দেশের তথ্য ডেস্ক:- দেশজুড়ে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। রোগটি ছোঁয়াচে নয়, তবু আতঙ্কে অনেক অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের, বিশেষ করে শিশুদের স্কুলে পাঠাতে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছেন। এ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার কমেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে উপস্থিতির হারের তুলনায় নিম্ন মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বেশি কমেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, শহীদবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সেনপাড়া পর্বতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি কিন্ডারগার্টেন ঘুরে শিক্ষার্থীর এমন অনুপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।
ভিকারুননিসার সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির কয়েকটি কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় অর্ধেক বেঞ্চ শিক্ষার্থীশূন্য। মনিপুর স্কুলের প্রাথমিকের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী অনুপস্থিতির হার প্রায় একই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভিকারুননিসার একজন শিক্ষক জানান, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে সাধারণত প্রতিটি ক্লাসের বেঞ্চগুলো পরিপূর্ণ থাকে।
ডেঙ্গুর কারণে শিক্ষার্থী কমেছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, গতকাল (বুধবার) দুটি প্রধান দলের রাজনৈতিক সমাবেশ থাকায় হয়তো আজও (বৃহস্পতিবার) শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম। ৮০ জন শিক্ষার্থীর স্থলে হয়তো পাঁচজন করে অনুপস্থিত রয়েছে। ফলে ডেঙ্গুর কারণেই শিক্ষার্থী কমেছে—এ কথা বলা যাবে না।
সেনপাড়া পর্বতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিন্নাত মহল বেলী কালের কণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম আছে, তবে তা প্রায় ৭০ শতাংশ।
ডেঙ্গুর কারণে নয়, বরং ঈদের ছুটি শেষে এখনো অনেকে না ফেরায় উপস্থিতি কম। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর পরিবার বরিশালে থাকে।
মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক ফোরামের সদস্যসচিব লিয়াকত আলি কালের কণ্ঠকে বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ভালো। তবে ডেঙ্গুর ভয়াবহতার কারণে দু-একজন অভিভাবক স্কুল বন্ধ রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন।
রাজধানীর বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শনকালে দেখা যায়, ডেঙ্গু প্রতিরোধে নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শ্রেণিকক্ষে এরোসল, ব্লিচিং পাউডার, মশা মারার স্প্রে দেওয়াসহ আঙিনা, ছাদ, ওয়াশরুম, বারান্দা, ফুলের টব ও জমে থাকা পানি পরিষ্কার করা হচ্ছে।
পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বাসায় ফুলদানি, টব ও তার নিচের প্লেট পরিষ্কার করা, পানি ধরে রাখা হলে তা ফেলে নতুন পানি দেওয়া এবং বাড়ির আঙিনায় অভিভাবকদের সঙ্গে পরিষ্কার করার কাজে অংশ নেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। ঈদুল আজহার বন্ধ শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর এসব বিষয় প্রতিপালনে নির্দেশনা দিয়েছিল মাউশি।
মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আগামী রবিবারের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন নির্দেশনা পাঠানো হবে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) মাউশি কর্মকর্তাদের সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। নির্দেশনায় নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে শিক্ষার্থীদের হোমওয়ার্ক হিসেবে বসতবাড়ি ও আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে দেওয়া হবে। এই হোমওয়ার্কের জন্য নির্ধারিত নম্বর থাকবে। বাড়িতে শিক্ষার্থীদের পরিচ্ছন্নতার কাজে অংশ নেওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা নিশ্চিত করবেন। আবার বাসাবাড়ি ও আশপাশে পরিষ্কারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ওয়ার্ক ফোর্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এতে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা কমানো সম্ভব হবে। ফলে ডেঙ্গু প্রতিরোধে এসব করণীয় জানতে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত স্কুলে আসতে হবে।
নেহাল আহমেদ বলেন, ডেঙ্গু ছোঁয়াচে রোগ নয়। কেউ কেউ বলে স্কুল বন্ধ করে দিতে। স্কুল বন্ধ করলেই তো ডেঙ্গু প্রতিরোধ নিশ্চিত করা যাবে না। বাসায় থেকেও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছে। মশা শুধু স্কুলে থাকে না।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ৩ জুলাই ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল শাখার একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইলমা জাহানের মৃত্যু হয়। গত মঙ্গলবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান দ্বিতীয় শ্রেণির (বাংলা ভার্সন) গ শাখার শিক্ষার্থী মেহের জাবিন ছুঁইয়ের মা শিউলি আক্তার। বর্তমানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ড. সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মর্নিং শিফট বি-র প্রথম শ্রেণির (ইংলিশ ভার্সন) শিক্ষার্থী রাইমা ইসলাম।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের মৃত্যুর ঘটনা দুঃখজনক। কোথা থেকে তাদের এডিস মশা কামড় দিয়েছে সেটা বলা সম্ভব নয়। তবে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের ডেকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। আমরা যদি নিজের বাসাবাড়ি পরিষ্কার করি, আর সিটি করপোরেশন বাইরের স্থান পরিষ্কার রাখলে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা কমে আসবে।’