দেশের তথ্য ডেস্ক:-
নিরুত্তাপ নির্বাচনে হঠাৎ উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও প্রয়াত সংসদ সদস্য এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার ছোট ভাই এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা উচ্চ আদালত থেকে প্রর্থীতা ফিরে পাওয়ায়। এরপর থেকে দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী, সমর্থকরা। বাড়তে থাকে উত্তেজনা। কর্মী, সমর্থকদের হুমকি প্রদানের পাশাপাশি স্বয়ং প্রার্থীর বিরুদ্ধেও হুমকি প্রদানের অভিযোগ উঠে। প্রতিপক্ষ প্রার্থীর বিরুদ্ধে হচ্ছে সংবাদিক সম্মেলন। হচ্ছে পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন।
এছাড়াও প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগও উত্থাপিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে নৌকা এবং কেটলি’র কর্মী সমার্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ার পাশাপাশি জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণা। সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ন একটি নির্বাচনের।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুস সালাম মূর্শিদীর সমর্থক ও বারাকপুর ইউপি চেয়ারম্যান গাজী সহাগীর হোসেন পাভেল বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) রিটার্নিং কর্মকর্তা ও খুলনা জেলা প্রশাসক বরাবর স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম মোর্তজা রশিদী দারার বিরুদ্ধে নৌকার পক্ষে কাজ করায় তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং হত্যার হুমকি প্রদান করা হয়েছে বলে লিখিত অভিযোগ করেন।
লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আব্দুস সালাম মূর্শেদীর নৌকা প্রতীকের পক্ষে জোড় প্রচারণা চালাচ্ছি। ২৬ ডিসেম্বর বিকাল ৩ ঘটিকার সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা বারাকপুর ইউনিয়নে গণসংযোগকালে আমার নাম উল্লেখ করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং আমাকে হত্যার হুমকি প্রদান করে। আমি যাহাতে নৌকার পক্ষে কাজ না করি তার জন্য হুমকি প্রদান করেন। ইহাতে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগিতেছি।
২৫ ডিসেম্বর স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা খুলনা খানজাহানআলী রোডের তার নিজস্ব অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রতিপক্ষ নৌকার প্রার্থী, সমর্থক, সংখ্যালঘু, সাধারণ ভোটারদের বিরুদ্ধে হুমকি-প্রদর্শনের অভিযোগ উত্থাপন করেন। লিখিত অভিযোগে তিনি দিঘলিয়াতে তার কর্মী রওশন আরাকে প্রাণনাশের হুমকি, রূপসা উপজেলার মিল্কি দেয়াড়ায় কাচারীঘাটের রুটি বিক্রেতা বয়োবৃদ্ধ ফারুককে গায়ে হাত এবং হত্যার হুমকি, সোহেল রানাকে হাত-পা গুঁড়ো করে দেওয়ার হুমকি প্রদান এবং আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী খুলনা মহানগর যুবলীগের সভাপতির বাড়ির সামনে বোমা ফাটিয়ে উল্লাস করার অভিযোগ উত্থাপন করেন নৌকার প্রার্থীর কর্মী, সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
২৫ ডিসেম্বর দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটী ইউপি চেয়ারম্যান জিয়া গাজী তাঁকে এবং নৌকার প্রার্থীকে জড়িয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী দারার সাংবাদিক সম্মেলনের প্রতিবাদে ২৬ ডিসেম্বর দিঘলিয়া প্লেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে তার এবং তার প্রার্থীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলে উল্লেখ করেন। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী অর্থের বিনিময়ে তার পক্ষে সমর্থন আদায় ও কর্মীদের ভয়-ভীতি দিচ্ছে বলে স্বতন্ত্র প্রার্থী যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তিনি নিজের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য এ সকল অভিযোগ করছেন। এছাড়াও তিনি ২৪ ডিসেম্বর একজন নারী ভোটার তার বিরুদ্ধে থানায় তাকে ভয় ভীতি ও জীবননাশের হুমকি প্রদানের অভিযোগ করেছেন তাও মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
২৬ ডিসেম্বর গাজীরহাট ইউনিয়নের মাঝিরগাতী ৫ নং ওয়ার্ডের নৌকা মার্কার নির্বাচনী সভায় বুলু শেখের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে পিঠের চামড়া তুলে নেওয়ার হুমকি প্রদানের অভিযোগ উঠেছে।
২৪ ডিসেম্বর খুলনা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী দারার সমর্থক রওশন আরা রিনী তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং হত্যার হুমকি প্রদান করা হয়েছে মর্মে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও দিঘলির উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন সেনহাটী ইউপি চেয়ারম্যান ও নৌকা মার্কার সমর্থক জিয়া গাজীর বিরুদ্ধে। জিয়া গাজীর বিরুদ্ধে দিঘলিয়া থানায় এ সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরি ও তিনি করেন।
হুমকি ধামকির পাশাপাশি এই আসনটিতে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনেরও অভিযোগ উঠেছে । এ অভিযোগে নৌকার প্রার্থী আব্দুস সালাম মূর্শেদীকে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টায় নির্বাচনী এলাকা খুলনা -৪ (রুপসা, তেরখাদা, দিঘলিয়া)আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সহকারী জজ, ডুমুরিয়া, খুলনার আদালতে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। যার স্বারক নং ৩ তাং ২৭/১২/২০২৩।
তবে হুমকি-ধামকী, উত্তেজনা, প্রার্থীর আচরণবিধি লংঘন যাই হোক এ আসনের একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ন নির্বাচন হবে বলে এলাকার সাধারণ ভোটাররা ধারণা করছেন।