ঢাকা প্রতিনিধিঃ
গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদ ও নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার রাসেলের নাম ভাঙ্গিয়ে অর্থ আত্মসাৎ প্রতারক ও চাঁদাবাজ সোহেল মাহমুদের ছয়লাব
ঢাকা গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হারুন অর রশীদ ও নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জিএম রাসেলের নাম ভাঙ্গিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করায় প্রতারক সোহেল মাহমুদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) বরাবর অভিযোগ করেছেন নগরীর উকিলপাড়া নিবাসী সেলিম ইসলাম সোহান নামে এক ভুক্তভোগী। প্রতারক সোহেল মাহমুদ পশ্চিম দেওভোগ তাঁতীপাড়া এলাকার মৃত সোহবান মুন্সির ছেলে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পারিবারিক দ্বন্দ্বের ফাঁদ পেতে প্রতারক সোহেল মাহমুদ ইতোমধ্যে সোহানের কাছ থেকে কয়েক লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়া পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজের নামে আরও ৬০ লক্ষাধিক টাকা দাবি করে সোহানের কাছ থেকে সাদা স্ট্যাম্পে সই নিয়েছে প্রতারক সোহেল মাহমুদ। সোহেল মাহমুদ এরআগেও স্থানীয় বিভিন্ন পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছেন। প্রশাসনের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় কিছুদিন চুপচাপ ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি একটি মামলায় জেলও খাটেন। জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে তিনি আবারও পুরনো রূপ ধরেছেন। কখনো রাজনীতিবিদ, কখনো প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে মানুষের সাথে নানাভাবে প্রতারণা করে আসছেন। যার প্রেক্ষিতে প্রতারক সোহেলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে চলতি বছরের ২ জুন ভুক্তভোগী সেলিম ইসলাম সোহান পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগে জানা যায়, সেলিম ইসলাম সোহানের ফুফাতো বোনের স্বামী সোহেল মাহমুদ। সোহান বিয়ে করার জন্য পরিবারের অনুমতি চাইলে কেউ রাজী না থাকায় তিনি সোহেল মাহমুদের দ্বারস্থ হন। তখন সোহেল মাহমুদ বিয়ে করিয়ে দিবেন বলে সোহানের কাছ থেকে এক লাখ টাকা আবদার করেন। পরবর্তীতে গত বছরের মার্চ মাসে সোহানের বিয়ে হয়। তারপর থেকে ভাইদের সাথে সোহানের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। আর এই দ্বন্দ্বকে পুঁজি করে সোহেল মাহমুদ বিভিন্ন সময় সোহানের কাছ থেকে কয়েক লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়। এমনকি ভাইয়ে-ভাইয়ে দ্বন্দ্ব নিরসন না করে উল্টো বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করার খরচপাতির জন্য সোহানের কাছে আরও কয়েক লাখ টাকা দাবি করে। যার জন্য সোহান তার স্ত্রীর ৪ ভরি স্বর্ণালংকার বিক্রি করতে বাধ্য হন। একপর্যায়ে কথিত মামলা নিষ্পত্তির নামে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে প্রায় ৬০ লক্ষাধিক টাকা দাবি করা হয়। যার মধ্যে ঢাকা গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হারুন অর রশীদের নামে ২৩ লাখ টাকা, জেলা পুলিশ সুপারের নামে ২৫ লাখ টাকা, ডিবির ওসির নামে ১০ লাখ টাকা এবং ডিবির এসআই সাফির নামে ৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়। সোহান এসব টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে সোহেল মাহমুদ। কোন উপায়ান্তর না পেয়ে সোহান অবশেষে পুলিশ সুপার বরাবর প্রতারক সোহেল মাহমুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। সোহেল মাহমুদকে দ্রুত গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন সোহান।
উল্লেখ্য, এরআগে প্রতারনামূলকভাবে জাল দলিলের মাধ্যমে আপন বড় ভাইয়ের ৫ শতাংশ জমি নিজের নামে সৃজন করার অভিযোগের মামলায় প্রতারক সোহেল মাহমুদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগও রয়েছে।
জানা যায়, সোহেল মাহমুদ তাঁতীপাড়া এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের অর্থ যোগানদাতা হিসেবে পরিচিত? সে দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকে শহরের ২নং রেলগেট এলাকাস্থ মিডটাউন মার্কেটে ব্যবসায়ীর সাইনবোর্ড লাগিয়ে নানা অপরাধীদের সাথে আঁতাত করে অপরাধ কর্মকান্ড করে আসছিল। মানুষের সাথে প্রতারণা করতে করতে নিজের আপন বড় ভাইয়ের সাথেও প্রতারণা করে। তার বড় ভাই আল আমিন বিদেশে থাকার সুযোগে তাঁতীপাড়া এলাকায় মিজানুর রহমানের ৫ শতাংশ একটি জমি জাল দলিলের মাধ্যমে নিজের নামে করে নেয় সোহেল মাহমুদ। এ ঘটনায় আম মোক্তার হিসাবে মিজানুর রহমান এর পক্ষে আল আমিন বাদি হয়ে সোহেল মাহমুদসহ আরো কয়েকজনকে আসামী করে আদালতে মামলা দায়ের করে। পরে বিজ্ঞ আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে ফতুল্লা থানায় মামলা হিসেবে রুজু করতে নির্দেশ দেন। সেই মামলা আমলে নিয়ে ফতুল্লা থানা পুলিশ সোহেল মাহমুদকে গ্রেফতার করা হয়।