দিঘলিয়া প্রতিনিধিঃ শেখ শামীমুল ইসলাম
একসময়ের পাটশিল্পের জন্য খ্যাত উপজেলা হল খুলনার দিঘলিয়া। এখন আর সেই পাটশিল্পের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। মানুষ হয়ে পড়েছে কর্মহীন। আর এই উপজেলায় ক্রমাগতই নিত্যপণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বগতিতে নিম্ন আয়ের ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মাথায় হাত উঠে গেছে। বাজারের ওপর প্রশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলছে। একবার যে পণ্যের দাম বাড়ে, তা আর কমে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্নআয় ও মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত।বাজারে চাল, ডাল, তেল, নুন, পেঁয়াজ, রসুন শাকসবজি থেকে শুরু করে এমন কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নেই, যার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে না। উপজেলায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় কারণে অকারনে।
কোনো একটি অজুহাত পেলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়া হয়। কখনও রোজা, কখনও ঈদ বা কখনও জাতীয় বাজেট ঘোষণাকে কেন্দ্র করে অকারণেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা এক নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই অশুভ প্রবণতা লক্ষ করে আসছি আমাদের সেই ছোটবেলা থেকে এবং আজও সেই একই ধারা অব্যাহত আছে। মাত্রাতিরিক্ত হারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক এবং আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে থাকে, তখন তাদের জীবনে ধীরে ধীরে নেমে আসে নানা ধরনের অসুবিধা ও অশান্তি। বর্তমানের নিত্যপণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বগতির কারণে অসুবিধায় দিন পার করছে উপজেলার অধিকাংশ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। যারা লজ্জায় না পারছে কাউকে কিছু বলতে, না পারছে কারও কাছে সাহায্য চাইতে ।
উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, নিত্যপণ্যের মূল্যে মাংসের বাজারে কেজি প্রতি খাসির মাংস ১২০০-১৪০০টাকা, গরুর মাংস ৭০০-৭৫০টাকা, দেশী মুরগি ৬২০-৬৫০টাকা, বয়লার মুরগি ২৫০ টাকা, কক মুরগী ৪২০টাকা, সোনালী মুরগি ৩৫০টাকা, নিত্যপণ্যের মূল্যে মুদিখানাতে কেজি প্রতি চাউল ৫৫ থেকে শুরু করে ৯০টাকা পর্যন্ত, বিরানীর চাউল ৯০-১৪০টাকা, সরিষার তেল ২২০-২৮০টাকা, সয়াবিন বোতল লিটার প্রতি ১৬৫-১৭৫ টাকা, খোলা বাজারের সয়াবিন ১৬০-১৮০টাকা, আইটি ১৪০-১৬০টাকা, পাম ১৩৫-১৫০টাকা, লবণ প্যাকেট ৪০-৬০টাকা, মসুরের ডাল ৯০-১৪০টাকা, মুগের ডাউল ১৩০-১৬০টাকা, ছোলার ডাউল ৮০-৯০টাকা, বুট ডাউল ৬৫-৮০টাকা, চিনি ১৪০-১৫০টাকা, ছোলা আস্ত ৮০-৯০টাকা, কাপড় কাচা সাবান ২৫-৩০টাকা, ডিটারজেন্ট পাউডার ১৩০-১৬০টাকা, সোপ সাবান ৫০-৮০টাকা, কাঁচা বাজারে কেজি প্রতি আলু ৬০-৭০টাকা, পিঁয়াজ দেশী ৯০-১১০টাকা, বিদেশি ৬০-৮০টাকা, কাঁচা মরিচ ২০০-২৫০টাকা, রসুন দেশী ২০০-২৩০টাকা, বিদেশি ১৯০-২০০টাকা, শুকনো মরিচ ৫০০-৮০০টাকা, সজনের ডেটা ১৫০-১৮০টাকা, উচ্ছে ১২০-১৪০টাকা, ভেন্ডি ৮০-১০০টাকা, মেটে আলু ৬০-৮০টাকা, বেগুন ৩৫-৭০টাকা, দস্তা কচু ৭০-৮০টাকা, কাচ কলা-কচু-গাজর ৪০-৫০টাকা, পটল-কচুর লতি ৬০-৮০ টাকা, বরবটি- বিটকপি ৮০-১০০টাকা, পুঁইশাক-ডাঁটা শাক-সিম-ফুলকপি- মিষ্টি কুমড়া ৪০-৬০ টাকা, পেঁপে- টমেটো ৬০-৮০টাকা, গাজর ১০০ টাকা, শসা ৬০-৮০টাকা, লাউ প্রতি পিছ ৮০টাকা, মাছ ইলিশ ১০০০-২৫০০ টাকা, পাঙ্গাশ ১৮০-২২০টাকা, তেলাপিয়া ১৫০-২২০টাকা, সিলভার ১৮০-২২০টাকা, রুই-কাতলা, মৃগেল মাছ ২০০ থেকে ৫০০ টাকা দেশী চিংড়ি মাছ ৬০০-৮০০টাকা।
বিগত কয়েক মাসের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কয়েক দফা বেড়েছে। এর ফলে সমাজের মধ্য ও নিম্নমধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত শ্রেণি খুবই খারাপ অবস্থায় আছে। নূন আনতে পানতা ফুরাই এমনই অবস্থা। তাই এ ব্যাপারে প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি যাতে কোনো ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পণ্যের দাম আরও বাড়িয়ে দিতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। নিম্নআয়ের মানুষের কষ্ট এবং দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনা করে প্রতিটি দ্রব্যের বাজারমূল্য নির্ধারণ করে বাজার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ভেজাল খাদ্যদ্রব্যের হাত থেকে রক্ষার জন্য সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা ও সমন্বয়ে আরও বেশি বেশি মোবাইল কোর্ট চালু করে ভেজালকারীদের গুরুদণ্ড প্রদানে কার্যকরী ভূমিকা রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুবিধা বঞ্চিত মানুষের পক্ষে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে। বাজারে প্রত্যেকটা জিনিস মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয়ে পড়ছে। মধ্যবিত্ত মানুষ রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে, হতাশায় ভুগছে। বাজারে গেলেই ১০০০ টাকা নিয়ে গেলে আমার সম্পূর্ণ বাজার হয় না। বাইসাইকেল চালিয়ে প্লাস্টিকের পণ্য হকারি করে বিক্রি করেন মাসুদ রানা। কথাগুলো একান্ত তার।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, দুই সন্তান পড়াশোনা করে ব্যাপক ব্যয় করতে হয় তাদের পিছনে। বছরে কাপড়চোপড় ঠিকভাবে কিনে দিতে পারি না। পুরাতন কাপড় চেয়ে নিজেদের পরিধান করতে হয়,সন্তানদের পুরনো কাপড় দেওয়া যায় না। ধার দেনা করে কিনে দিতে হয়। কিভাবে আমি সংসার চালাবো আপনি বলেন স্যার। চোখের পাতায় ছল ছল পানি নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন মাসুদ রানা। এক সময় পাঙ্গাস মাছ কিনলে বলতো এই মাছ মানুষ খায় নাকি? সেটাও আজকে অনেকের স্বপ্ন। ব্রয়লার মুরগি কিনতে গেলে বলতো এই মুরগী মানুষ খায়? সেটা এখন অনেকের স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সময় মনে হত আমি মধ্যবিত্ত। এখন বাজারে গেলে বুঝি আমি মধ্যবিত্ত নই, আমি গরিব এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত গরীব। চারিদিকে হতাশা। আয় করি ৩০০ টাকা আর ব্যয় এর হিসাব অনেক লম্বা। কোথায় যাবে এই অসহায় মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। বাজারে গেলে মাথা ঠিক থাকে না। হিমসিম খাচ্ছি সংসার চালাতে। অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান দিঘলিয়া আদর্শ সমাজ কল্যাণ পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোল্যা কামরুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে বর্তমান বাজার ব্যবস্থা জিম্মি হয়ে পড়েছে। সরকারও এদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।