দেশের তথ্য ডেস্ক।। ফের বাড়ছে মন্ত্রিসভার আকার— এমনই গুঞ্জন চলছে বিভিন্ন মহলে। দলীয়সহ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, রোজার আগে যে কোনো দিন দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা আসতে পারে। দুই/তিনজন পূর্ণ মন্ত্রীসহ শপথে অংশ নিতে পারেন সাত থেকে আটজন প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী। সেক্ষেত্রে নতুন শপথ নেওয়া সংরক্ষিত আসনের নারী সংসদ সদস্যদের থেকেও কয়েকজনকে দেখা যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গত ১১ জানুয়ারি শপথ নেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৩৭ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভা। বর্তমান মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী বাদে পূর্ণ মন্ত্রী রয়েছেন ২৫ জন এবং প্রতিমন্ত্রী ১১ জন। ৩৭ সদস্যের এ মন্ত্রিসভায় কোনো উপমন্ত্রী নেই। একাদশ সংসদের মন্ত্রিসভার আকার ছিল ৪৯ সদস্যের।
দলীয় সূত্র মতে, আগামী ১২ মার্চ থেকে পবিত্র মাহে রমজান শুরু হবে। এর আগে মন্ত্রিসভার আকার বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে আগামী ৩-৪ মার্চের মধ্যে শপথ অনুষ্ঠিত হতে পারে মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের। কবে শপথ হবে— তা নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে আলোচনা হলেও সব সিদ্ধান্ত হাইকমান্ডের ওপর নির্ভর করছে। ঢাকা পোস্টকে এমন তথ্য জানান দলের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা।
মন্ত্রিসভার পরিধি বাড়ছে কি না— জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটা প্রধানমন্ত্রী বলতে পারেন। তবে, কিছু জায়গায় যেমন- শ্রম মন্ত্রণালয় ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে (যেখানে এখনও মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী দেওয়া হয়নি) কোনো না কোনো সময় মন্ত্রী আসবে। এটা আমার মনে হয় সংরক্ষিত মহিলা আসনগুলো চূড়ান্ত হওয়ার পর মন্ত্রিসভার আকার বৃদ্ধির প্রসঙ্গ আসতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ারে তিনি এটা করবেন।’
গতকাল বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সংসদ ভবনের শপথ কক্ষে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এরপর থেকে মন্ত্রিসভার আকার বাড়ানোর বিষয়টি নেতাকর্মীদের মুখে মুখে আলোচিত হতে থাকে।
এর আগের মন্ত্রিসভায় (একাদশ সংসদ) পূর্ণমন্ত্রী এবারের মতোই ২৫-২৬ জনে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে, প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ২০ জনের মতো। এ ছাড়া, তিনজন উপমন্ত্রী ছিলেন। সবমিলিয়ে আগের মন্ত্রিসভা ছিল ৪৯ সদস্যের।
বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বিকেলে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। এ সময় তার কাছে প্রশ্ন রাখা হয় যে, ‘সংরক্ষিত আসনের এমপিদের শপথ হলো আজ। এরপরই মন্ত্রিসভার আকার বাড়তে পারে— এমনটি বলা হচ্ছে। এমন কোনো নির্দেশনা আছে কি না? উত্তরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমি এখনও শুনিনি। সেরকম কিছু হলে অবশ্যই আপনারা জানবেন। নির্ধারিত সময়েই জানবেন।’
সরকার ও আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, বিগত মন্ত্রিসভার সমান বা এর কাছাকাছি সংখ্যায় নিয়ে যাওয়া হবে বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা। কারণ, এখনও দুটি মন্ত্রণালয়ে কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে দুজন নারী সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা আলোচনায় আছে।
নতুন মন্ত্রিসভার এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মার্চের প্রথম সপ্তাহে মন্ত্রিসভার আকার বাড়তে পারে। কবে তা বাড়তে পারে, তা একমাত্র দলের হাইকমান্ডই জানেন। আমরা তেমন কিছু জানি না। তবে, মন্ত্রিসভার আকার বাড়ানোর ব্যাপারে দলের ভেতরেও আলোচনা হচ্ছে। নয় থেকে ১১ জন নতুন সদস্য যুক্ত হতে পারেন। সেখানে পুরাতন বেশ কয়েকজন থাকতে পারেন। তবে, নেত্রী নারীনেতৃত্বের ওপর এবার জোর দিতে পারেন। সেক্ষেতে তিন-চারজন নারীও স্থান পেতে পারেন। কিন্তু তা নির্দিষ্ট করে এখনই বলা যাচ্ছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, সংরক্ষিত নারী আসনে কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেত্রীকে এমপি বানানো হয়েছে। তাদের মধ্য থেকেও কমপক্ষে দুজনকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হতে পারে। সেই তালিকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্য এবং কার্যনির্বাহী কমিটির একজন সদস্য রয়েছেন। তাদের নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। দলের সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীর তিন-চারজন নেতা এবার মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি। তবে, তারা এখনও আশা ছাড়েননি। এসব নেতা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, আগামী মাসের (মার্চ) প্রথম দিকেই বাড়তে পারে মন্ত্রিসভার আকার। এবারের মন্ত্রিসভায় বেশিরভাগ নতুন মুখ স্থান পেয়েছেন। মন্ত্রিসভার কলেবর বাড়লে নতুন করে স্থান পেতে পারেন আওয়ামী লীগের ত্যাগী, অভিজ্ঞ ও তৃণমূলের জনপ্রিয় সংসদ সদস্যরা। সরকারের কাজের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় মন্ত্রিসভার আকার বড় করার চিন্তাভাবনা চলছে। এক্ষেত্রে তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে।
এবারের সংসদে বেশ কয়েকজন তরুণ সদস্য রয়েছেন, তাদের বিষয়েও আলোচনা হচ্ছে। তবে, যেসব বিভাগে বিগত সময়ে মন্ত্রিসভার সদস্য ছিল না, সেসব এলাকার ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হতে পারে।
এবার নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন আগের মন্ত্রিসভার ১৪ মন্ত্রী, নয়জন প্রতিমন্ত্রী ও দুজন উপমন্ত্রী। আলোচিত মন্ত্রীদের মধ্যে বাদ পড়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ।
প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে বাদ পড়েছেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, স্থানীয় সরকার, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেছা।
এছাড়া গতবারের তিন উপমন্ত্রীর মধ্যে দুজনই এবার বাদ পড়েছেন। তারা হলেন- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার এবং পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম। টেকনোক্র্যাট পদ থেকে পদত্যাগ করা ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলমও এবারের মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি।