আগামী ১৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংগঠনিক সফরে খুলনায় আসছেন। ঐ দিন বেলা ২ টায় তিনি খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানে খুলনা জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন। একই দিন তিনি সভামঞ্চ থেকে খুলনার ২৪ টি প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। ইতিমধ্যে প্রকল্পগুলোর তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২৪ টি প্রকল্পের মধ্যে ২২ টি প্রকল্পের নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আর ২ টি প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তুত স্থাপন করবেন। প্রকল্পগুলোর তালিকা ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
উদ্বোধনের তালিকায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকৃত প্রকল্পের ১টি হলো দিঘলিয়া টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের “ওয়ার্কশপসহ ৫ম-তলা একাডেমিক ও ৪-তলা প্রশাসনিক ভবন এবং ১-তলা সার্ভিস এরিয়া নির্মাণ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ভূমি উন্নয়ন এবং গভীর নলকূপ স্থাপন”। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে রয়েছে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ।
প্রকল্পটির নির্মাণকারী সংস্থা খুলনা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মুঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রায় ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দিঘলিয়া টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ নির্মাণ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পটির টেন্ডার হয়ে গেছে। যেটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের নামফলক তৈরীসহ এ সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক সকল কাজ শেষের পথে।
দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার খান মাসুম বিল্লাহ বলেন, ” প্রধানমন্ত্রী আগামী ১৩ নভেম্বর দিঘলিয়া টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। ইতিমধ্যে নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের নামফলক তৈরীসহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্নের শেষ পর্যায়ে রয়েছে”।
খুলনা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে উপজেলা পর্যায়ে এ জাতীয় আরো ৩২৯ টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন (২য় পর্যায়) শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। যেটি ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)’র সভায় অনুমোদন পায়। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ হাজার ৫২৫ কোটি ৬৯ লক্ষ টাকা। দিঘলিয়া টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ নির্মাণের জন্য উপজেলার দেবনগর মৌজার ৩ একর জায়গা অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর দিঘলিয়া টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ নির্মাণের জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি) থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু তখন নির্মাণ সামগ্রির মূল্য ঊর্ধমুখী থাকায় কোন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি করতে আগ্রহ দেখায়নি। এর ১ বছর পর চলতি বছরের অক্টোবর মাসে নতুন রেটে মূল্য তালিকা নির্ধারণ করে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। যেটি ইতিমধ্যে অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে ।
দিঘলিয়া টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ নির্মাণের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে ২২ কোটি টাকা টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে ওয়ার্কশপসহ ৫ – তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ, ৪ -তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, ১-তলা সার্ভিস এরিয়া নির্মাণ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, ভূমি উন্নয়ন এবং গভীর নলকূপ স্থাপন। বাকি ২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে সীমানা প্রাচীর ও প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ফটক নির্মাণের জন্য।
দক্ষ মানবসম্পদ তৈরীতে কারিগরি শিক্ষার কোন বিকল্প নেই, বিষয়টি উপলব্ধি করে বর্তমান সরকার ইতিপূর্বে প্রথম পর্যায়ে দেশের ১০০ টি উপজেলায় ১টি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩২৯ টি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। উদ্দেশ্য এসব প্রতিষ্ঠানসমূহে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ১টি করে কারিগরি বিষয় অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয় সুবিধা সৃষ্টিকরণ। এসএসসি (ভোকেশলার) ও এইচএসসি (ভোকেশনাল) কোর্স চালু করার মাধ্যমে দেশব্যাপী কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সম্প্রসারণ। কর্মক্ষম যুবকদের দেশে ও বিদেশে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ চাকুরির বাজারের চাহিদার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা। দারিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবিকা সংস্থাপনের লক্ষে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। ৪ টি ট্রেড ও ৪ টি স্বল্পমেয়াদী প্যারাট্রেড কোর্স চালু করা।
দিঘলিয়া টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ নির্মিত হলে পিছিয়ে পড়া এ এলাকার কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটবে। তৈরি হবে দক্ষ মানবসম্পদ।বিদেশি শ্রমবাজারে যুব সমাজের অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে । পাশাপাশি দ্বীপবেষ্টিত এলাকাটির আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক প্রসার ঘটবে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।
জানা যায়, নিজ জন্মস্থান দিঘলিয়ার সুগন্ধি গ্রামে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজটি নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বিশেষ অবদান রেখেছেন ।