প্রেম ও বিদ্রোহের অমর কবি কাজী নজরুল ইসলাম ৪৮তম মহাপ্রয়াণ দিবস।

kobi.jpg

জনাব মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম ( কেএমপি পুলিশ কমিশনার )

মানুষ আর মানুষের হৃদয়কে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রেখে তিনি উচ্চারণ করেছিলেন- ‘এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা নাই’। আবার তার কলম থেকেই বেরিয়ে এসেছিল বজ্রনির্ঘোষ আহ্বান- ‘জাগো অনশন-বন্দি, ওঠ রে যত জগতের বঞ্চিত ভাগ্যহত’। শোষিত) নিপীড়িত মানুষের বঞ্চনার ক্ষোভ দীপ্ত শিখার মতো জ্বলে উঠেছিল যার কণ্ঠে; সাম্প্রদায়িকতার পরিবর্তে অসাম্প্রদায়িকতা তথা মানবতার বাণী শুনিয়েছিলেন তিনি। বাংলা সাহিত্য-সংগীত তথা সংস্কৃতির প্রধান পুরুষ। তবে, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তার লেখনী ধূমকেতুর মতো আঘাত হেনে জাগিয়ে দিয়েছিল ভারতবাসীকে। তিনি পরিণত হন বিদ্রোহের কবিতে। আজও তার নানা ধরনের লেখার মাঝ থেকে বিদ্রোহের পঙিক্তমালা বাঙালির হৃদয়ে অনাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের দুন্দুভি বাজিয়ে চলে। তার কবিতা ‘চল চল চল’ বাংলাদেশের রণসঙ্গীত।

আজ ১২ ভাদ্র; প্রেম ও বিদ্রোহের অমর কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৮তন মহাপ্রয়াণ দিবস। ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ অবিভক্ত বাংলার বর্ধমান জেলার চুরুলিয়ায় জন্ম নেন কাজী নজরুল ইসলাম। ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (তৎকালীন পিজি হাসপাতাল) ৭৮ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়।

১৯৭২ সালের ২৪ মে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে কবি সপরিবারে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশ সরকার কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন এবং জাতীয় কবি হিসাবে ঘোষণা দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন।

তার জীবনকাল ৭৮ বছর হলেও ১৯৪২ সালের জুলাই মাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর দীর্ঘ ৩৪ বছর তিনি অসহনীয় নির্বাক জীবন কাটিয়েছেন। এই ৩৪ বছর কবি বাংলা সাহিত্যে অবদান রাখার সুযোগ পেলে বাংলা সাহিত্য আরো সমৃদ্ধ হতো। কবির নির্বাক হয়ে যাওয়া সমগ্র বাঙালী জাতি এবং বাংলা সাহিত্যের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। নির্বাক হতে যাচ্ছেন চির অভিমানি কবি বিষয়টি হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন বলেই লিখেছিলেন:

তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু, আর আমি জাগিব না,
কোলাহল করি’ সারা দিনমান কারো ধ্যান ভাঙিব না |
— নিশ্চল নিশ্চুপ
আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধবিধূর ধূপ !——

কবি নজরুল তার কবিতা, গান, উপন্যাসসহ অন্যান্য লেখনী ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পরাধীন ভারতে বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্য ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বলিষ্ঠ ও সোচ্চার কণ্ঠ ছিলেন।

আমাদের জাতীয় কবি, মানবতার কবি, সাম্যের কবি,প্রেমের কবি, দ্রোহের কবি, অসমপ্রদায়িক কবি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম।চির অভিমানি কবির প্রতি রইলো গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। তার বিদেহী আত্বার শান্তি ও মাগফিরাত কামনা করছি। হে প্রিয় কবি তুমি আমাদের অতি আপনজন, হৃদয়ের সারথি।তুমি আমাদের ভালবাসার আলোক প্রভা হয়ে থাকবে অনন্তকাল।
প্রিয় কবির কবিতার নিম্নলিখিত চরণগুলো আমাকে কাঁদায়। কবি লিখেছেন

“আমি চিরতরে দূরে চলে যাব,
তবু আমারে দেবনা ভুলিতে।
(আমি) বাতাস হইয়া জড়াইব কেশ,
বেণী যাবে যবে খুলিতে।।
তোমার সুরের নেশায় যখন/
ঝিমাবে আকাশ কাঁদিবে পবন,
রোদন হইয়া আসিব তখন তোমার বক্ষে দুলিতে।।
আসিবে তোমার পরমোৎসবে কত প্রিয়জন কে জানে,
মনে পড়ে যাবে–কোন্‌ সে ভিখারী পায়নি ভিক্ষা এখানে।
তোমার কুঞ্জ-পথে যেতে, হায়! চমকি’ থামিয়া যাবে বেদনায়
দেখিবে, কে যেন মরে মিশে আছে তোমার পথের ধূলিতে”।

Share this post

PinIt
scroll to top