Dhaka 2:50 am, Tuesday, 8 July 2025

খুলনায় মেলার জন্য চাঁদা দাবির অডিও ফাঁস

খুলনায় একটি মেলাকে কেন্দ্র করে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও মহানগরের ছাত্র প্রতিনিধি পরিচয়ধারী জহুরুল ইসলাম তানভীর এবং সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ। রবিবার (৬ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই অভিযোগসংবলিত একটি অডিও রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ে।

 

মেলার আয়োজক মন্টুর কাছে চাঁদা দাবি করে ১ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের একটি কল রেকর্ড রাতেই ফাঁস হয়।

 

জানা যায়, জহুরুল ইসলাম তানভীর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের অনার্সের শিক্ষার্থী এবং সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদ গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তাঁরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, খুলনা মহানগরী’ সংগঠনের যথাক্রমে সদস্য সচিব ও মুখ্য সংগঠক।

 

গত বছরের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে তাঁদের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগরের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচিতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নানা কর্মসূচিতেও তারা সক্রিয় অংশ নিয়েছেন।

 

ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডে সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদকে মেলার আয়োজকের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করতে শোনা যায়।

 

কল রেকর্ডে আয়োজক মন্টুকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার দ্বারা সবাইকে কি ঠাণ্ডা করা সম্ভব? আমার কাছে দুই টাকা রেডি আছে, আপনি বললে এখনই দিয়ে যাব।’ জবাবে আজাদ বলেন, ‘আমি পারব সবাইকে ঠাণ্ডা করতে A to Z, সবাই ঠাণ্ডা থাকবে, কেউ ওইদিকে ঘুরেও তাকাবে না—যদি ১০ টাকা দেন (১০ লাখ)। আর যদি না দেন, তাহলে আজ এ গ্রুপ যাবে, কাল অন্য গ্রুপ যাবে আপনি কয়জনকে ঠাণ্ডা করবেন?’

 

এ সময় মন্টু বলেন, ‘আমার দ্বারা তো সবাইকে ঠাণ্ডা করা সম্ভব না।

 

’ জবাবে আজাদ বলেন, ‘আপনার পুলিশ কমিশনারও ঠাণ্ডা করতে পারবে না, বলে দিয়েন তারে।’

পরে মন্টু বলেন, ‘আপনাদের ছোট ভাইয়েরা এসে তানভীর ভাইয়ের কথা বলছে।’ জবাবে আজাদ বলেন, ‘মেলা ভাঙতে তো আমরা কাউকে পাঠাইনি তাহলে ওদেরই দিয়ে দেন।’

 

মন্টু বলেন, ‘দুই টাকা দিবার চাচ্ছি, আজকেই আসতেছি ভাই। আর প্রতি গ্রুপে তো দিতে পারব না ভাই।

 

আপনারা বড় ভাই হয়ে যদি কন্ট্রোল করতে না পারেন ‘

এ প্রসঙ্গে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইশরিয়াক কবির বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়কে অরাজনৈতিক ঘোষণার পরও কিছু তথাকথিত ‘সমন্বয়ক’ নিজেদের পরিচয় ব্যবহার করে চাঁদাবাজি ও নানা অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে।”

 

৫ আগস্টের পর দেখা যায়, তাদের জীবনযাত্রায় হঠাৎ পরিবর্তন এসেছে তাঁরা দামি বাইকে চলাফেরা করছেন। ছাত্রলীগের প্রচারক আজাদ এখন নিজেকে ‘জুলাই আন্দোলনের কান্ডারি’ দাবি করলেও তাঁর ভূমিকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অপরাধীদের বাঁচাতে তাঁর সক্রিয়তা প্রশ্নবিদ্ধ। এদের প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছে ‘জুলাই চেতনা’। ভাইরাল হওয়া অডিওতে তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। তারা শুরু থেকেই ‘জুলাই চেতনা’ বিক্রি করে পুরো জাতির সঙ্গে গাদ্দারি করে আসছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।’

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্টু বলেন, ‘ফাঁস হওয়া রেকর্ডিং আমার এবং সাজ্জাদের কল রেকর্ডিং। রেকর্ডিংয়ে যা শুনেছেন, সব সত্য। আমি এটা নিশ্চিত করছি।’ এরপর তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে কল কেটে দেন।

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, খুলনা মহানগরের আহ্বায়ক আল শাহরিয়ার বলেন, ‘আমি ভিডিওটি দেখেছি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্র। ঢাকায় বসেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মো. ইনামুল হাসান বলেন, ‘নবপর্যায়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি আর্থিক স্বচ্ছতা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে কোনো অপকর্ম আর সহ্য করা হবে না। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমরা সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেব এবং প্রশাসনকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাব। গণ-অভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্মের পবিত্রতা রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব।’

 

এ বিষয়ে জানতে চাওয়ার জন্য সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদ ও জহুরুল ইসলাম তানভীরকে একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাজমুস সাদাত বলেন, ‘আমি এখন ফরেস্টিতে আছি, সারাদিন নেটওয়ার্কের বাইরে ছিলাম। বিষয়টি এখনো দেখিনি। নয় তারিখে বা আট তারিখে যোগাযোগ করলে বিস্তারিত বলতে পারব।’

ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

জনপ্রিয় সংবাদ

খুলনায় মেলার জন্য চাঁদা দাবির অডিও ফাঁস

খুলনায় মেলার জন্য চাঁদা দাবির অডিও ফাঁস

প্রকাশঃ 10:21:56 am, Monday, 7 July 2025

খুলনায় একটি মেলাকে কেন্দ্র করে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও মহানগরের ছাত্র প্রতিনিধি পরিচয়ধারী জহুরুল ইসলাম তানভীর এবং সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ। রবিবার (৬ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই অভিযোগসংবলিত একটি অডিও রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ে।

 

মেলার আয়োজক মন্টুর কাছে চাঁদা দাবি করে ১ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের একটি কল রেকর্ড রাতেই ফাঁস হয়।

 

জানা যায়, জহুরুল ইসলাম তানভীর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের অনার্সের শিক্ষার্থী এবং সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদ গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তাঁরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, খুলনা মহানগরী’ সংগঠনের যথাক্রমে সদস্য সচিব ও মুখ্য সংগঠক।

 

গত বছরের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে তাঁদের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগরের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচিতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নানা কর্মসূচিতেও তারা সক্রিয় অংশ নিয়েছেন।

 

ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডে সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদকে মেলার আয়োজকের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করতে শোনা যায়।

 

কল রেকর্ডে আয়োজক মন্টুকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার দ্বারা সবাইকে কি ঠাণ্ডা করা সম্ভব? আমার কাছে দুই টাকা রেডি আছে, আপনি বললে এখনই দিয়ে যাব।’ জবাবে আজাদ বলেন, ‘আমি পারব সবাইকে ঠাণ্ডা করতে A to Z, সবাই ঠাণ্ডা থাকবে, কেউ ওইদিকে ঘুরেও তাকাবে না—যদি ১০ টাকা দেন (১০ লাখ)। আর যদি না দেন, তাহলে আজ এ গ্রুপ যাবে, কাল অন্য গ্রুপ যাবে আপনি কয়জনকে ঠাণ্ডা করবেন?’

 

এ সময় মন্টু বলেন, ‘আমার দ্বারা তো সবাইকে ঠাণ্ডা করা সম্ভব না।

 

’ জবাবে আজাদ বলেন, ‘আপনার পুলিশ কমিশনারও ঠাণ্ডা করতে পারবে না, বলে দিয়েন তারে।’

পরে মন্টু বলেন, ‘আপনাদের ছোট ভাইয়েরা এসে তানভীর ভাইয়ের কথা বলছে।’ জবাবে আজাদ বলেন, ‘মেলা ভাঙতে তো আমরা কাউকে পাঠাইনি তাহলে ওদেরই দিয়ে দেন।’

 

মন্টু বলেন, ‘দুই টাকা দিবার চাচ্ছি, আজকেই আসতেছি ভাই। আর প্রতি গ্রুপে তো দিতে পারব না ভাই।

 

আপনারা বড় ভাই হয়ে যদি কন্ট্রোল করতে না পারেন ‘

এ প্রসঙ্গে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইশরিয়াক কবির বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়কে অরাজনৈতিক ঘোষণার পরও কিছু তথাকথিত ‘সমন্বয়ক’ নিজেদের পরিচয় ব্যবহার করে চাঁদাবাজি ও নানা অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে।”

 

৫ আগস্টের পর দেখা যায়, তাদের জীবনযাত্রায় হঠাৎ পরিবর্তন এসেছে তাঁরা দামি বাইকে চলাফেরা করছেন। ছাত্রলীগের প্রচারক আজাদ এখন নিজেকে ‘জুলাই আন্দোলনের কান্ডারি’ দাবি করলেও তাঁর ভূমিকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অপরাধীদের বাঁচাতে তাঁর সক্রিয়তা প্রশ্নবিদ্ধ। এদের প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছে ‘জুলাই চেতনা’। ভাইরাল হওয়া অডিওতে তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। তারা শুরু থেকেই ‘জুলাই চেতনা’ বিক্রি করে পুরো জাতির সঙ্গে গাদ্দারি করে আসছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।’

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্টু বলেন, ‘ফাঁস হওয়া রেকর্ডিং আমার এবং সাজ্জাদের কল রেকর্ডিং। রেকর্ডিংয়ে যা শুনেছেন, সব সত্য। আমি এটা নিশ্চিত করছি।’ এরপর তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে কল কেটে দেন।

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, খুলনা মহানগরের আহ্বায়ক আল শাহরিয়ার বলেন, ‘আমি ভিডিওটি দেখেছি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্র। ঢাকায় বসেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মো. ইনামুল হাসান বলেন, ‘নবপর্যায়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি আর্থিক স্বচ্ছতা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে কোনো অপকর্ম আর সহ্য করা হবে না। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমরা সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেব এবং প্রশাসনকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাব। গণ-অভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্মের পবিত্রতা রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব।’

 

এ বিষয়ে জানতে চাওয়ার জন্য সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদ ও জহুরুল ইসলাম তানভীরকে একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাজমুস সাদাত বলেন, ‘আমি এখন ফরেস্টিতে আছি, সারাদিন নেটওয়ার্কের বাইরে ছিলাম। বিষয়টি এখনো দেখিনি। নয় তারিখে বা আট তারিখে যোগাযোগ করলে বিস্তারিত বলতে পারব।’