কক্সবাজারে বন্যায় মোট ১২ জনের মৃত্যু, ক্ষতি এক কোটি ৪০ লাখ টাকা

cox-bazar-10082023-02.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক:- 

কক্সবাজারে পানি কমে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। এদিকে, আজ বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) সকালে পেকুয়া ও চকরিয়ার বিভিন্ন স্থান থেকে পানিতে ভেসে যাওয়া চার জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

জানা গেছে, কক্সবাজারে ৬০ ইউনিয়নে চার লাখ ৮০ হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জেলা প্রশাসনের হিসাব মতে, প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি এক কোটি ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের ফেরাংগি পাড়া এলাকা থেকে বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ দুই শিশুসহ তিন শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

তারা হলো- উজানটিয়া ইউনিয়নের নুরুল আলমের মেয়ে তাহিদা বেগম (১০) ও আমির হোসেন (৫) ও একই এলাকার সাবের আহমদের মেয়ে হুমায়রা বেগম (৮)। উদ্ধার হওয়া শিশুরা মঙ্গলবার সকালে মাতামুহুরী নদীর ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ ছিল। এ ছাড়া চকরিয়া উপজেলার খুটাখালীত বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়া অজ্ঞাত একজনের লাশ লাশ উদ্ধার করেছে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান জানান, বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও এখনও নিম্নাঞ্চলের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে পানি রয়েছে। পুরোপুরি নেমে গেলে বন্যার পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা যাবে।

এদিকে, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর চকরিয়ায় ‘বন্যার পানিতে’ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়া সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে গিয়ে গ্যাসের বিষক্রিয়ায় এক বাবা ও তার দুই সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাত ১১টায় চকরিয়া উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের বহদ্দারকাটা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানান চকরিয়া থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ।

তারা হলেন- চকরিয়ার বিএমচর ইউনিয়নের বহদ্দারকাটা এলাকার আনোয়ার হোসেনের (৭৮) ও তার ছেলে শাহাদাত হোসেন (৫০) এবং শহীদুল ইসলাম (২২)।

ওসি জাবেদ মাহমুদ জানান, গত কয়েকদিন ধরে ভারী বর্ষণে উজানের ঢলে চকরিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে চকরিয়া উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের বহদ্দারকাটা এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেনের বসতভিটাও বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ঘটনায় তার বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে পানি ঢুকে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বুধবার রাতে বসতভিটা থেকে পানি নেমে যাওয়ায় আনোয়ার হোসেনের দুই ছেলে পরিষ্কার করতে নামেন। এতে গ্যাসের বিষক্রিয়ায় ট্যাংকের ভেতরে দুই ভাই অবচেতন হয়ে পড়েন। এ সময় উদ্ধার করতে নেমে তাদের বাবাও অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকালে আনোয়ারও মারা যায়। এ নিয়ে বন্যায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে, আগের পাঁচ দিন ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা কক্সবাজারে পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বুধবার থেকে বৃষ্টি কমায় বাসাবাড়ি, রাস্তাঘাট থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে নিচু এলাকায় অবস্থিত কিছু কিছু বাড়িঘর ও এলাকা ডুবে রয়েছে। দুর্গত এলাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছে। ফসলি মাঠ ও সড়ক জনপদ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষয়-ক্ষতি পরিমাণ এখনও নিরূপণ করেনি। বন্যার পানি অধিকাংশ এলাকার নেমে আসায় দুর্গত মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাধারণ) বিভীষণ কান্তি দাশ জানান, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারে ৬০ ইউনিয়নে চার লাখ ৮০ হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ভূমিধস ও পানিতে ডুবে মারা গেছেন ১২ জন। বন্যা দুর্গত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের ৯ লাখ নগদ টাকা ও ৮৩ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। বন্যায় প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি এক কোটি ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

উল্লেখ্য, চকরিয়া উপজেলার কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর, বরইতলী, হারবাং, পূর্ববড় ভেওলা, বিএমচর, পশ্চিম বড়ো ভেওলা, চিরিঙ্গা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, ফাসিয়াখালী, চকরিয়া পৌরসভা, পেকুয়া সদর ইউনিয়ন, রামু উপজেলার গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, কাউয়ার রাজারকুল ইউনিয়নের বেশিরভাগ গ্রামে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে।

Share this post

PinIt
scroll to top