খুলনা হতে ১ জন আন্তর্জাতিক মানব ও স্বর্ন পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৬
দেশের তথ্য ডেস্ক: দীর্ঘদিন ধরেই একটি মানব পাচারকারী চক্র ইউরোপীয় দেশে অবৈধ পথে পাচার করে আসছে। গত ২৭/১২/২০২৩ তারিখ লিবিয়া প্রবাসী মোরশেদ আলম (৪২), পিতা-জাফর উল্যাহ,থানা-সোনাগাজী, জেলা-ফেনী তার স্ত্রী জাহানারা বেগমকে আলী নামীয় ইমো এ্যাকাউন্ট হতে ফোন করে জানায় যে, তাকে লিবিয়াতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা অপহরণ করে লিবিয়ার অজ্ঞাত একটি স্থানে অন্ধকার রুমে আটকে রাখে এবং মুক্তিপন বাবদ ২০ (বিশ) লক্ষ টাকা দাবি করে। টাকা না পাঠালে তার স্বামীকে হত্যা করবে বলে হুমকি প্রদান করে। এছাড়াও মোরশেদ আলম জানায় উক্ত অন্ধকার কক্ষে আরও আনুমানিক ৫০/৬০ জন বাংলাদেশী ব্যক্তি আটক রয়েছে। উক্ত ইমো এ্রাকাউন্ট হতে জাহানারা বেগমকে ম্যাসেজ এর মাধ্যমে একটি এ্যাকাউন্ট নম্বর পাঠায়। জাহানারা বেগম স্বামীর প্রান রক্ষার্থে উক্ত এ্যাকাউন্টে ৩ দফায় সর্বমোট ১,৫০,০০০/- টাকা প্রদান করেন। গত ০৮/০১/২০২৪ তারিখ একই ইমো এ্যাকাউন্ট হতে লিবিয়া প্রাবসী মোরশেদ আলম তার স্ত্রী কে জানায় অবশিষ্ট টাকা না দেওয়ার কারনে মুক্তি না দিয়ে প্রচন্ডভাবে মারধর করে এবং দ্রুত বাকি টাকা পাঠানোর জন্য বলে। পরবর্তীতে জাহানারা বেগম বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানা, ফেনীতে একটি অজ্ঞাতনামা মামলা দায়ের করেন। এসকল মানব পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনার জন্য র্যাব-৬ দীর্ঘদিন ধরেই গোয়েন্দা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৮ জানুয়ারি র্যাব-৬ (স্পেশাল কোম্পানী) এর একটি চৌকস আভিযানিক দল ও রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে জানতে পারে যে, উপরোক্ত এ্যাকাউন্ট পরিচালিত ব্যাক্তি খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা থানাধীন গল্লামারী এলাকায় অবস্থান করছে। প্রাপ্ত সংবাদের সত্যতা যাচাই ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে র্যাব-৬ ও ডিজিএফআই এর যৌথ আভিযানিক দল একই তারিখ ২২.২০ ঘটিকার সময় খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা থানাধীন গল্লামারী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মানব ও স্বর্ন পাচারকারী আসামী ১। মোঃ নজিবর রহমান (৪০), পিতা-মৃত আব্দুল রাজ্জাক, থানা ও জেলা-বাগেরহাট, এ/পি-থানা বটিয়াঘাট, জেলা-খুলনাকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় আসামী মোঃ নজিবর রহমান ২০০৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত খুলনার নিউমার্কেটে মোবাইল সার্ভিসিং এর দোকান পরিচালনা করত। করোনা চলাকালীন সময়ে (২০২০-২০২১) সিঙ্গাপুর প্রবাসী বাল্যবন্ধু মো: আনিসের পরামর্শে আসামী দুবাই যাওয়ার পরামর্শ দেয়। দুবাই প্রবাসী মোল্লা এন্টারপ্রাইজ এর মালিক মো: তাওহিদুল ইসলাম এর সাথে আসামীর বন্ধু আনিসের মাধ্যমে তার যোগাযোগ স্থাপন হয় এবং ২০২২ সালে আসামী টুরিস্ট ভিসায় দুবাই গমন করে। তাওহিদের সহযোগিতায় ২০২৫ সাল পর্যন্ত তিন বছরের জন্য ব্যক্তি রেসিডেন্স পারমিট পায়। তাওহিদ দুবাইয়ে স্বর্ণ, দিরহাম ও হুন্ডি ব্যবসা করে। তাওহিদ প্রতিদিন দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশের যাত্রীদের কাছে ২-৩টি করে গোল্ডবার ও স্বর্ণের অলংকার বাংলাদেশের প্রেরণ করতো। আসামী নিজেও বেশ কয়েকবার দুবাই থেকে গোল্ডবার এবং অলংকার বহন করে নিয়ে এসেছে। পরবর্তীতে তাওহিদ আসামীকে বাংলাদেশে খুলনা এলাকায় হুন্ডির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তার সমস্ত ব্যাংক একাউন্ট এর দায়িত্ব প্রদান করে। আসামী নিজে মোল্লা এন্টারপ্রাইজ, আর এইচ মোবাইল, রিজিয়া এন্টারপ্রাইজ, পারভেজ এন্টারপ্রাইজ ইত্যাদি নামের ২১ টি ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনা করে। এই ব্যাংক একাউন্ট গুলিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিনিয়ত টাকা আসে। আসামীর নিকট হতে মোবাইল ফোন-৩১টি, ট্যাপ-০৩টি, ল্যাপটপ-০৩টি, ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার-০১টি, বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড-০৯টি, মেমরিকার্ড-০৮টি, সিমকার্ড-০টি, সাংবাদিক আইডি কার্ড-০২টি, এনআইডি কার্ড-০২টি, ড্রাইভিং লাইসেন্স-০১টি, পেনড্রাইভ-০২টি, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই-২৩টি, পাসপোর্ট-০১টি, নগদ-৪,৪৭০/- টাকা উদ্ধার করা হয়।গ্রেফতারকৃত আসামীকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্যে ফেনী জেলার সোনাগাজী মডেল থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন।