মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত কর্মসূচিতে কেএমপি কমিশনার

-3.jpg
দেশের তথ্য ডেস্ক।। ২১ ফেব্রুয়ারি বুধবার সন্ধ্যা ০৬:৩০ ঘটিকায় খুলনা মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র শহিদ হাদিস পার্কে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৪ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার জনাব মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম-সেবা মহোদয় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার মহোদয় উপস্থিত সকলকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বক্তব্যে বলেন, “ভাষা আন্দোলনের অত্যন্ত পরিচিত সৈনিক বাংলাদেশের স্বাধীনতার এবং সার্বভৌমত্বের সঙ্গে যিনি ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ইতিহাসের মহানায়ক স্বাধীনতার স্থাপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালে ১৫ই আগস্ট ঘাতকের বুলেটে শহীদ জাতির পিতাসহ তাঁর পরিবারবর্গ এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩০ লক্ষ নর-নারী ০২ লক্ষ মা-বোন এবং ১৯৫২ সালে মহান ভাষা আন্দোলনে যারা ভাষার অধিকার রক্ষায় জীবন দিয়েছিলেন। সে সকল ভাষা শহীদদের আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে শুরু করছি।
আপনারা জানেন যে, এই ভূখণ্ড হাজার বছর ধরে আর্য, মুঘল, পাঠান, ইংরেজ, পর্তুগিজ এমনকি পাকিস্তানি শাসক শোষকেরা বারবার শোষণ করেছে। কিন্তু কখনোই এই দেশটি স্বাধীন হতে পারেনি। সর্বশেষে ১৯৪৭ সালে বাংলা এবং বাংলার মানুষকে দাবিয়ে রাখার জন্য একটি জাতির ঐতিহ্য ও ভাষা সাহিত্য-সংস্কৃতির ওপর আঘাত করা হয়। যেখানে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান মিলে ৫৬ শতাংশ মানুষ কথা বলতো বাংলায় এবং ১০ শতাংশেরও নিচে কথা বলতো উর্দুতে। সেখানে বাংলাকে যে মর্যাদা দেওয়া উচিত কিন্তু সেই মর্যাদা দিতে তারা কুন্ঠাবোধ করত। তাদের মুদ্রা, ডাক টিকিট সহ জাতীয় সংসদে তাদের যে ভাষা সেটি ইংরেজির পাশাপাশি ছিল উর্দু। অর্থাৎ ওই একই রকম চেতনা যে একটি জাতিকে সকল দিক থেকে বঞ্চিত। আমাদের ৯৮% মানুষের ভাষা ছিল বাংলা সেই ভাষাকে যদি অবদমিত করে রাখা যায় তাহলে তারা স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের কথা ওঠাবে না। আমরা জানি যে ১৯৪৭ সালে তথাকথিত পাকিস্তানি দেশটি সৃষ্টির পর পরই শহীদ ইন্দ্রনাথ যাকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রথমেই হত্যা করা হয়েছিল।
তিনি প্রথম গণপরিষদে প্রস্তাব করেছিলেন উর্দু এবং ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাকে মর্যাদা দেওয়া হোক। তিনিও বাংলাদেশে এসে ১৯৪৮ সালে মার্চ মাসে রেসকোর্স ময়দানের বক্তব্যে উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষার কথা বলেছিলেন. সে সময় তরুণ একজন নেতা যিনি আজন্ম ছাত্র জীবন থেকে অসাম্প্রদায়িক চেতনাধারণ করেছেন। দু:খী মানুষকে মুক্তির স্বপ্ন দেখতেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ কতিপয় তরুণ ছাত্র নেতা যাদের নেতৃত্বে বাংলা ভাষার সংগ্রাম পরিষদ গড়ে উঠেছিল। একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের দাবিতে পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউল ও আউয়াল সহ নাম না জানা আরও অনেকেই যারা শহীদ হলেন তাদের রক্ত বৃথা যায়নি। এই আত্মদানের পরেই কিন্তু বাঙালি জাতি স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে গ্রহণ করেছে। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে এই দেশটির প্রসব বেদনার সাথে জড়িত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বর্তমানে জাতির জনকের কন্যা দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নেতৃত্বে দেশটি সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের শিখরে আছে। আমাদেরকে সকল অশুভ শক্তির মোকাবেলা করে জঙ্গিবাদ রুখে দিয়ে, সন্ত্রাস, নাশকতামুক্ত ইভটিজিংমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠন করতে হবে।” অত:পর তিনি সকল শহীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।
উক্ত আলোচনা সভায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং খুলনার জেলা প্রশাসক জনাব খন্দকার ইয়াসিন আরেফীন সভাপতিত্ব করেন।
এ সময় খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সরোজ কুমার নাথ; খুলনা জেলার পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান, পিপিএম-সেবা; খুলনা মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার অধ্যাপক মোঃ আলমগীর কবির এবং খুলনা জেলা মুক্তিযুদ্ধ সংসদের সাবেক কমান্ডার জনাব সরদার মাহাবুবার রহমান-সহ গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

Share this post

PinIt
scroll to top