চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফরকে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছে বিএনপি। সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় দলের নেতাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, পশ্চিমা রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের এবারের সফর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভালো প্রভাব ফেলতে পারে।
দলের কর্মকৌশল প্রণয়নে যুক্ত বিএনপি নেতারা কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, মার্কিন ভিসানীতি চালু হওয়ার পর থেকে বিএনপি চূড়ান্ত আন্দোলনের পথনকশা তৈরি করছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সফরের পর আন্দোলনের গতি বাড়াতে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হতে পারে।ঈদের আগেই দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সরকারবিরোধী এক দফার আন্দোলনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ বিষয়ে দলের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা জানান, এই সপ্তাহে যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দল ও জোটগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের জন্য গঠিত লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকায় বড় সমাবেশ করে এক দফার ঘোষণা দেওয়ারপরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে দলটি। এ মাসের মাঝামাঝি এক দফার ঘোষণা হলেও কর্মসূচি শুরু হতে পারে মাসের শেষে।বিএনপির পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সফর কৌশলগত দিক থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিনিধিদলগুলো সরকারের বাইরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। বিশিষ্টজন ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথোপকথনে বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে প্রতিনিধিদল বার্তা দিয়ে যাবে। তবে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, এই সফর থেকে পশ্চিমা দেশগুলো কী ধরনের কৌশল ঠিক করে তার ওপর ভিত্তি করে বিএনপির পথনকশা চূড়ান্ত করা হবে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের সিদ্ধান্ত যে বাংলাদেশের রাজনীতির ওপর বড় প্রভাব তৈরি করে তা সাম্প্রতিক দুটি ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে গেছে। এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি আরো বলেন, র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণে বিরোধী দলগুলো নির্ভয়ে সভা-সমাবেশ করতে পারছে। গুম-খুন, হামলা-মামলা কমে এসেছে। আর মার্কিন নতুন ভিসানীতি চালু হওয়ার পর যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতও রাজধানীতে সমাবেশ করতে পেরেছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এখন প্রতিনিয়ত আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে আশ্বস্ত করছেন।সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনও সুষ্ঠু হয়েছে ভিসানীতির প্রভাবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের বিষয়ে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে সরকার বেশ চাপে আছে। এমন প্রেক্ষাপটে আমরা কৌশল ঠিক করছি। বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সময়ে সময়ে কৌশলে পরিবর্তন আনতে হয়। সব দিক বিবেচনা করে আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণ করা হবে।’
বছরের পর বছর ধরে চলে আসা হরতাল-অবরোধের মতো সহিংসতার আন্দোলনে যাবে না বিএনপি। তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ, পদযাত্রাসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করছে। এরই ধারাবাহিকতায় অহিংস ব্যতিক্রমী কর্মসূচি নিয়ে এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে চান দলের নীতিনির্ধারকরা।
গত ১ জুলাই গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের পদত্যাগের এক দফার আন্দোলন শিগগিরই ঘোষণা করা হবে। এই আন্দোলনের ধরন ভিন্ন রকম হবে।
বিএনপির কর্মকৌশল প্রণয়নে যুক্ত দলের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন কালের