সরকারের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’র অভিযোগ টাঙ্গুয়ার হাওড়ে আসা বুয়েটের ২৬ শিক্ষার্থীসহ গ্রেফতার ৩৪

tangua.jpg

সরকারের বিরুদ্ধে ‘গোপন ষড়যন্ত্র ও জননিরাপত্তা বিঘিœত করার আশঙ্কায়’ ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওড়ে বেড়াতে গিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২৬ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩৪ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে তাঁদের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে।
রবিবার বিকেলে উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের নতুন বাজার পাটলাই নদী দিয়ে ট্যাকেরঘাট পর্যটন এলাকায় যাওয়ার পথে তাদের আটক করা হয়। সোমবার পুলিশ বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাইদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

পুলিশের দাবি, গ্রেফতার ব্যক্তিরা ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা হাওড়ে বেড়ানোর অসিলায় এখানে গোপন বৈঠক ও সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র করতে এসেছেন। জননিরাপত্তা বিঘিœত ও মানুষের জানমালের ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্য ছিল তাঁদের।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, এসব শিক্ষার্থী গতকাল রবিবার সকালে তাহিরপুর উপজেলা আসেন। সেখান থেকে একটি হাউসবোট নিয়ে তাঁরা টাঙ্গুয়ার হাওরে যান। তাঁরা হাউসবোট নিয়ে দিনভর হাওড়ে ঘোরেন। বিকেলে হাওড়ের উত্তর পাড়ে সীমান্তবর্তী টেকেরঘাট এলাকায় যাওয়ার পথে পুলিশ দু’টি স্পিডবোটে গিয়ে তাঁদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। রবিবার বিকেল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত থানা-পুলিশের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও এ বিষয়ে পুলিশ কোনো তথ্য জানায়নি।

তবে এ ব্যাপারে একজন পুলিশ কর্মকর্তা সোমবার বিকেলে মুঠোফোনে জানান, আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ যাচাই-বাছাই করতে পুলিশের সময় লেগেছে। অভিযোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তাঁরা সবাই ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুক্ত এবং সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতেই এখানে এসেছেন। যাতে কেউ সন্দেহ না করে এ জন্য তাঁরা বেড়ানোর ছলে হাওড়ে এসেছেন।

সোমবার দুপুরে করা মামলার বাদী হয়েছেন তাহিরপুর থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ রাশেদুল কবির। গ্রেফতার শিক্ষার্থীদের ২৪ জনই বুয়েটের। অন্যরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন খুলনার সিদ্দিক হেলালের ছেলে আনোয়ারুল­াহ সিদ্দিকী (২৮), বাগেরহাটের সেকান্দার আলীর ছেলে মোঃ বাকি বিল­াহ (২৮), শওকত আলীর ছেলে তাজিমুর রাফি (২০) ও হায়াত আলীর ছেলে তানিমুল ইসলাম, মাগুরার আলতাফ হোসেনের ছেলে মোঃ সাইখ সাদিক (২১), সাতক্ষীরার ওবায়দুল­াহর ছেলে খালিদ আম্মার (২১), কুষ্টিয়ার মোসাদ্দেক হোসেনের ছেলে মোঃ মাহমুদ হাসান (২৫), চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের মান্দারখিল গ্রামের আনোয়ারুল হকের ছেলে বুয়েটের মেটেরিয়ালস এ্যান্ড মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আফিফ আনোয়ার (২৪), টাঙ্গাইলের সখিপুর থানার তক্তারচয়ালা গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে বখতিয়ার নাফিস (২৪), ঢাকার আবুল কালাম আজাদের ছেলে ইসমাইল ইবনে আজাদ (২১), চাঁদপুরের সালেহ আহম্মেদের ছেলে সাব্বির আহম্মেদ (২১), চট্টগ্রামের আব্দুল কাইয়ুমের ছেলে মোঃ সাদ আদনান অপি (২২), জামালপুরের সেলিম সরকারের ছেলে মোঃ শামীম আল রাজি (২০), নওগাঁর আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে মোঃ আব্দুল­াহ আল মুকিত (২৩), শেরপুরের ফজলুল হক শাহিনের ছেলে মোঃ জায়িম সরকার (২১), ফেনীর মাহবুবুল হকের ছেলে হাইছাম বিন মাহবুব (২৫), চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাইমুল হকের ছেলে মাহমুদুর হাসান (২২), রাজশাহীর এন্তাজুল হকের ছেলে মোঃ ফাহাদুল ইসলাম (২৩) ও ওমর ফারুকের ছেলে তানভির আরাফাত ফাহিম (২১), ঢাকার এফ এম আনিছুর রহমানের ছেলে এ টি এম আবরার মুহতাদী (২১), পাবনার মাছুদুর রহমানের ছেলে মোঃ ফয়সাল হাবিব (২০), চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মতিউর রহমানের ছেলে আব্দুল বারি (২৪), কুমিল­ার মিজানুর রহমানের ছেলে মাহাদি হাসান (২৩), নারায়ণগঞ্জের এ এম এম মুছার ছেলে আলী আম্মার মৌয়াজ (২৫), সিরাজগঞ্জের হায়দার আলীর ছেলে টি এম তানভির হোসেন (২৬), ভোলার রফিকুল ইসলামের ছেলে মোঃ রাশেদ রায়হান (২৪), নোয়াখালীর জামাল উদ্দিনের ছেলে সাকিব শাহরিয়ার (২৩), নীলফামারীর সুলতান আলীর ছেলে ফায়েজ উস সোয়াইব (২৪), নোয়াখালীর মোখলেছুর রহমানের ছেলে আব্দুর রাফি (২৫), চট্টগ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে আশ্রাফ আলী (২৫), কুমিল­ার ফজলুল হকের ছেলে মোঃ এহসানুল হক (২৪), চট্টগ্রামের আব্দুস শুক্কুরের ছেলে মাঈন উদ্দিন (২৪), টাঙ্গাইলের আবু হানিফের ছেলে রাইয়ান আহম্মেদ সাজিদ, ঢাকার আবেদ আলীর ছেলে মোঃ আব্দুল­াহ মিয়া (১৮)। এদের মধ্যে ২৬ জন বুয়েটের ছাত্র।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মোমতাজুল হাসান আবেদ বলেন, এসব শিক্ষার্থীকে আটকের পর ঢাকা থেকে জানানো হয়, এখানে তাঁদের সংগঠনের দু-একজন কর্মী আছেন। তাঁরা হাওরে বেড়াতে এসেছিলেন। কিন্তু রোববার বিকেল থেকে যোগাযোগ করেও তাঁদের সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা যায়নি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সাঈদ ঢাকা থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরে আসা বুয়েটসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩৪ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার ও তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, পুলিশ সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাঁদের গ্রেফতার করেছে।

Share this post

PinIt
scroll to top