দেশের তথ্য ডেস্ক :- বেসরকারি খাতের সাত ব্যাংককে টেকসই ব্যাংকের মর্যাদা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই তালিকায় রয়েছে চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানও। ২০২২ সাল থেকে সাসটেইনেবল রেটিং প্রকাশ করে আসছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। শুরুর দুই বছর অর্থাৎ ২০২০ ও ২০২১ সালে ১০টি ব্যাংক ও পাঁচটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই তালিকায় স্থান পেয়েছিল। কিন্তু এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের চারটি সূচক পূরণ করতে পেরেছে মাত্র সাত ব্যাংক ও চার আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তাই এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে শীর্ষ রেটিং দেয়া হয়েছে। গত ২০২১ সালে তালিকায় স্থান পাওয়া আটটি ব্যাংক এবারের রেটিংয়ে বাদ পড়েছে। একই সঙ্গে বাদ পড়েছে গতবারের তালিকার দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
২০২২ সালের সাসটেইনেবল রেটিংয়ে শীর্ষ সাতে থাকা ব্যাংকগুলো হলো— ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, যমুনা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড, ট্রাস্ট ব্যাংক ও ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংক। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক ও দ্য সিটি ব্যাংক ছাড়া বাকি ব্যাংকগুলো নতুন করে শীর্ষ সাতে স্থান পেয়েছে। আর ২০২১ সালের সাসটেইনেবল রেটিংয়ে শীর্ষ দশে থাকা— ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড, ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড এবার বাদ পড়েছে। তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল রেটিংয়ের শীর্ষ স্থান পেয়ে আনন্দিত বলে জানিয়েছেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন। তিনি বলেন, টানা তিন বছরই টেকসই ব্যাংক হিসেবে সিটি ব্যাংক রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সব বিবেচনায় সটি ব্যাংক ভালো করেছে। এ অর্জন আমাদের জন্য আনন্দের। মূলত চারটি সূচকের ওপর ভিত্তি করে এই মান যাচাই করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। টেকসই অর্থায়ন নির্দেশক (সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ইন্ডিকেটর), সবুজ পুনঃঅর্থায়ন (গ্রিন রিফাইন্যান্স), সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম (সিএসআর) ও মূল ব্যাংকিং কার্যক্রমের টেকসই সক্ষমতা (কোর ব্যাংকিং সাসটেইনেবিলিটি)।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের রেটিংয়ের আওতায় বেশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এসেছিল। তাই বেশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেয়া হয়েছিল। এবার সাত ব্যাংক ও চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রেটিংয়ের আওতায় আসতে পেরেছে। তাই এদের দেয়া হয়েছে। আমাদের কোনো নির্ধারতি সংখ্যা নেই। কতটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে দেবো। যারা বাংলাদেশ ব্যাংকের রেটিংয়ের সূচক পূরণ করতে পারবে, তারাই শীর্ষে চলে আসবে। এদিকে সাসটেইনেবল রেটিংয়ে শীর্ষ চার আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলো— অগ্রণী এসএমই ফাইন্যান্সিং কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেড, আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড ও লঙ্কান অ্যালায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল রেটিংয়ের শীর্ষ স্থানে জায়গায় পেয়ে উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কায়সার হামিদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স গত কয়েক বছর ধরে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব ব্যবসা করে যাচ্ছে। সেই কাজের রেজাল্টও আমরা পাচ্ছি। এ ধরনের অর্জন আরও অনুপ্রাণিত করবে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগ থেকে দেশের সব তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স পলিসির নির্দেশনা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) ভিত্তিতে সাসটেইনেবিলিটি রেটিং প্রণয়নের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছিল। ওই প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনার আলোকে গত ২০২১ সালের আগস্টে প্রথমবারের মতো সাসটেইনেবল রেটিং-২০২০-এর শীর্ষ ১০ ব্যাংক ও পাঁচ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করা হয়।
রেটিংয়ের ক্ষেত্রে মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার হয়েছে টেকসই অর্থায়ন নির্দেশক, সবুজ পুনঃঅর্থায়ন, সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম ও মূল ব্যাংকিং কার্যক্রমের টেকসই সক্ষমতা। এর মধ্যে টেকসই অর্থায়ন নির্দেশকের ক্ষেত্রে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সবুজ অর্থায়ন, ঋণগ্রহীতার সংখ্যা, গ্রামীণ অর্থায়ন, নারী ঋণগ্রহীতার সংখ্যা, কৃষিতে টেকসই অর্থায়ন, সবুজ অর্থায়নের ক্যাটাগরি ও প্রকল্পের পরিমাণ, ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন, টেকসই অর্থায়নের ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সবুজ ব্যাংকিংয়ের চর্চাকেও এ মানদণ্ডে অন্যতম নির্ধারক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল ব্যাংকিং কার্যক্রমের টেকসই সক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়েছে মোট খেলাপি ঋণের হার, ঝুঁকি বারিত সম্পদের বিপরীতে মূলধনের অনুপাত, লিক্যুইডিটি কাভারেজ রেশিও, নিট স্টেবল ফান্ডিং রেশিও, কোর রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট, সম্পদের বিপরীতে আয়, ইক্যুইটির বিপরীতে আয়, নিট ইন্টারেস্ট মার্জিন ও এফিশিয়েন্সি রেশিওর মতো বিষয়গুলোর ভিত্তিতে। সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ও জলবায়ু ঝুঁকি তহবিলের অনুদানের অর্থ ব্যয়ের মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় এসেছে। পাশাপাশি সবুজ পুনঃঅর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর পারফরম্যান্স বিবেচনা করা হয়েছে বার্ষিক পুনঃঅর্থায়নের হার, খাত ও পণ্যভিত্তিক পুনঃঅর্থায়নের পাশাপাশি গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ডের ডলার ও ইউরো কম্পোনেন্টের ভিত্তিতে।
উল্লেখ্য, দেশে কার্যরত ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি। আর সক্রিয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩৪টি। এর মধ্যে মাত্র সাতটি ব্যাংক ও চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টেকসই কার্যক্রম পুরো খাতের জন্য হতাশাজনক বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।