দেশের তথ্য ডেস্কঃ
প্রবল শক্তি নিয়ে জ্যামাইকাতে আঘাত হেনেছে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ হারিকেন বেরিল। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সকালে এ খবর জানায় বিবিসি ও সিএনএন। প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছুটা দুর্বল হয়ে ক্যাটাগরি-৪ মাত্রার ঝড়ে পরিণত হয়ে ২১৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় ক্যারিবিয়ান অঞ্চল জ্যামাইকার উপকূলে আছড়ে পড়ে। এর আগে বার্বাডোস ও গ্রেনাডা অতিক্রমের সময় ঝড়টি ক্যাটাগরি-৫ মাত্রার হারিকেনের শক্তি সঞ্চয় করেছিল।
হারিকেনে প্রভাবে বুধবার থেকে জ্যামাইকাতে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। এতে আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। রাজধানী কিংস্টনের রাস্তা-ঘাটও পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে আজ সকালে বাতাসের গতিবেগ ভয়ংকর রূপ নেয়। সমুদ্রের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় ডুবে গেছে নিচু ঘরবাড়ি। বাতাসের তোড়ে উড়ে গেছে বহু ঘরের চাল, লন্ডভন্ড হয়ে গেছে অসংখ্য স্থাপনা। উপড়ে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি ও বিশাল গাছ।
রয়টার্স জানিয়েছে, হারিকেন বেরিলের সর্বশেষ লক্ষ্যবস্তু হয়েছে জ্যামাইকা। তবে এখানেই এটি থামছে না। বেরিল দ্রুত মেক্সিকোর দিকে এগোচ্ছে। তবে এ সময়ে ঝড়টি আরও দুর্বল হওয়ার পূর্ভাবাস রয়েছে।
এর আগে দক্ষিণ-পূর্ব ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে আঘাত হানে বেরিল। এটি সেখানকার জনপদ লন্ডভন্ড করেছে। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার (১ জুলাই) সন্ধ্যায় গ্রেনাডার ক্যারিয়াকো দ্বীপে আঘাত হানে বেরিল। তখন এটি ক্যাটাগরি-৩ মাত্রার ঝড় ছিল। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, প্রবল বাতাসে দেশগুলোতে বিদ্যুৎ খুঁটি, বাড়িঘর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপকূলে থাকা জেলেদের অনেক নৌযান ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। দক্ষিণ-পূর্ব ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের উপকূলবর্তী এলাকায় সমুদ্রের পানি প্রবেশ করায় সড়ক তলিয়ে গেছে। এতে বার্বাডোস ও গ্রেনাডার ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে স্বাভাবিক পরিসেবা। ভেনেজুয়েলাতেও হারিকেনের প্রভাবে বন্যা দেখা দিয়েছে। সেখানেও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আটলান্টিক মৌসুমের প্রথম হারিকেন অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। হারিকেনের বাতাস ঝড়ের কেন্দ্র থেকে ৪০ মাইল পর্যন্ত বাইরের দিকে প্রবাহিত হয়। এতে সরাসরি আঘাত না হানলেও পাশের দেশগুলোতে ঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। সমুদ্র উত্তাল থাকায় ছোট নৌযান চলাচল বন্ধ রেখেছে আশপাশের অনেক দেশ।
আবহাওয়াবিদদের মতে, আটলান্টিক মহাসাগর লাগোয়া অঞ্চলে ১ জুন থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত হারিকেনের মৌসুম। চলতি বছর ওই অঞ্চলে বেশ কয়েকটি হারিকেন আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা। এর আগে আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ২০২৪ সালে অন্তত ২৫টি ঝড় আঘাত হানতে পারে।
এসব ঝড়ের মধ্যে ৮ থেকে ১৩টি হারিকেনে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সমুদ্রের তাপমাত্রা রেকর্ড উষ্ণ হয়ে ওঠার কারণে ওই অঞ্চলে ঘনঘন হারিকেনের সৃষ্টি হচ্ছে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন।
এদিকে ক্যারিবীয় অঞ্চলে ঝড়ের আঘাতে এ পর্যন্ত অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন স্থান থেকে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য আসছে। আহত-নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এমন পরিস্থিতিতে আতংকে দিন কাটছে স্থানীয়দের।
অ্যামোয় ওয়েলিংটন নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, খুবই ভয়ানক অবস্থা। সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। আমি আমার বাড়িতে আছি এবং ভয় পাচ্ছি। এমন দুর্যোগ অন্য দেশ থেকে বোঝা সম্ভব নয়। এখানে যারা আছে তারাই এর শক্তি অনুভব করতে পারছে।