দেশের তথ্য ডেস্কঃ
টেকসই ও ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তরের লক্ষ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে দেশের জ্বালানিবিষয়ক সর্ববৃহৎ নেটওয়ার্ক ‘জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (জেটনেট-বিডি)’। ৭৫টি নাগরিক সংগঠন (সিএসও), জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা, স্থানীয় সংগঠন, জ্বালানিখাত বিশেষজ্ঞ এবং পরিবেশবিদদের নিয়ে এই নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশান হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই নেটওয়ার্কের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল অ্যান্ড ম্যাটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন ও পেট্রোলিয়াম প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তামিম, রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস এর প্রধান বিশ্লেষক (জ্বালানি) শফিকুল আলম, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও চেইঞ্জ ইনিশিয়েটিভ এর প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খানসহ দেশের বিশিষ্ট ২৩ জনের একটি উপদেষ্টামণ্ডলী প্যানেল এই নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত আছেন।
দেশে জ্বালানি সুশাসন, সাশ্রয়ী জ্বালানি, সবুজ কর্মসংস্থান, ন্যায্য ও সবুজ জ্বালানি রূপান্তরে নারীদের অংশগ্রহণ, জ্বালানি দক্ষতা, জ্বালানি সংরক্ষণ, পরিবেশ ও জনপদের সুরক্ষা, ক্যাম্পেইনসহ আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে জেটনেট-বিডি।
ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তরে নাগরিক সমাজের ১৪ দাবি
আহতদের চিকিৎসায় চীনের চিকিৎসক দলের সন্তুষ্টি প্রকাশ
নেটওয়ার্কের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন একশনএইড বাংলাদেশ-এর জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন (জেট) টিমের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ।
তিনি বলেন, জেটনেট-বিডি-এর কার্যকরী লক্ষ্য হলো সুশীল সমাজের জোরালো কণ্ঠস্বর তুলে ধরা এবং একটি সবুজ ও টেকসই জ্বালানি নির্ভর ভবিষ্যতের জন্য সকলকে সংগঠিত করা। সহযোগিতামূলক এই নেটওয়ার্ক নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রচার, সদস্য সংগঠনগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত এবং নীতি-নির্ধারকদের প্রভাবিত করার মধ্য দিয়ে দেশে একটি টেকসই জ্বালানি রূপান্তর অর্জনে নিবেদিত থাকবে।
নেটওয়ার্কের উদ্বোধন শেষে জ্বালানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তরের জন্য ১৪ দফা নাগরিক দাবিনামা প্রচারণার শুরু ঘোষণা করা হয়। পরে ‘একশনএইড বাংলাদেশ’এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবিরের সঞ্চালনায় ‘চাওয়া থেকে বাস্তবতা : বাংলাদেশের জ্বালানির ভবিষ্যত গঠন’ বিষয়ক সংলাপ ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। পরিবেশ ও জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা এই আলোচনায় অংশ নেন।
এই সম্মিলিত উদ্যোগে সঙ্গে সরকারকে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে ফারাহ কবির বলেন, জেটনেট-বিডি’র এ যাত্রায় সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ১০০% নবায়নযোগ্য জ্বালানি রূপান্তরের পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
দেশের জ্বালানি খাতে সুশাসন আনয়নে সরকারের সাথে নীতি নির্ধারণী বিষয়ে সংলাপের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে জেটনেট-বিডি নিবেদিতভাবে কাজ করবে উল্লেখ করে ড. মোহাম্মদ তামিম বলেন, গত সরকারের শতভাগ বিদ্যুতায়নের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের হোম সোলার সিস্টেম পুরোপুরিভাবে ধ্বংস হয়ে পড়েছে। টেকসই ও সবুজ জ্বালানি নির্ভর খাত নিশ্চিতে সুপরিকল্পিত কর্ম-পরিকল্পনার প্রয়োজন।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আগামী দিনে কয়লাভিত্তিক নতুন বিদ্যৎকেন্দ্র যাতে না হয় এবং বিদ্যমান প্রকল্পগুলো যাতে দ্রুত অবসরে যায়-এই বিষয়ে সরকারকে কীভাবে পরামর্শ দেয়া যায়, তা বিবেচনা করে দেখতে হবে। জেটনেট-বিডির সহায়তায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি নির্ভর সাপ্লাই চেইন গড়ার আলোকে বিস্তারিত কর্ম-পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়ন দরকার।
বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার না করে দেশে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারে বছরে ৫০০ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব।
বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র এনার্জি স্পেশালিস্ট এমবুসো গওফিলা বলেন, সৌর বিদ্যুতের একচ্ছত্র প্রভাব থেকে সরে এসে স্থানীয় পর্যায়ে বায়োগ্যাস ও বায়োমাস নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে আরও মনোযোগ দেয়া যেতে পারে।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.খসরু মোহাম্মদ সেলিম বলেন, বাংলাদেশের স্থানীয় প্রেক্ষাপটে ব্যবহারযোগ্য উদ্ভাবনমূলক প্রযুক্তি, যেমন ইলেকট্রিক রিকশার চার্জিং স্টেশন, সোলার মাইক্রো গ্রিড, সোলার ইনকিউবেটর ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা ও প্রচার বাড়াতে হবে এবং এই কাজে স্থানীয় নারী ও যুবকদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সোলারিক গ্রুপের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের পরিচালক প্রকৌশলী নাজনীন আক্তার বলেন, শিল্পখাতে যেখানে প্রতি ইউনিট ১১ থেকে ১২ টাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়, যেখানে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারে মাত্র ৩ থেকে ৪ টাকায় নিজ নিজ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।
এসময় অনুষ্ঠানে পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতউল্লাহ, বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র এনার্জি স্পেশালিস্ট এমবুসো গওফিলা, জিআইজেড বাংলাদেশের ক্লাস্টার কো-অর্ডিনেটর স্টোয়াঙ্কা স্টিচ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশ-এর এনভায়েরেনমেন্ট অ্যান্ড এনার্জির প্রোগ্রাম ম্যানেজার তানজিনা দিলশাদ, এশিয়ার ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) প্রতিনিধি মাশিউর রাহমান, জেটনেট-বিডি নেটওয়ার্কের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য সানজিদা সুলতানাসহ এক শতাধিক নাগরিক সংগঠন (সিএসও), জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা, স্থানীয় সংগঠনের পরিবেশ ও জ্বালানিখাতের বিশেষজ্ঞ, এবং গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।