল হলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব টিকে থাকবে না
সেনাপ্রধান ও সেনাবাহিনীবিরোধী আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেশে বিভাজন তৈরি করতে পারে এবং কৌশলগতভাবে রাষ্ট্রকেই দুর্বল করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সেনাবাহিনী দুর্বল হয়ে পড়লে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব টিকে থাকবে না। সেই সময়ে প্রতিবেশী দেশ হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়বে। এই পরিস্থিতিই চাচ্ছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসররা।

সেনাপ্রধান ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য ও বিষোদগার সম্পর্কে এমন কথা বলেন তারা। সামরিক বিশেষজ্ঞ রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (রাওয়া) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) আব্দুল হক গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য সময় এখন খুবই স্পর্শকাতর। ফ্যাসিস্ট হাসিনার রেখে যাওয়া প্রেতাত্মারা খুব সরব। দক্ষতার সঙ্গে তারা পরিস্থিতি পাল্টে ফেলতে চাচ্ছে।

বিভিন্নভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তারা কিন্তু গত ১৬ বছর বসে ছিল না। অর্থবিত্ত চুরি-ডাকাতি করেছে, দেশের সম্পদ পাচার করেছে। কিছু লোক বাইরে চলে গেছে; আর যারা দেশে আছে, তারা সম্মিলিতভাবে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে সেনাবাহিনীকে সাধারণ মানুষের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাচ্ছে।

জনগণকেও সরকারের মুখোমুখি করাতে চাচ্ছে। ত্রিমুখী একটি সংঘর্ষ লাগানোর অপচেষ্টায় তারা লিপ্ত। এই অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বন্ধুরা তাদের পরামর্শ দিচ্ছে, উৎসাহ দিচ্ছে এবং সর্বোপরি সাহায্য করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘সেনাবাহিনী হচ্ছে একটি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। সেনাবাহিনী দুর্বল হয়ে পড়লে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব টিকে থাকবে না।

সেই সময় আমাদের প্রতিবেশী দেশ হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়বে। এই পরিস্থিতিই চাচ্ছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসররা। শুধু ফ্যাসিস্ট না, ফ্যাসিস্টের চেয়ে যদি কঠিন শব্দ থাকে সে শব্দ হাসিনা ও তার দোসরদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। শুধু অর্থ লুটপাট না, এ দেশের মানুষের চরিত্রও ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে ওরা। এই চরিত্র ধ্বংস শুধু নিজেদের দলের মধ্যে না, প্রশাসনের চরিত্র ধ্বংস করেছে, পুলিশের চরিত্র ধ্বংস করেছে, রাষ্ট্রের যত স্টেক হোল্ডার রয়েছে, সবার চরিত্র ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। তারা জনগণের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। তারাই এখন চাচ্ছে দেশের পরিস্থিতি নানাভাবে অস্থিতিশীল করতে। এ জন্য দুর্বল লোকজন খুঁজে বের করছে। পরিস্থিতি বোঝার জন্য ম্যাচুরিটি লাগে। বুঝতে হবে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভিতে নাড়া দিতে হয় না। এতে নিজেদেরই ক্ষতি হয়। পরিকক্বতার অভাবে তাদের দলকে দুর্বল ভাববে মানুষ। দলটার প্রতি সাধারণ মানুষ আগ্রহ দেখিয়েছিল; কিন্তু সেনাবাহিনী প্রধান, সেনাবাহিনীর প্রতি রুখে দাঁড়ানোর হুমকি, দেশকে টালমাটাল করার চেষ্টা যারা করে, তাদের প্রতি তো মানুষ আস্থা রাখতে পারবে না। তারা ভুল করেছে। যেকোনো মূল্যে আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি সামরিক ও সামাজিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে বলব, এখনো যদি পরিস্থিতির অবনতি হয়, মানুষ আর্মির কাছে চলে যাবে। এখন যদি আর্মি উঠিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে দেশের পরিস্থিতি কী হতে পারে আপনারা কল্পনা করতে পারছেন? রাস্তায় হাঁটার মতো পরিস্থিতি থাকবে না। এই বিষয়টি অনেকে বোঝেন না। যদি গণ্ডগোল লাগে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসই বলবেন, আর্মি নামাও। তখন বাধ্য হয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে হবে। আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা এই পরিস্থিতিই সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। সামরিকবাহিনী সম্পর্কে ঘরোয়াভাবে যে কথা বলা যায়, প্রকাশ্যে তা বলা উচিত না। সেনাবাহিনী প্রধান একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তাঁর মর্যাদার সঙ্গে সেনাবাহিনীর মর্যাদাও জড়িত। কেউ যদি ঘরোয়া আলোচনায় কিছু বলে থাকেন, সেটা প্রকাশ করা ঠিক না। কেউ কি তাদের ঘরের কথা বাইরে প্রকাশ করেন? কোনো ব্যক্তির নিজস্ব মতামত থাকতেই পারে। সেই মতামত তো বাইরে প্রকাশ করা ঠিক হয়নি। উনি তো কাউকে ডেকে নিয়ে যাননি। যাঁরা এই অপরিপক্ব কাজটি করেছেন, তাঁরাই এখন বলছেন, আমাদের ভুল হয়ে গেছে।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. বায়েজিদ সরোয়ার বলেন, ‘ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময় জনগণের পক্ষে একাত্ম থাকে। ২০২৪-এর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বা জুলাই বিপ্লবের সময় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী বাঁকবদলকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আন্দোলনকারী জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। পরবর্তী সাত মাসে পুলিশসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুর্বল অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে আইন-শৃঙ্খলা, জননিরাপত্তা ও অন্তর্বর্তী সরকারের শক্তিশালী কার্যকর শক্তি হলো সেনাবাহিনী। এমন পরিস্থিতিতে সার্বভৌমত্বের প্রতীক সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে একটি পক্ষের আক্রমণাত্মক বক্তব্য ও বিষোদগার অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত ঘটনা। আমরা জটিল ও কঠিন সময় পার করছি। এই সময় জুলাই বিপ্লবের অসাধারণ সাহসী ও বীরত্বসুলভ ভূমিকা পালনকারী কিছু তরুণ নেতার (বর্তমানে এনসিপি নেতা) সেনাপ্রধান ও সেনাবাহিনীবিরোধী আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেশে বিভাজন তৈরি করতে পারে এবং কৌশলগতভাবে রাষ্ট্রকেই দুর্বল করতে পারে। এখন সব পক্ষের ধৈর্য ও বিচক্ষণতা কাম্য। এই ক্রান্তিলগ্নে প্রয়োজন ঐক্যের।’

মেজর জেনারেল ( অব.) মো. নাঈম আশফাকুর চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, “আমাদের প্রত্যেক নাগরিকের একটাই উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ইন্টিগ্রেশন। আমাদের অবজেক্টিভ হওয়া দরকার ঐক্য। ভিন্নমত থাকতেই পারে। একেকজনের একেক ধরনের মতামত হবে—এটাই বিউটি অব ডেমোক্রেসি। কিন্তু দেশের ইউনিটিকে ধ্বংস করা কারোরই উচিত না। বিশেষ করে যাঁরা কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের নেতৃত্বে আছেন। তিনি স্টুডেন্ড লিডার অথবা পলিটিক্যাল লিডার হলে তাঁর প্রতিটি বক্তব্যের প্রতিটি শব্দ জনগণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ জনগণ তাঁর প্রতিটি শব্দ তাঁর অনুপস্থিতে ইন্টারপ্রিটেশন করবে এবং নিজেদের মতো করে বুঝে নেবে। এই জন্য তিনি কী বাক্য, শব্দ ব্যবহার করবেন, তার প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, কী কী ভাবে হতে পারে এসব দিক বিবেচনা করে মন্তব্য করা উচিত। বিশেষ করে পোস্ট জুলাই রেভল্যুশনের পরের যে অবস্থা, আমরা একটি জটিল সময় পার করছি, রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ চলছে, সব সংস্কার তো আর এত দ্রুত করা যাবে না। রাষ্ট্রের যে প্রতিষ্ঠানগুলো খুবই দুর্বল অবস্থায় আছে সেগুলোর সংস্কার দরকার। নির্বাচনও এগিয়ে আসছে। এই সময় সেনাপ্রধান ও সেনাবাহিনী সম্পর্কে নেতিবাচক এবং ঐক্যবিনষ্টকারী বক্তব্য অপ্রত্যাশিত। কারো প্ররোচনায় এ ধরনের বক্তব্য এসেছে কি না সেটাও জানার বিষয়। আমার মতে, আমাদের ঐক্যের দিকেই এগিয়ে যাওয়া উচিত। অনৈক্যের দিকে নয়। ‘আমি’ ও ‘আপনি’ এই সব শব্দ বাদ রেখে এখন ‘আমরা’ বলতে হবে। ‘আমরা’ কখন, কিভাবে বলতে পারব তার ওপর কাজ করা উচিত। যা ঘটেছে তা অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত। সেনাবাহিনীকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য সাধারণ জনগণও মেনে নিচ্ছে না। আপনি একদিকে বলবেন সেনাবাহিনীই হচ্ছে জাতীয় ঐক্য ও দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য শেষ ভরসা, আবার এই সংস্থার দিকে আঙুল তুলছেন। এটা শুধু সেনাবাহিনীর দিকে আঙুল তোলা নয়, রাষ্ট্রের দিকেও আঙুল তুলছেন।”