হিমাগারের আলু বিক্রি করছেন না মজুদদাররা

himagar.webp

দেশের তথ্য ডেস্ক:- জয়পুরহাটের হিমাগারগুলোতে বিপুল পরিমাণ আলু মজুদ থাকলেও বিক্রি করছেন না ব্যবসায়ীরা। ফলে আলুর দাম বেড়েই চলছে। এক মাস আগেও জয়পুরহাটের বিভিন্ন বাজারে অ্যাস্টেরিক, কার্ডিনাল ও ডায়মন্ড জাতের প্রতি কেজি আলুর খুচরা মূল্য ছিল ৩০ টাকা। সেই আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি।

আবার দেশি পাকড়ি (লাল গুটি) আলু ৪০ টাকার স্থলে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি। বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আলুর বড় ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু বিক্রি না করায় বাজারে চাহিদামতো আলু মিলছে না। ফলে এক মাসের ব্যবধানে জয়পুরহাটের বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি আলুর দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাটে এবার রেকর্ড পরিমাণ আলু উৎপাদন হয়েছে।

জেলায় এ বছর ৩৮ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন হয়েছে ৯ লাখ ২৪ হাজার ৭৬০ টন। মৌসুম শেষে জেলার ১৯টি হিমাগারে ব্যবসায়ী ও কৃষকরা এবার আলু সংরক্ষণ করেছেন এক লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। ১৪ জুলাই পর্যন্ত যার মজুদের পরিমাণ এক লাখ ২২ হাজার ৫৭০ মেট্রিক টন। জেলায় আলুর চাহিদা ৫৫ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন।

এ জেলায় উৎপাদিত উদ্বৃত্ত আলু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এমনকি বিদেশেও বিক্রি করা হয়। এলাকার বেশির ভাগ প্রান্তিক কৃষক আলু উৎপাদনের পর তা বিক্রি করেন। আর ব্যবসায়ীরা তা কিনে হিমাগারে মজুদ করেন। বর্তমানে কৃষকের ঘরে কোনো আলুর মজুদ নেই। তাই হিমাগার থেকে সীমিতভাবে সরবরাহ হওয়া আলু এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।

কিন্তু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় আলুর দাম বেড়েই চলছে। গত মে ও জুন মাসে প্রকার ভেদে খুচরা আলুর কেজি ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। কিন্তু বর্তমানে সেই আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার বেশির ভাগ হিমাগারে আলু কেনাবেচা বন্ধ রয়েছে। দু-একজন প্রান্তিক কৃষক তাঁদের সংরক্ষণে থাকা সামান্য পরিমাণ আলু খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। আলুর বাজার আরো বাড়তে পারে এই আশায় হিমাগারে মজুদ করা আলু বিক্রি করছেন না বড় ব্যবসায়ীরা।

এবার হিমাগার ভাড়াসহ ৬০ কেজির প্রতি বস্তা অ্যাস্টেরিক, ডায়মন্ড ও কার্ডিনাল আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করতে খরচ হয়েছে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। বর্তমানে হিমাগারে সেই আলু বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৭৫০ টাকায়। আর দেশি পাকড়ি জাতের আলু সংরক্ষণে হিমাগার ভাড়াসহ খরচ হয়েছে দেড় হাজার টাকা। সেই আলু প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৩০০ টাকায়। অর্থাৎ সংরক্ষণের মাত্র চার মাসের ব্যবধানে প্রতি বস্তা আলুতে ব্যবসায়ীদের লাভ টিকছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা।

বানিয়াপাড়া গ্রামের আলু ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, ‘তিন-চার দিনেও এক ট্রাক আলু ঢাকায় পাঠাতে পারছি না। চাহিদা থাকলেও আলু পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারের ঊর্ধ্বগতি দেখে হিমাগারে মজুদ করা আলু ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন না।’

মোলামগাড়ি বাজারের আলুর বড় ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, ‘হিমাগারে আলু মজুদ করে বিগত তিন বছর লোকসান হয়েছে। তখন আমাদের কেউ খোঁজও নিতে আসেনি। এবার আলুর দাম একটু বেশি হতেই সবাই চিৎকার শুরু করেছে। অথচ বাজারে অন্যান্য সবজির দাম কত বেশি। সে নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই।’

কালাই উপজেলার মোলামগাড়ি নর্থপোল কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘জেলার বেশির ভাগ হিমাগারেই কৃষকের চেয়ে ব্যবসায়ীরা আলু মজুদ বেশি করেন। এবারেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। বিগত তিন বছর আলুতে লোকসান হয়েছে। এবার বাজার ভালো হওয়ায় ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার প্রত্যাশা করছেন। তাই এ মুহূর্তে ব্যবসায়ীরা কেউ আলু বিক্রি করছেন না।’

জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রতন কুমার রায় বলেন, ‘জেলার ১৯টি হিমাগারে এক লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণের পর গত কয়েক মাসে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন বিক্রি হয়েছে। এখনো আলুর বিশাল মজুদ আছে। আমরা বাজার মনিটর করছি। ব্যবসায়ীরা যদি সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করেন তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাহেলা পারভিন বলেন, ‘জেলায় এবার প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। এ জেলায় আলুর মোট চাহিদা ৫৫ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে জেলার ১৯টি হিমাগারে আলু মজুদের পরিমাণ এক লাখ ২৫ হাজার ৮৮০ মেট্রিক টন। আলুর কোনো ঘাটতি নেই।

Share this post

PinIt
scroll to top