দেশের তথ্য ডেস্ক:-
১৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসের ডরমিটরি ভবনে এ অনুষ্ঠান উদ্যাপিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার ও সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত ‘আন্তঃকলেজ ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা-২০২৩’ এর চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ ও মহান বিজয় দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ৩২টি ইভেন্টে সারাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ১৩৩৯টি কলেজের ২৪ হাজার ৯৩৮জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ৭২টি কলেজের ৪১৩ জন শিক্ষার্থী চূড়ান্তভাবে বিজয়ী হিসেবে পুরস্কার গ্রহণ করে। মোট ৭৫টি ভেন্যুতে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। দৌড়, লং জাম্প, হাই জাম্প, শটপুট নিক্ষেপ, চাকতি নিক্ষেপ, ফুটবল, ক্রিকেট, দাবা, ভলিবল, বাস্কেটবল, সাঁতার ফ্রি স্টাইল, সাঁতার ব্রেস্টস্টোক, কাবাডি, হ্যান্ডবল, হকি, ব্যাডমিন্টন একক, ব্যাডমিন্টন দ্বৈত, টেবিল টেনিস একক, টেবিল টেনিস দ্বৈত, ক্যারম একক, ক্যারম দ্বৈত, আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা, একক অভিনয়, একক নৃত্য, দেশাত¦বোধক গান, নজরুল সংগীত, রবীন্দ্র সংগীত, লোকগীতি, সৃজনশীল দলীয় নৃত্য, বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ ৩২টি ইভেন্টে শিক্ষার্থীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘সুপরিকল্পনা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে দেশ আজ উন্নয়নের শিখরে অবস্থান করছে। এর ধারাবাহিকতা বজায়ে রাখলে আমাদের উন্নয়নের যে রূপকল্প গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলো অর্জন করতে সক্ষম হব। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় অনেক বেড়েছে। আমরা উন্নয়নের সকল সূচকে অনেক এগিয়েছি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণেই এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায়ে থাকলে এবং গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কররতে পারলে আমরা নির্ধারিত সময়ের আগেই উন্নত দেশে প্রবেশ করতে পারব।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গুণগত শিক্ষার মান উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে শামসুল আলম বলেন, ‘গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতে আমাদের কাজ করতে হবে। শিক্ষকদের এক্ষেত্রে অনেক বেশি কাজ করার সুযোগ আছে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা নিয়মিত করতে হবে। অপরাজনীতি থেকে দূরে থাকতে হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে আগামী দিনে উন্নত, সমৃদ্ধ, মানবিক ও আত্মমর্যাশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণে নেতৃত্ব দিতে হবে।’
মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু চেয়ার ড. হারুন-অর-রশিদ রাজনীতির নামে মানুষ হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেন, ‘১৫ আগস্টের পর দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আজ বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আজকে আবার দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। মানুষ পুড়িয়ে মারছে। আন্দোলনের নামে যারা পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে তারা দেশ ও জাতির শত্রু। তাদের মধ্যে যদি মনুষ্যত্ব থাকত, সামান্য দেশপ্রেম থাকত তাহলে এই ঘৃণ্য কাজ করতে পারত না। জনগণের প্রতি যদি তাদের দায়বদ্ধতা থাকত তাহলে তারা এই ধরনের কর্মকা- করতে পারত না। এর মাধ্যমে তারা জনগণের ঘৃণার পাত্রে পরিণত হবে। আমি বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানাব, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা। এর মধ্য দিয়ে দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।’
ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘মহান বিজয়ের মহানায়ক স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর জন্ম এবং নেতৃত্ব না হলে আজ এই বাংলাদেশ সৃষ্টি হত না। যেকারণে বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় একই সূত্রে গাথা। আর সেই বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। তবে আমি মনে করি, যারা বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করে তাদের ঠিকানা পাকিস্তান।’
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘যে বাংলাদেশে তুমি বাস করছে, যে ডিসেম্বরে আমরা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি সেটি আমাদের বিজয়ের মাস। ৩০ লক্ষ শহিদের আত্মাহুতি, ২ লক্ষ মা-বোনের নির্যাতন সয়ে সয়ে আমরা মানচিত্র পেয়েছি। এই দেশমাতৃকায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতিরাষ্ট্রের ¯্রষ্টাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন অগণতান্ত্রিক সামরিক শাসনের যাঁতাকলে ছিলাম। ১৯৯০ এর গণআন্দোলনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত দিয়ে পুনরুদ্ধার হয়েছে গণতান্ত্রিক যাত্রার। আর তাঁর হাত দিয়েই একে একে বিজয় করেছি সমুদ্রসীমা, ছিটমহল। পাহাড়ি বন্ধুদের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করেছি। আমরা মঙ্গা দূর করেছি। আমরা আগামী দিনে বিশ্বে নেতৃত্ব দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সেই প্রস্তুতিতে শান্তি, সংস্কৃতি, ঐক্য, সংহতি, সৃজনশীলতা, কৃষ্টির চর্চা অপরিহার্য।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দেশের প্রথিতযশা সমাজবিজ্ঞানী ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘তোমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্মমর্যাদার সঙ্গে থাকবে। আমি জানি, তোমরা অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যাও। একইসঙ্গে তোমরা পড়াশোনা করো, বাবা-মা, ভাই-বোনকে দেখ। এজন্য তোমাদেরকে স্বাগত জানাই। তবে তোমরা অবশ্যই নিয়মিত পাঠ গ্রহণ করবে। কারণ এই প্রিয় দেশমাতৃকা আমাদের নিজেদের হাতে গড়ে তুলতে হবে। সযতেœ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে। পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রসমূহের নাগরিকরা যেমন তথ্য অবগাহন করে। একই তথ্য তুমি ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবাদে অবগাহন করতে পার। স্মার্ট সিটিজেন শুধু বাংলাদেশে নয়, পুরো বিশে^র নাগরিক হবে। সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি আর উৎকর্ষতায় নিজ হাতে প্রিয় দেশমাতৃকা গড়ার শপথ নিতে হবে।’
উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের উষ্ণ অভিনন্দন জানাই। সারাদেশে আন্তঃকলেজ ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বন্ধুদের সঙ্গে সুস্থ প্রতিযোগিতায় তোমরা বিজয়ী হয়েছ তোমাদের অভিবাদন। তবে আমি মনে করি তোমরা যারা এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছ তোমরা সকলেই বিজয়ী। কারণে এটি ছিল সুস্থ সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও বিতর্ক চর্চার অনন্য ক্ষেত্র। আমরা এই ক্ষেত্রটিকে বড় করে তুলতে চাই। মানচিত্রসম এই প্রিয় প্রতিষ্ঠান- জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ২২৫৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩৫ লক্ষ শিক্ষার্থীকে নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিযোগিতা করতে চাই। আমার বিশ্বাস, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায়ও সাফল্যের স্বাক্ষর রাখতে পারবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের ইতিহাস পড়ে। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানে। এই শিক্ষার্থীরা একইসঙ্গে সংস্কৃতি চর্চা করে। আর চর্চা করে দেশপ্রেম আর বিশ^ নাগরিক হবার। তোমরা যারা এই ক্যাম্পাসে এসেছ আজকে সারদিন তোমার এই ক্যাম্পাসে থাকবে, ঘুরবে। এটি তোমাদের ক্যাম্পাস। তোমাদের জন্য এই ক্যাম্পাসকে আমরা আরও সুন্দর এবং প্রাণবন্ত করে সাজাতে চাই।’ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ। ধন্যবাদ জানান ট্রেজারার প্রফেসর আবদুল সালাম হাওলাদার।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন। উল্লেখ্য, ‘আন্তঃকলেজ ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা-২০২৩’ ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ থেকে শুরু হয়। উপজেলা, জেলা ও বিভাগ পেরিয়ে বিজয়ীরা চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়।