দেশের তথ্য ডেস্ক খুলনা প্রতিনিধি :- আবহাওয়া যদি অনুকূলে থাকলে তাহলে এ বছর মেট্রোসহ খুলনা জেলার নয়টি উপজেলায় রোপা আমন আবাদে কাক্সিক্ষত ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। আর এমনটা আশা করছেন কৃষি অধিদপ্তরে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। ইতোমধ্যে স্ব-স্ব উপজেলায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকরা বীজতলা তৈরি করে ধানের বীজ বপণও করেছেন।
কৃষি দপ্তরের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ বছরে খুলনা মেট্রোসহ জেলার নয় উপজেলায় ৯৩ হাজার ১৮৫ হেক্টের জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর এর বিপরীতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৯৩ মেট্রিক টন। ২০২৩-২৪ খুলনা মেট্রোসহ জেলার নয় উপজেলায় ৯৩ হাজার ১৮৫ হেক্টের জমিতে রোপা আমন আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে খুলনার রূপসায় ৩ হাজার ৮৮৫ হেক্টর, বটিয়াঘাটায় ১৭ হাজার ৬০০ হেক্টর, দিঘলিয়ায় ১ হাজার ৯৯৫ হেক্টর, ফুলতলায় ১ হাজার ৪৩০ হেক্টর, ডুমুরিয়ায় ১৫ হাজার ৯৫০ হেক্টর, তেরখাদায় ৯১৫ হেক্টর, দাকোপে ১৮ হাজার ৯১৭ হেক্টর, পাইকগাছায় ১৭ হাজার ২৫ হেক্টর, কয়রায় ১৫ হাজার ১০ হেক্টর, মেট্রো এলাকার দৌলতপুরে ৫০ হেক্টর ও লবণচরা থানায় ১৮০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ করা হয়েছে।
অপর দিকে, রোপা আমন আবাদে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৯৩ মেট্রিক টন। এর মধ্যে লবণচরায় ৫১৫ মেট্রিক টন, রূপসায় ১১ হাজার ৫২৫ মেট্রিক টন, বটিয়াঘাটায় ৪০ হাজার ১৩০ মেট্রিক টন, দিঘলিয়ায় ৬ হাজার ৩ মেট্রিক টন, ফুলতলায় ৪ হাজার ১০৭৪ মেট্রিক টন, ডুমুরিয়ায় ৪৮ হাজার ৯০১ মেট্রিক টন, তেরখাদায় ২ হাজার ৭৭৯ মেট্রিক টন, দাকোপে ৫৫ হাজার ২১৯ মেট্রিক টন, পাইকগাছায় ৫৭ হাজার ২১৪ মেট্রিক টন ও কয়রা উপজেলায় ৪৯ হাজার ৮৩ মেট্রিক টন ধরা হয়েছে।
উলেখ্য, গত ২০২২-২৩ খুলনা মেট্রোসহ জেলা নয় উপজেলায় ৯৩ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের বিপরীতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯৩ হাজার ১৭০ মেট্রিক টন। গেল ২০২১-২০২২ খুলনা মেট্রোসহ নয় উপজেলায় ৯৩ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদের বিপরীতে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ৯৩ হাজার ১৭০ মেট্রিক টন।
রূপসার নৈহাটী ইউনিয়নের ইলাইপুর গ্রামের চাষি বিশ্বজিৎ পাল বলেন, রোপা আমনের বাম্পার ফলন আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বীজতলা তৈরি করা হয়ে গেছে।
বাগমারা গ্রামের চাষি খোরশেদ আলম বলেন, রোপা আমনের ফলন এ বছর ভালো আশা করা হচ্ছে। একই গ্রামের কৃষক মোঃ ওমর আলী শেখ বলেন, রোপা আমনের ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা’র উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় তাহলে রোপা আমন আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা হয়তো পূরণ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষকরা বীজতলা প্রস্তুত করছে। এ বছর রোপা আমন আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে উৎপাদনের (চাল) লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ ফরিদুজ্জামান বলেন, রূপসায় রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০৫ হেক্টর। ইতো মধ্যে ২০৫ হেক্টর জমির বীজতলা প্রস্তুত হয়ে গেছে। তবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বীজতলা হয়তো আরো বাড়াতে হতে পারে। তিনি আরো বলেন, অত্র উপজেলায় এ বছর রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৮৫ হেক্টর। ইতোমধ্যে আড়াইশ’ হেক্টর জমিতে আবাদ করা গেছে। তিনি বলেন, আবহাওয়া যদি অনুকূলে থাকে তাহলে রোপা আমনের বাম্পার ফলন আশা করা যাচ্ছে। এছাড়া পোকা-মাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়মিত মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পাশে থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে। কৃষকদের সাথে উঠান বৈঠক করা হচ্ছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার ইনসদ ইবনে আমিন এ বলেন, রোপা আমন আবাদে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৯৫০ হেক্টর। ইতোমধ্যে এক হাজার হেক্টর জমির বীজতলা প্রস্তুত করা হয়েছে। আবার বেশকিছু জায়গায় রোপণও করা হয়ে গেছে। তবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যদি কম থাকে তাহলে সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ৬৫/৭৫ ভাগ জমিতে রোপণ হয়ে যাবে। প্রতিবছর এ উপজেলায় রোপা আমন আবাদের ফলে ৭৫ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়ে যাকে। তিনি বলেন, বিরি-৭৫৮৭ জাতের ধানের আবাদ করতে কৃষকদের বেশি বেশি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। কারণ স্বল্পকালীন সময়ের মধ্যে জমিতে এই জাতের ধান পাকা শুরু করে। ধান কর্তনের পরপরই সরিষা চাষ করা যাবে। এতে সরিষার তেল উৎপাদন হবে, কৃষক লাভবান হবে।
দাকোপ উপজেলা কৃষি অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে কাক্সিক্ষত ফলন আশা করছেন তিনি। তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে দাকোপে ১৫ হাজার ৩২৫ হেক্টর জমির বীজতলা প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে উৎপাদন আরো দুই হাজার মেট্রিক টন বেশি হবে এমনটা আশা করছেন তিনি।
ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা গ্রামের কৃষক অরিন্দম মলিক বলেন, রোপা আমনের আবাদ কার্যক্রম ভালোভাবে চলছে। এছাড়া আগে যেমন প্রচন্ড খরার ভাব ছিলো এখন কিন্তু খরার সেই ভাব অনেক কমে গেছে। এতে আশা করা যাচ্ছে রোপা আমনের আবাদ ভালো হবে। উপজেলায় রোপা আমন আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এতে আবাদ শতভাগ পূর্ণ হবে অর্থাৎ, কাক্সিক্ষত চাল উৎপাদন হবে। তিনি বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আগে সারের পেছনে মানুষকে দৌড়াতে হতো, এখন কিন্তু সারের পেছনে মানুষ দৌড়ায়। নিজ নিজ এলাকায় এখন সার সরবাহ করা হচ্ছে। সরকারি রেটে সার ক্রয়-বিক্রয় চলছে। তবে যে সারের কোনো কার্যকারিতা নেই, এমন কোনো তথ্য পেলে সেই ব্যবসায়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কৃষক লীগ নেতৃবৃন্দ সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সাথে নিয়ে কঠোর ভূমিকা নিবে। যেটা বিগত বছরে করেছি।
দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কিশোর আহমেদ বলেন, রোপা আমনের আবাদে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা পূরণ হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে তিন হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলা প্রস্তুত করা হয়ে গেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ যদি না হয়, তাহলে রোপা আমনের বাম্পার ফলন আশা করছেন তিনি।