দেশের তথ্য ডেস্ক ঢাকা প্রতিনিধি :- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকায় গত বুধবার ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী জড়িত থাকলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টায় ঢাবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে তিনি এ কথা বলেন।
সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘গতকাল অনেকগুলো ছাত্র সংগঠনের কর্মসূচি ছিল, শিক্ষার্থীদের একটি কর্মসূচি ছিল। ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার পায়তারার প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি ছিল।
তারা (গণ অধিকার পরিষদ) এক ধরনের উপযাজক হয়ে এক ধরনের নাটকীয় পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করেছে বলে আমরা মনে করি। সার্বিকভাবে ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনাটি তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশই হোক কিংবা আনুষঙ্গিক অন্য ঘটনা হোক, ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত, অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক। অতি উৎসাহী হয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কোনো পর্যায়ের কোনো কর্মী যদি এতে জড়িত থাকে তবে সেটি অবশ্যই আমরা খতিয়ে দেখব।
খতিয়ে দেখার সাপেক্ষে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
ঘটনাটি গণ অধিকার পরিষদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ দাবি করে সাদ্দাম বলেন, ‘যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি আসলে গত কয়েক দিন ধরে ছাত্র অধিকার পরিষদ ও গণ অধিকার পরিষদের অভ্যন্তরে যে সাংগঠনিক চাপানুকুল চলছে সেটির একটি বহিঃপ্রকাশ কি না তা একটি বিবেচনা যোগ্য বিষয়। বিশেষ করে যখন নুরুল হক নুরের আর্থিক স্বচ্ছতার বিষয়ে প্রশ্নটি সামনে এসেছে, কাউন্সিলের বৈধতা-অবৈধতার বিষয়টি যখন সামনে এসেছে, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি নিয়ে অনেকগুলো প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, সাংগঠনিক স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়টি সামনে এসেছে এবং কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের এক যোগে পদত্যাগ করার বিষয়টি এসেছে, ছাত্র অধিকার পরিষদে যারা রয়েছে তারা গণ অধিকার পরিষদের সদস্য পদ গ্রহণ করবে কি না, যেটি আসলে ছাত্র রাজনীতির কোনো সংগঠনের চরিত্রের মধ্যেই নেই যে যারা একটি ছাত্র সংগঠনের দায়িত্ব রয়েছে, তারা মূল সংগঠনের সদস্য পদে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। সার্বিকভাবে এই প্রশ্নগুলোকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বিভিন্ন বলয়, উপদলীয় কোন্দল তৈরি হয়েছে, এটি তার একটি বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করি।
কারণ আমরা তাদের পার্টি অফিসে মারামারি দেখেছি, এর বাইরেও তারা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটিয়েছে। সেই পরিপেক্ষিতে আমি মনে করি যে গতকালকের এই ঘটনাটি ঘটেছে।’
ছাত্রলীগের নেতাকর্মী হামলায় জড়িত থাকার বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘এটি যেহেতু মীমাংসিত কোনো বিষয় নয় যে কারা জড়িত এবং ঘটনাটি নিয়ে আমাদের নিজস্ব বিচার-বিশ্লেষণ রয়েছে। অন্যরাও মনে করছে, যখন কোনো ইমেজ সংকটে থাকে তখন তার (নুরের) মার খাওয়া বা এ ধরনের ঘটনাগুলো সব সময় ঘটে। এর আগেও আমরা দেখেছি ডাকসুর পদে থাকার সময়, গণ অধিকার পরিষদের দায়িত্ব নেওয়ার সময়, আবার নতুন করে সভাপতি পদে আসীন হওয়ার সময়, যখনই তিনি নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন, যখনই তার আর্থিক স্বচ্ছলতা নিয়ে প্রশ্ন এসেছে, সংগঠনের টাকা নিজের ব্যাংকে নেওয়ার প্রশ্নটি এসেছে, মানুষের কাছ থেকে বিকাশ-রকেট-নগদে টাকা নেওয়া, নিজের অসুস্থতার কথা বলে, কখনো কিডনি নষ্ট হওয়ার কথা বলে, প্রবাসী অধিকার পরিষদের থেকে টাকা নেওয়া।
যখনই এ প্রশ্নগুলো এসেছে, তাদের সংগঠনের অভ্যন্তরের কেউ না কেউ প্রশ্ন তুলেছে, বহিষ্কার পাল্টাবহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে, তখনই এই নাটকীয়তার ঘটনাগুলো ঘটছে বলে আমরা দেখছি। সে কারণে একজন সচেতন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি, এ ঘটনাগুলো বিচার-বিশ্লেষণ আলোচনার যোগ্য এবং সেই আলোকেই পরবর্তীতে আমরা বলতে পারব। তাদের অভ্যন্তরীণ যে রেষারেষির ঘটনা, যে কোন্দলের ঘটনা, এই বিষয়গুলো আমি মনে করি তদন্ত করে দেখা উচিত যে তারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তাদের নিজেদের দুর্বলতা গুলি অন্যদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে কি না।’
ইমেজ সংকট তৈরি হওয়ায় নুর মার খেতে এসেছে—এমন ফাঁদে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পা দিয়ে তাকে মারধর করেছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘কয়দিন আগে আমরা দেখেছি, তাদের পার্টি অফিসে কিভাবে নিজের শার্ট নিজে খুলে ফেলে, অন্ধকারের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে, এই বিষয়টি কৃত্রিমভাবে মানুষের কাছে তুলে ধরার তাড়না সব সময় তার নিজের মধ্যে ছিল বলে আমরা দেখেছি। আমরা বলতে চাই কেউ যদি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে অতি উৎসাহী হয়ে কোনো ঘটনার সঙ্গে জড়ায় তাহলে সে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব এবং খতিয়ে দেখার সাপেক্ষে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’