বাগেরহাটে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সেবা পেতে ঘুষ, দুর্নীতি ও হয়রানির বিষয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার দিনব্যাপী শহরের জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে প্রধান অতিথি ছিলেন দুদকের সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাঃ খালিদ হোসেনের সঞ্চালনায় গণশুনানিতে দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মোঃ আক্তার হোসেন, খুলনা বিভাগীয় পরিচালক মোঃ মঞ্জুর মোরশেদ, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক মোঃ শাহরিয়ার জামিল, পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক) বাগেরহাটের সভাপতি এড. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেনসহ দুদকের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
শুনানিতে অংশ নিয়ে মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো পরিচালিত আউট অফ স্কুল চিলড্রেন কর্মসূচি বাস্তবায়নকারী এনজিও সুখী মানুষের বিরুদ্ধে উপকরণ সহায়তা প্রদান না করা, কর্মীদের বেতন না দেওয়া এবং জামানতের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো বাগেরহাটের সহকারি পরিচালক হিরামন কুমার বিশ্বাসকে এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন দুদক সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন।
শরণখোলা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ইসমাইল হোসেন লিটন প্রেসক্লাবের অনুকূলে দুই লক্ষ টাকার অনুদান প্রদানের জন্য পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ করেন জেলা পরিষদের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। অভিযোগের বিষয়ে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী ঝুমুর বালা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটার আশ্বাস দেন।
বিআরটিএ-তে চার বছর ঘুরেও ড্রাইভিং লাইসেন্স না পেয়ে অভিযোগ করেন সিরাজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, জেলার বাইরে চাকুরি করি। বিআরটিএতে চার বছর ঘুরেও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাইনি। অস্থায়ী রোড পারমিট নিয়ে আমার চলতে হয়। অভিযোগের বিষয়ে বিআরটিএ বাগেরহাটের সহকারি পরিচালক লায়লাতুল মাওয়া বলেন, সার্ভার পরিবর্তনের কারণে কিছু ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে সমস্যা হচ্ছে। অভিযোগকারীকে দ্রুত সময়ের মধ্যে লাইসেন্স পাওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
এদিকে হোল্ডিংয়ে নাম পরিবর্তনের জন্য ১০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে বলে বাগেরহাট পৌরসভার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন এক নারী। টাকা না দেওয়াতে তাঁর হোল্ডিং পরিবর্তন হচ্ছে না। শুনানীতে সব দপ্তর প্রধানদের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমান ছিলেন না। এ জন্য অভিযোগের জবাব দেন পৌরসভার প্রধান নির্বাহী ও বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাশেদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমাদের পৌরসভা মিউটেশন করা লাগে, এর জন্য পৌরসভা রেজুলেশন করে একটি ফি নির্ধারণ করেছে, এটা হচ্ছে ৫ হাজার টাকা। যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন সেলিম সাহেব তিনি আছেন। তার দাবি ওই টাকা চাওয়া হয়নি।
এছাড়া শুনানিতে বাগেরহাট সদর উপজেলা এসিল্যান্ড, সাব-রেজিস্ট্রার, ভূমি অধিগ্রহণে জড়িত কর্মকর্তা কর্মচারি, ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি, বাগেরহাট, সমাজ সেবা অধিদপ্তর, পার্সপোর্ট অফিস, বাগেরহাট জেলা ২৫০ শয্যা হাসপাতালসহ ২০টি দপ্তরের বিরুদ্ধে ৭৩টি অভিযোগ দেন সেবা প্রার্থীরা। এর মধ্যে অধিকাংশ অভিযোগ তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করা হয়। কয়েকটি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন দুদক সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন। জনসাধারণের আনা অভিযোগ সমাধান হলো কিনা তা সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে দুদককে জানাতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে এদিন কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেননি দুদক।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য সাধারণ মানুষের সচেতন হওয়া জরুরি। দুর্নীতি প্রতিরোধের আকাক্সক্ষা প্রত্যেক নাগরিককে মনে প্রাণে ধারণ করতে হবে। শুধু আইন দিয়ে দুর্নীতি কমানো সম্ভব না। কমিশনের কাজ হচ্ছে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ করা।