দেশের তথ্য ডেস্ক:-
দেশে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারা গতকাল বলেছেন, ‘একে আমরা পরোয়া করি না। এই ভিসানীতি যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব ব্যাপার। তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। সেখানে আমাদের বলার কিছু নেই।
সরকার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে কোনো চাপ অনুভব করছে না। এতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে কোনো প্রভাব পড়বে না।’ অন্যদিকে বিএনপির নেতারা বলেছেন, বৃহৎ গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ যুক্তিযুক্ত। এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল সন্ধ্যায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সিআইপি লাউঞ্জে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ভিসানীতি ও নিষেধাজ্ঞার পরোয়া করে না আওয়ামী লীগ। ভিসানীতি, নিষেধাজ্ঞা হলে ক্ষতিটা তাদেরই, যারা নির্বাচনে বাধা প্রদান করতে চায় এবং প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। ভিসানীতি বাস্তবায়নের বাস্তবতাটা কী, সেটা দেখার বিষয়। আওয়ামী লীগ চায় অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার এ নিয়ে জনগণের কাছে অঙ্গীকার করেছেন। ভোট দেবে দেশের জনগণ। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে।
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই সেলফিতে রাজনীতির সব ফায়সালা হয়ে গেছে। দুই সেলফিতে বিএনপির রাতের ঘুম শেষ।
গতকাল দুপুরে সাতক্ষীরার পুলিশ লাইনসে ইনডোর প্লে গ্রাউন্ড উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘তারা কাকে ভিসা দেবে, কাকে দেবে না, সেটা তাদের নিজস্ব এখতিয়ার। আমরা মনে করি, তারা কোনো দলকে বা কোনো পক্ষকে বলেনি। তারা বলেছে, এই নির্বাচনের অন্তরায় যারা হবে, যারা এই নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করবে কিংবা নির্বাচন যারা প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে, ভণ্ডুল করার চেষ্টা করবে বা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে আমেরিকার এই ভিসা স্যাংশন নীতি প্রয়োগ করা হবে। এটা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এতে আমাদের বলার কিছু নেই।’
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গতকাল দুপুরে রাজশাহীর মাদিনাতুল উলুম কামিল মাদরাসায় শিক্ষার উন্নয়নে বর্তমান সরকারের ভূমিকা ও শিক্ষকদের প্রত্যাশা শীর্ষক বিভাগীয় শিক্ষক সমাবেশ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছতার সঙ্গে ভোট গ্রহণ করতে চায়। সংবিধানে যেভাবে আছে, সেভাবেই নির্বাচন হবে। তাই বর্তমান সরকার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে কোনো চাপ অনুভব করছে না, বরং বিএনপি সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দেয় বলে তারাই চাপে আছে।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “আমি মনে করি, এটা খুব ভালো। যারা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। তারা নিরপেক্ষ-সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছে। আমরাও তা চাই। আমরা তো বাধা দিতে চাই না। যারা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধা দেবে তাদের বিরুদ্ধে ভিসা স্যাংশন হবে। তারা শুধু বাধা নয়, সহিংসতার কথাও বলেছে। আপনারা জানেন, প্রধান বিরোধী দল, তারা প্রকাশ্যে বলছে, ‘আমরা নির্বাচন হতে দেব না।’ গতকালও বলেছে, ‘শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হতে দেব না।’ কিভাবে হতে দেবেন না? একটাই পথ, ভায়োলেন্স করে বাধা দেবেন। আমি মনে করি, যারা বাধা দেবে তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র স্যাংশন দেবে। এটা খুবই ভালো। ডোনাল্ড লু (মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি) যে ইন্টারভিউ দিয়েছেন তাতে বলেছেন, বিরোধী দল, ক্ষমতাসীন দল ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য যারা বাধা দেবে তাদের বিরুদ্ধেই স্যাংশন দেবে।”
তিনি আরো বলেন, ‘এটার সাথে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। আমেরিকা আমাদের সবচেয়ে বড় বাজার। আমি প্রতিযোগিতা করে সেই বাজার দখল করেছি। ইউরোপের মতো আমেরিকা তাদের বাজারে আমাকে বিশেষ কোনো অ্যাকসেস দেয়নি। আমি সাড়ে ১৫ পার্সেন্ট ডিউটি দিয়ে সেই মার্কেট পাই। যে কেউ সাড়ে ১৫ পার্সেন্ট ডিউটি দিয়ে আমেরিকান বাজারে ঢুকতে পারে। আমার জন্য যে এটা সবচেয়ে বড় বাজার সেটা আমাদের ব্যবসায়ী, গার্মেন্ট কম্পানি, শ্রমিক যাঁরা আছেন তাঁদের ক্রেডিট। আমরা সারা পৃথিবীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে সাড়ে ১৫ পার্সেন্ট ডিউটি দিয়ে আমি সেই বাজারটা দখল করতে পেরেছি। আমেরিকা তো আমার জন্য স্পেশাল কিছু করে দেয়নি। বাণিজ্যে কোনো সমস্যা হবে না।’
বিএনপি যা বলছে
গতকাল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি প্রয়োগ হওয়ার জন্য সরকার দায়ী। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সরকার মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র রক্ষায় অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে যেভাবে ভিসানীতি প্রয়োগ করে থাকে সেভাবে বাংলাদেশেও করেছে। বৃহৎ গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ যুক্তিযুক্ত। এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।’
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার আন্দোলনের এক প্রতিবাদসভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ‘আমাদের দেশের ৫২ বছর বয়স হয়েছে। এই ৫২ বছর বয়সে আমাদের অর্জন আমেরিকার স্যাংশন ও ভিসানীতি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমেরিকায় থাকা অবস্থায় গত শুক্রবার ভিসানীতি প্রয়োগ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই, ভোটের অধিকার নেই, মানবাধিকার নেই—এসব কারণে আমেরিকা আগে স্যাংশন দিয়েছিল, এখন ভিসানীতি প্রয়োগ শুরু করেছে। এটা কোনো আনন্দের সংবাদ নয়।’
লক্ষ্য সরকারকে ভয় দেখানো
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন গতকাল নাটোরের লালপুরে এক স্মরণসভায় বলেন, ‘তাদের আসল লক্ষ্য সরকারকে ভয় দেখানো। সরকার যাতে তাদের কাছে নতজানু হয়, তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতি মেনে নেয়, বঙ্গোপসাগরে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় এ দেশের মানুষকে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়ে ভয় দেখানো যায়নি। এবারও কারো হুকুম জারিতে নয়, এ দেশের জনগণ শান্তিপূর্ণ নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করবে।