দেশের তথ্য ডেস্ক:-
নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ে বছরজুড়েই অস্বস্তিতে মানুষ। চলতি শীতে সবজির ভরা মৌসুমেও স্বস্তি নেই বাজারে। নিকট অতীতে একক কোনো বছরে বাজারে এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখেননি ভোক্তারা।
ক্রেতাদের অভিযোগ, পণ্যের দাম ১০০ টাকা বাড়লে কমে ১০ টাকা। সবজির এখন ভরা মৌসুম। তারপরও দাম কমছে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে বেড়েছে বেগুন ও করলাসহ প্রায় সব সবজির দাম। সেই সঙ্গে দাম বেড়েছে রসুন ও বাজারে আসা নতুন আলুর। তবে কমেছে গাজর, ছোলাবুট ও পেঁয়াজের দাম। অপরিবর্তিত রয়েছে ডিম, চাল, ডাল ও চিনির বাজার। উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাবে দ্রব্যমূল্যের এ ঊর্ধ্বগতিতে বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল নাভিশ্বাস অবস্থা। সীমিত আয়ের মানুষ সংসার চালাতে বিশেষত খাদ্য ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে খাওয়া-দাওয়া সীমিত করেছেন। খাদ্যপণ্য কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। অনেক পরিবার আকাশচুম্বী দামের কারণে মাছ, মাংস, ডিম, দুধের চাহিদা মেটাতে পারছে না। বাজার শীতকালীন সবজিতে ভরপুর। তারপরও সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে দাম। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দামও বেড়েছে। খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে আলুর দাম বেশি হওয়ার কারণে অন্যান্য সবজির ওপর কিছুটা চাপ পড়েছে। এখনো নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে। অন্যান্য বছর এমন ভরা মৌসুমে ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে নেমে আসে। এ কারণে মানুষ আলু কিনছে কম, অন্যান্য সবজির দিকে ঝুঁকছে। আবার কিছু ব্যবসায়ী দাম বাড়ার কারণ হিসেবে অবরোধে পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন। শীতের নানা রকম সবজিতে ছেয়ে গেছে বাজার। বিক্রি হচ্ছে দেদার। অবরোধ-হরতালের তেমন কোনো প্রভাব না থাকায় উত্তরাঞ্চল থেকে আসা বিভিন্ন ধরনের সবজি পাওয়া যাচ্ছে রাজধানীর বাজারগুলোতে। গতকাল রাজধানীর কাঁচা বাজারগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়ও দেখা গেছে। রাজধানীর মালিবাগ, হাতিরপুল, কারওয়ান বাজার, আনন্দবাজার, যাত্রাবাড়ী কাঁচা বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে চড়া মূল্যে ভোক্তারা চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন।
সারা বছরই বিভিন্ন রকম শাকসবজি পাওয়া যায়। তবে শীতের সবজির স্বাদই আলাদা। তাই ক্রেতারা অপেক্ষায় থাকেন কখন বাজারে তাদের পছন্দের সব ধরনের সবজি পাওয়া যাবে। নতুন টমেটো, গাজর, পেঁয়াজ কলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মটরশুঁটি, শিম, লাউ, নতুন আলু এগুলোর চাহিদা যেমন বেশি, তেমনি ক্রেতাদের আগ্রহ ক্যাপসিকাম বা ব্রোকোলির মতো বিদেশি সবজিতেও। কিন্তু সবজির দাম কিছুটা কমলেও স্বাভাবিক পর্যায়ে এখনও পৌঁছেনি।
যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা কাশেম আমার সংবাদকে বলেন, শীত হলো সবজির মৌসুম। এমন সময় দাম কমার কথা। অন্যান্য বছর এমন ভরা মৌসুমে দাম নেমে গেলেও এবার সবজির দাম কমার কোনো ঈঙ্গিত নেই। গতকাল এক কেজি আলু ৭০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। অথচ আলুর দাম ২০ টাকার ওপর উঠার যৌক্তিকতা নেই। বাজারে এখন টমেটোর কেজি ১০০ টাকার ওপর। এই মৌসুমে ২০-৩০ টাকার ওপর টমেটোর দাম রাখা অন্যায্য।
এদিকে বাজারে নতুন আলু আসার পর কয়েক সপ্তাহ ব্যবধানে দাম প্রতিকেজি ৬০ টাকায় নেমেছিল। এখন আবারও বাড়তে শুরু করেছে আলুর দাম। বাজারে এখন প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি। বাজারে নতুন আসা গ্রানুলা (সাদা আলু) ও কার্ডিনাল (লাল আলু) উভয় জাতের আলুর দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা। বাজারে এখন সাদা নতুন আলু-ই বেশি। কিছু দোকানে পুরোনো আলু পাওয়া যাচ্ছে, পুরোনো আলু এখনো বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি। পুরোনো আলুর দামও আগের তুলনায় ১০ টাকা বেশি। বাজারে সাধারণত গ্র্যানুলা ও কার্ডিনাল জাতের আলু দেখা যায়। সাদা ও লাল উভয় জাতের আলুর দামে বড় কোনো পার্থক্য নেই। কার্ডিনাল আলু ডায়মন্ড আলু নামেও পরিচিত।
এদিকে কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সরকার তিন লাখ ছয় হাজার টন আলু আমদানির অনুমতিপত্র দিলেও এ পর্যন্ত দেশে আলু এসেছে ৬২ হাজার টন। আলু আমদানি না হওয়া এবং আবহাওয়া প্রতিকূল হওয়ার কারণে বাজারে আলুর সরবরাহ কম, যে কারণে দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী।
এদিকে মাঝখানে পেঁয়াজের দাম বাড়লেও সেটা এখন কমে এসেছে। পুরোনো পেঁয়াজ ১৬০ টাকায় ও নতুন পেঁয়াজ ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডাটাসহ পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা। পেঁয়াজের কলির দাম কেজি হিসেবে ৮০ টাকা ও আঁটি হিসাবে ২০ টাকা। তরকারি ও সালাদের জন্য অনেকেই পেঁয়াজের কলি নিচ্ছেন। হাতিরপুল বাজারে দেখা যায়, মান ভেদে শিম, গাজর, বেগুন, করলা, পটোল, ধুন্দল ও কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। টমেটো, বরবটি, ঢেঁড়স, ধনেপাতা ও কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০ টাকায়। লাউ আকার ভেদে ৭০ থেকে ১০০ টাকা এবং ফুল ও বাঁধাকপি প্রতিটির দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এছাড়া বাজারে নতুন আলু ৭০ টাকা ও পুরোনো আলু ৬০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।
সবজির দামে ভোক্তারা এখনও স্বস্তি না পেলেও মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। রাজধানীর কয়েকটি মাছ বাজারে মাছের দাম স্থিতিশীল দেখা গেছে। ইলিশ এক কেজি সাইজের ওপর কেজি ২০০০ টাকা এবং ছোট সাইজেরগুলো ৮০০ থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। রুই ও কাতল মাছ ৩৫০ থেকে ৪৫০, চিংড়ি মাছ আকার ভেদে ৪০০ থেকে ১০০০ টাকা এবং রুপচাঁদা মাছ বিক্রি হচ্ছে ১০০০ টাকায়। এছাড়া তেলাপিয়া ও চাষের কই ২২০ থেকে ২৫০ এবং পাঙ্গাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে।
মাংসের দোকানে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা, কক মুরগি ২৯৫-৩০৫ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৭০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা, গরুর মাংস ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি ডজন লাল ডিম ১২০ টাকা, সাদা ডিম ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ঢাকার এ অঞ্চলটিতে ৫৯৫ টাকা দরে গরুর মাংস বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে কেজি প্রতি ৫৫ টাকা বেড়ে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর স্বপ্নসহ অন্যান্য সুপারশপগুলোতে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৯৯ টাকায়। এ ছাড়া গত সপ্তাহে ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া ব্রয়লার কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ আমার সংবাদকে বলেন, শীতের মৌসুমেও এমন চড়া মূল্য আগে কখনও দেখিনি। বাজার সরবরাহ ঠিক থাকলেও কতিপয় সিন্ডিকেটের কারণে দাম কমছে না। তিনি অভািযোগ করে বলেন, ভোক্তা অধিকার, নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর, সিটি কর্পোরেশন সবারই এখানে দায় রয়েছে। তারা অদৃশ্য কারণে ক্ষমতা প্রয়োগ করছে না। বাজার মনিটরিংয়ে উদাসীনতাই দাম বাজার অস্থিতিশীলতার বড় কারণ।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আমাদের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলছে। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত মানুষ কীভাবে যে জীবন ধারণ করছে সেটা কল্পনা করা যায় না। মানুষের সঞ্চয় তলানিতে পড়েছে বা শেষ হয়ে গেছে। ধার-কর্য করছে। মানুষ কষ্টে আছে। ব্যবসায়ীদের অতিলোভ বাজার দরের বৃদ্ধির কারণ