দেশের তথ্য ডেস্ক: চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য দেশকে প্রস্তুত করতে চাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আরও দূরে। এক সময় বাংলাদেশ চাঁদে যাবে, উড়োজাহাজ বানাবে, এমন স্বপ্নও দেখছেন তিনি।
রোববার সকালে সরকার প্রধান তার কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ ২০২৩-২৪ এর নির্বাচিত ফেলোদের পুরস্কার তুলে দেওয়ার অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে কথা বলেন।
শিক্ষার্থীদেরকে অর্থের দিকে না ছুটে জ্ঞানার্জনে মনোনিবেশ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “কোনো ধন সম্পদ কাজে আসবে না, একটা জিনিস কাজে আসবে সেটা হচ্ছে শিক্ষা।
বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে শিক্ষায় জোর দিয়ে তার সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা অনেকগুলো বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি, অনেকগুলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। এমনকি এভিয়েশনের অধীনে অ্যারোনটিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি।
এক সময় আমরাও তো চাঁদে যাব, এরোপ্লেন বানাব। সেই চিন্তাটা মাথায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয়টা বানিয়েছি, এমনকি অ্যারোনটিক্যাল সেন্টারও করে দিয়েছি। আমাদের সরকার শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সামনে রেখে প্রস্তুতি নেওয়ারও তাগিদ দেন সরকার প্রধান। বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আসবে, সেজন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে।
বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যাবে। আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না। বিভিন্ন দিকে গবেষণা গুরুত্ব দিচ্ছি, স্বাস্থ্য খাতটাতে কিছুটা পিছিয়ে আছি। আরও বেশি গবেষণার ক্ষেত্রে আমাদের আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আরও বেশি গবেষণা দরকার সে অনুযায়ী গুরুত্ব দিচ্ছি। দক্ষ প্রশিক্ষিত জনবল দরকার।
স্মার্ট সমাজের জন্য স্মার্ট জনশক্তি গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “৪১ এর বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ, এখানে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলব। আমরা স্মার্ট পপুলেশন, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট এগ্রিকালচার, স্মার্ট জনশক্তি স্মার্ট সোসাইটি হবে।”
আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৪ বছরে বাংলাদেশের সব দিক দিয়ে এগিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “তখন কী ছিল, এখন পর্যন্ত কী পরিবর্তন এসেছে, শিক্ষা দীক্ষায় কী করতে পেরেছি দেখুন।পেরেছি এই কারণে যে, নিজের দেশটাকে জানতে হবে, অনুভব করতে হয়। প্রকৃতির কাছ থেকেও জানতে হয়, প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে জানাটা দিয়ে উন্নয়ন করলে তা গণমুখী হবে, মানুষের জন্য কিছু হবে।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যান কেবল বিদেশে থাকা দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বেঁচে গেলেও সে সময় দুই বোনের পড়ালেখায় ব্যাঘ্যাত ঘটায় আক্ষেপ ঝরে পড়ে শেখ হাসিনার কণ্ঠে।
তিনি বলেন, আমি এবং আমার ছোট বোন রেহানা পড়া শেষ করতে পারিনি। ছোটবেলা থেকে আমাদের বাবা বারবার জেলে গেছেন, আমাদেরও পড়ার ব্যাঘাত ঘটেছে।১৯৭৫ সালে আমি মাস্টার্সে পড়ছি, রেহানা তখন গার্লস কলেজে ইন্টারমেডিয়েট পড়ে, তাকে আমি সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম লন্ডনে, ফিরতে পারলাম না। পড়াশোনা শেষ করতে পারলাম না। এরপরে অনেক অনারারি ডিগ্রি পেয়েছি, সেটা তো আর মূল পড়াশোনা না।
ফেলোদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছি। ফিরে এসে তারা দেশকে কী দেবে, কতটুকু দেবে বা দিতে পারবে সেই বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে। এই দেশের সাধারণ মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম সেটাই বড় কথা। আমি মনে করি আমাদের মেধাবী ছেলেমেয়েরা আলোকবর্তিকা হয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আলোর পথ দেখিয়ে যাবে।”
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা এবং সে সময় সংসদে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পক্ষ থেকে এর সমালোচনার বিষয়টিও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, আমি যখন প্রথম সংসদে বলেছিলাম যে আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, তখন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না। আমরা কি বিদেশে কাছে হাত পেতে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে খাব, নাকি মর্যাদা সাথে চলব? খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে এটা হল বড় কথা।#