কয়রা প্রতিনিধিঃ অরবিন্দ কুমার মণ্ডল
মা লক্ষ্মী হলো ধনের দেবী। ধান হলো মা লক্ষ্মীর প্রতীক। চাল, অন্ন, খাদ্যশস্য হলো লক্ষ্মীর প্রতীক। তাই যারা খাদ্য অপচয় করে, তাদের উপরে দেবী লক্ষী কখনোই তুষ্ট হন না। ধান ক্ষেতের আশেপাশে ইঁদুর বা মুষিকের বাস এবং এরা ধানের ক্ষতি করে।
পেচক বা পেঁচার আহার হলো এই ইঁদুর। গোলা ঘরকেই লক্ষ্মীর প্রতীক বলা হয়। গোলা ঘরের আশেপাশ ইঁদুরের বসবাস। পেঁচা এই ইঁদুর খেয়ে খাদ্যশস্য রক্ষা করে। যেহেতু মা লক্ষ্মীর বাহন হলো পেঁচা। তাই গোলাঘরে যে পেঁচা থাকে তাকে লক্ষী পেঁচা বলা হয়।
এ বছর দুই দিন ধরে উদযাপিত হলো কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা। দুর্গা পূজার দশমী পেরুলেই শুরু হয়ে যায় মা লক্ষ্মীকে আহবানের প্রস্তুতি। তবে এবারের দুর্গাপুজোর মতোই লক্ষ্মী পূজাতেও দেখা দিয়েছে গেলো।
আর সেই গেরো হলো সময়ের গেরো। দূর্গা পজার সময় ঠিক কখন অষ্টমী ও নবমী তিথি পড়েছে তাই নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। আর লক্ষী পূজার সংশয় তৈরি হয়েছে পূর্ণিমা নিয়ে। পূর্ণিমা তিথি কখন থেকে শুরু হচ্ছে আর কখন শেষ হচ্ছে সেই নিয়ে মূল সংশয়।
ক্যালেন্ডার বা পঞ্জিকা মতে, এ বছর লক্ষ্মী পূজার লগ্ন দুইদিন ধরে থাকছে। ১৬ ও ১৭ অক্টোবর দুটো দিনকেই লক্ষী পূজার দিন বলে গণ্য করা হয়েছে। তবে জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে, কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার লগ্ন ১৬ অক্টোবর বুধবার থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে।
বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে,১৬ অক্টোবর রাত্র ৮টা ৪১ মিনিটে পূর্ণিমা শুরু হয়ে ১৭ অক্টোবর বিকাল ৪টা ৫৬ মিনিটে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
কোজাগরী শব্দটির উৎপত্তি ‘কো’ জাগতি ও অর্থাৎ কে জেগে আছে কথাটি থেকে। বলা হয় যার কিছু (সম্পত্তি) নেই সে পাওয়ার আশায় জাগে, আর যার আছে (সম্পত্তি) সে না হারানোর আশায় জাগে। সারারাত্র জেগে মা লক্ষ্মীর আরাধনা করাই এই পূজার বিশেষ আচার।
কথিত আছে কোজাগরি লক্ষী পূজার দিন দেবী রাত্রে খোঁজ নেন কে জেগে আছে যে জেগে অক্ষয়ক্রীড়া করে মা লক্ষ্মী তাকে ধন-সম্পদ দান করেন।
অক্ষক্রীড়ার সাধারণ অর্থ হল পাশা খেলা। কেউ কেউ এই দিনে পরের বাগানের ফলমূল চুরি করে। এই চুরির মাধ্যমে তারা ভাবে যে লক্ষীদেবী তাদের কৃপা করেন।
তাই কৃপা লাভের আশায় এখনো ঘরে ঘরে প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীর পাঁচালী পাঠ করে তার আরাধনা করা হয়। উপাচারের ফল, মিষ্টি, ছাড়াও মোয়া নাড়ু ইত্যাদি দিয়ে মা লক্ষ্মীর ভোগ প্রসাদ দেয়া হয়ে থাকে। মা লক্ষ্মীর প্রিয় ফল হলো নারিকেল। তাই নারিকেল দিয়েই নাড়ু তৈরি করে ভোগ প্রসাদ দেয়া হয়ে থাকে। মা লক্ষ্মীর আচার অনুষ্ঠানেও দেখা যায় নানা ধরনের তাৎপর্য। কোনো কোনো পরিবারে পূজায় মোট ১৪ টি পাত্রে উপাচার রাখা হয় । যেমন কলাপাতায় টাকা, স্বর্ণ মুদ্রা, ধান, দুর্বা, পান, কড়ি, হলুদ ও হরিতোকি দিয়ে সাজানো হয় পূজার স্থানটিকে।
কোজাগরী লক্ষী পূজার সময় হলো প্রদোষকাল। অর্থাৎ সূর্যাস্ত থেকে ২ ঘন্টা পর্যন্ত যে সময় থাকে তাকে প্রদোষ কাল বলা হয়ে থাকে। যদিও প্রদোষ থেকে নিশীথ বা রাত্র অবধি তিথি থাকলেও সেই প্রদোষেই পূজা বিহিত।
মনে করা হয়, কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা যে গৃহে করা হয় সেই গৃহে মা লক্ষ্মী সাদা বিরাজমান থাকেন। সেই গৃহের মানুষেরা অত্যন্ত সুখে শান্তিতে থাকে। এই দিন মা লক্ষী দেবীর পূজা করলে মনের বাসনা হয়।
স্বাভাবিকভাবে সুখে শান্তিতে সংসার জীবন কাটাতে মা লক্ষ্মীর বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। সারা বছর মায়ের কৃপা পেতে ভক্তি সহকারে সঠিক নিয়ম মেনে আয়ের পূজা করতে হয়। এমন কিছু কাজ রয়েছে যা লক্ষী পূজার দিন বাড়িতে করতে নেই। যদি এই কাজগুলো বাড়িতে এই দিন করা হয় তাহলে মা লক্ষ্মী অত্যন্ত রুষ্ঠ হন।
সে কাজগুলো হলো–
১) মা লক্ষ্মী পূজার সময় কোনভাবে লোহার তৈরী বাসন ব্যবহার করা যাবে না।
২) মা লক্ষ্মী দেবীকে কোনভাবে সাদা রঙের ফুল অর্পণ করা যাবে না। সাদা রঙ ছাড়া লাল, হলুদ ও গোলাপি রঙের ফুল দিয়ে অর্পণ করতে হয়।
৩) লক্ষ্মী দেবীর পূজার সময় কোনভাবে তুলসী পাতা দেয়া যাবে না।
৪) মা লক্ষ্মীর আসনে সাদা বা কালো রঙের কাপড় ব্যবহার করতে বা পাততে নেই। লাল, গোলাপি প্রভৃতি রঙের কাপড় ব্যবহার করতে হবে। এতে মা লক্ষ্মী অত্যন্ত তুষ্ট হন।
৫) লক্ষ্মী পূজার দিন কোনভাবে বাড়ি থেকে অন্য কাউকে চাউল দিতে নেই।
৬) সাধারণত প্রায় সব পূজার সময়ই কাঁসর ঘন্টা বাজানো হয়। কিন্তু মা লক্ষ্মীর পূজায় ভুল করে হলেও কাঁসার ঘন্টা বাজানো যাবে না।
৭) লক্ষী পূজা করার সময় নিজেকেও লাল, গোলাপি, হলুদ, কমলা এই ধরনের রঙের বস্ত্র পরিধান করতে হবে।
৮) লক্ষী পূজার দিন মা লক্ষ্মী দেবীর জন্য যেকোনো কাজে কলাপাতা অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে।