বিএনপি তিন বছরের সরকারে!

bnp-neewws-20230826171517.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক:- 

তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি আউট, ইন স্বল্পসময়ের বিশেষ সরকার
তারেক রহমানের সঙ্গে শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে আসছে চূড়ান্ত খসড়া
ড. ইউনূস বা তার মনোনীত ব্যক্তিতালিকায় সন্তুষ্ট থাকবে বিএনপি
আ.লীগ চায় নতুন সরকারের বেশিরভাগ পদ, বিএনপির ‘না’
সিঙ্গাপুরে ড. মোশাররফকে গুরুত্ব দিয়ে তারেকের নেতৃত্বে বৈঠক
বিএনপির তিনটি এজেন্ডা রয়েছে— স্থায়ী নির্বাচন ব্যবস্থা, দলীয় নির্বাচনমুক্ত আইন পরিবর্তনের প্রস্তাব
তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি থেকে পিছু হটছে বিএনপি! রাজনৈতিক সমঝোতায় নির্বাচনকালীন সরকারে মনোযোগী হচ্ছে দলটি। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আন্দোলনের মাধ্যমে কেয়ারটেকার সরকার দাবি বাস্তবায়নে যে চাপা পড়েছে, দলের নীতিনির্ধারকের কাছে সে বিষয়টি স্পষ্ট। এখন পর্দার আড়ালে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো মিলে কিছু সময়ের জন্য ‘ছোট সরকার’-এর রূপরেখা বাস্তবায়নে শেষ সময় পার করছেন বিএনপি নীতিনির্ধারকরা। চলতি সপ্তাহে দলের হাই-কমান্ডরা একসাথে মিলিত হয়ে দেশের বাইরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি খসড়া নিয়ে দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে।

বিএনপি ও জোটের নির্ভরযোগ্য সূত্র আমার সংবাদকে জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হচ্ছে না। তিন বছরের জন্য একটি সরকার গঠন হচ্ছে— এটি প্রায় চূড়ান্ত। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চাচ্ছে— তাদের দল থেকে বেশির ভাগ সদস্য দিয়ে, বিএনপি থেকে বড় অংশ নিয়ে এবং অন্য রাজনৈতিক দলগুলো থেকে শতাংশ হারে পদের মাধ্যমে এ ‘ছোট সরকার’ গঠিত হবে। তবে এতে বিএনপি এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ সদস্য দিতে বিএনপি রাজি হচ্ছে না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে চলতি সপ্তাহে বিএনপির হাইকমান্ডের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেখানে ছোট সরকারের ফরমেট ও পলিসি কী হবে তা ঠিক করে দেশে এসে বাস্তবায়ন করা হবে। তবে ছোট সরকারের প্রধান কে হবে— তা বিএনপি এক শীর্ষ ব্যক্তির ওপর নির্ভর করছে। ওই সূত্রের ভাষ্য, নোবেলবিজয়ী ড. ইউনূসকে বিএনপির পছন্দ। তবে তিনি যদি না আসেন তার যাকে পছন্দ, যাকে তিনি নির্দিষ্ট করে দেন তাতেই বিএনপি রাজি থাকবে।

জানা গেছে, দলের জ্যেষ্ঠ স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবির মধ্যে যে তিন বছরের ছোট সরকারে বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা খন্দকার মোশাররফের জানার বাইরে। সিনিয়র স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে তার সাথে পুরো বিষয়টি বিএনপি সরাসরি আলোচনা করবে। এ জন্য দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসও চিকিৎসার নামে সিঙ্গাপুর গেছেন। মির্জা আব্বাসের সাথে স্ত্রী আফরোজা আব্বাসও রয়েছেন। তারা দুজনই সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন।

বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ও মির্জা আব্বাসের ব্যক্তিগত চিকিৎসক মো. রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পরিপাকতন্ত্রের জটিলতায় ভুগছেন মির্জা আব্বাস। তার হূদরোগের ঝুঁকিও আছে। ইতঃপূর্বে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন। তারই ফলোআপসহ সেখানে আফরোজা আব্বাসের কিছু শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, ছোট সরকারের রূপরেখা নিয়ে তারেক রহমানের বিশেষ মাধ্যম ও মোশাররফসহ শীর্ষ নেতাদের বৈঠক হবে। দলের আরো দু’-একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য ও তিনজন ভাইস চেয়ারম্যানও সিঙ্গাপুরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সরাসরি বৈঠকের মাধ্যমে ছোট সরকারে কী এজেন্ডা বাস্তবায়ন হবে তা চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ধারণা করা হচ্ছে, কূটনৈতিক পলিসি ও কিছু দেশের গুরুত্বপূর্ণ দূতের সাথেও বৈঠক হতে পারে।

ওই সূত্রের ভাষ্য, বিএনপির হাতে আপাতত তিনটি এজেন্ডা রয়েছে। প্রথমত, তিন বছরের সরকারের মাধ্যমে তারা দেশের স্থায়ী নির্বাচনি ব্যবস্থা ঠিক করবেন। যাতে এরপর সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের সব জনগণ ভোট প্রয়োগ করতে পারে। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনে দলীয় অবস্থান ও হস্তক্ষেপ মুক্তকরণ। তৃতীয়ত, পরবর্তীতে সরকারের গঠনের পর রাষ্ট্র কিছু জরুরি প্রস্তাব রেখে যাবে ছোট সরকার, সেখানে আইন আদালত সংস্কার, সংবিধানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিবর্তন— এগুলো বিএনপির ছোট সরকারের মাধ্যমে প্রস্তাব হিসেবে চূড়ান্ত করে রেখে যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রটি বলছে, পর্দার আড়ালে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে ১০ জন, বিএনপির পক্ষ থেকে পাঁচজন, অন্য দল থেকে তিন-দুই-এক হারে প্রস্তাবনা আসে। প্রাথমিকভাবে বিএনপি আওয়ামী লীগের বৃহৎ সংখ্যায় কোনোভাবেই রাজি হচ্ছে না। এ বিষয়গুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক মিশনগুলোও যুক্ত রয়েছে, তারা আগামী নির্বাচনে দেশে কোনোভাবেই সংঘাত সহিংসতা চাচ্ছে না। সব দলকে সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচন বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে কূটনৈতিক মিশনেও স্নায়ু লড়াই চলছে, যুক্তরাষ্ট্র একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার চাচ্ছে। অন্যদিকে চীন, রাশিয়া, ভারত ক্ষমতাসীন সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। সব মিলিয়ে দেশে আগামীতে একটি অনিশ্চিত অবস্থা যে তৈরি হচ্ছে তা দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষদের কাছে স্পষ্ট।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে দলের নীতিনির্ধারণী এক শীর্ষ নেতা আমার সংবাদকে বলেন, ‘বিএনপিতে এখন এটি প্রায় চূড়ান্ত। তত্ত্বাবধায়ক সরকার হচ্ছে না। তিন বছরের জন্য একটি ছোট সরকার আসবে। সেখানে আওয়ামী লীগের কিছু প্রস্তাব রয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে বিএনপির সিদ্ধান্তগুলো সমন্বয় করা হবে। ছোট সরকারে আপাতত বিএনপি তিনটি এজেন্ডা ঠিক করেছে। আরো কিছু যুক্ত হতে পারে। কে হবেন প্রধান— তা এখনো ঠিক করা হয়নি। তবে ড. ইউনূস যদি আসেন ভালো, আর না হয় তিনি যাকে পছন্দ করে দেন, তার বাইরে যাবে না বিএনপি।’

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, ‘আগামীতে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। গণতন্ত্রবিরোধী সরকার আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। কী পরিস্থিতি তৈরি হবে তা এখনি বলা যাচ্ছে না।’

Share this post

PinIt
scroll to top