দেশের ৯৪ শতাংশ মানুষের নেই ব্যাংক হিসাব

1720154019-e06d061a77a7bde916b8a91163029d41.jpg

দেশের তথ্য ডেস্কঃ

ব্যাংকিং সেবাসহ নানা জটিলতার কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি দেশের মানুষের আগ্রহ কম। দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ এখনো আর্থিক লেনদেনের বাইরে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম আগ্রহ ব্যাংকে হিসাব খোলা নিয়ে। যার ফলে দেশের মোট জনসংখ্যার ১০ বছরোর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫.৮৫ শতাংশ মানুষের ব্যাংক হিসাব রয়েছে।

তবে এদিক থেকে এগিয়ে রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং।সাম্প্রতিক বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর করা ‘আর্থ-সামাজিক ও জনমিতিক জরিপ-২০২৩’ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোবাইল ব্যাংকিংসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে দেশের ১০ বছরোর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর ৪৭.৪৩ শতাংশ মানুষ আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় এসেছে।

বিবিএসের জরিপ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ব্যাংক তো দূরের কথা, মোবাইল ব্যাংকিং এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও লেনদেন করছে না ৫২.৫৭ শতাংশ মানুষ।

অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ১০ বছরোর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর অর্ধেকেরও বেশি মানুষের কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আগ্রহ নেই।জরিপে দেখা যায়, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে থাকা মানুষের মধ্যে মাত্র ৫.৮৫ শতাংশ মানুষের ব্যাংকে হিসাব রয়েছে। যদিও বর্তমানে দেশে ৬১টি ব্যাংক রয়েছে। ৬৪ জেলায় ব্যাংকগুলোর প্রায় ১১ হাজার শাখা রয়েছে।

কিন্তু সেখানে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ মানুষের। এতগুলো ব্যাংকের কাজ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘বিবিএসের তথ্যমতে, মাত্র ৫ শতাংশ মানুষের অ্যাকাউন্ট আছে এ কথাটি ঠিক নয়। অন্যদিকে দেশের মানুষের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ৪৮ শতাংশ বলা হলেও বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইনক্লুশন ডাটাবেইস অনুসারে বাংলাদেশের মানুষের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ৫৩ শতাংশ।’

ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খোলা নিয়ে আগ্রহ কম থাকলেও আর্থিক লেনদেনে এগিয়ে রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং।

জরিপ অনুযায়ী, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্ট খুলেছে দেশের ২০.৮০ শতাংশ মানুষ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বিকাশ, নগদ, রকেট এবং উপায়সহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। অর্থাৎ দেশের মানুষের আর্থিক লেনদেনে ব্যাংক থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রতি আগ্রহ বেশি।সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকদের মতে, মাত্র ৫ শতাংশ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সন্তোষজনক নয়, মোট জনসংখ্যার তুলনায় অনেক কম। মূলত ব্যাংকিং সেবায় নানা জটিলতার কারণে ব্যাংক লেনদেনের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। যার ফলে ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খোলার হার কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে মোবাইল ব্যাংকিং সহজ এবং প্রান্তিক পর্যায়ে তাদের সেবা পৌঁছে দিতে পারছে। এ কারণে  মানুষ এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দিকে ঝুঁকছে।

বিবিএসের জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকের বাইরে মাইক্রো ক্রেডিট বা এনজিওতে অ্যাকাউন্ট রয়েছে ২.৩৬ শতাংশ মানুষের, নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানে ০.০৯ শতাংশ, ইনস্যুরেন্সে ০.১১ শতাংশ, কো-অপারেটিভ সোসাইটিতে ০.১০ শতাংশ, ক্যাপিটাল মার্কেটে ০.০২ শতাংশ, পোস্ট অফিসে ০.০২ শতাংশ, সঞ্চয়পত্রে ০.০০৪ শতাংশ। এ ছাড়া একাধিক প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্ট রয়েছে ১৮.০৯ শতাংশ মানুষের।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমাদের দেশে ৬০টিরও বেশি ব্যাংক রয়েছে। এই ব্যাংকগুলোকে লাইসেন্স দেওয়ার সময় যুক্তি দেওয়া হয়েছিল যে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে পৌঁছাবে, জনগণের আয় বাড়ছে এবং তারা ব্যাংকিং সেবা পাবে। এর ফলে ব্যাংকিং খাতের অগ্রগতি হবে এবং দেশের মানুষ আর্থিক শৃঙ্খলার মধ্যে আসবে। এর মাধ্যমে তারা ফিন্যানশিয়াল ম্যানেজমেন্ট করে নিজেদের উন্নতি করতে পারবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, এসব ব্যাংক দিয়ে মানুষকে ব্যাংকিং খাতের সেবার সুযোগ দেওয়া যায়নি। এটি খুবই দুঃখজনক।’

অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকার মূল কারণ হিসেবে দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব এবং সেবা সহজলভ্য না হওয়াকে দায়ী করা যায়। তাদের মতে, অনেক মানুষের ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই, তারা দিন এনে দিন খায়। এ ছাড়া ব্যাংক খাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহির চরম অবনতি হয়েছে, যা আমানতকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা সৃষ্টি করছে। এসব কারণে তারা ব্যাংকিং সেবার বাইরে রয়েছে। তবে তাদের সচেতন করার প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

তারা বলেন, ব্যাংকিং সেবা সহজলভ্য করতে হবে। আর্থিক সেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে তারা সরকারের অন্য সেবাগুলোও সহজে গ্রহণ করতে পারবে। এই সেবার ক্ষেত্রে সরকারকে আরো গুরুত্ব দিতে হবে। ব্যাংকিং সেবা যত বেশি বিস্তৃত হবে, সাধারণ মানুষ তত উপকৃত হবে এবং এটি অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Share this post

PinIt
scroll to top