বন্যার সুযোগে নৌপথে চিনি চোরাচালান

1719890798-5f35e41f226b511c1a2303c839b5cba1.webp

দেশের তথ্য ডেস্কঃ

বন্যায় যখন সিলেটের প্রায় ১০ লাখ মানুষ ছিল দুর্ভোগে, তখন চোরাকারবারিদের জন্য এ বন্যাই হয়ে উঠেছে আশীর্বাদ। বন্যার সুযোগে সড়কপথ ছেড়ে নৌপথে চলছে চিনি চোরাচালান। এতে ঝুঁকি আর খরচ কমেছে, বেড়েছে লাভের অঙ্ক।

এতে ভারত থেকে নামানো চিনির বস্তা দীর্ঘ পথ শ্রমিক দিয়ে বহন করতে হয় না। সীমান্ত এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বন্যা শুরুর পর থেকে পুলিশ ও প্রশাসন বন্যাদুর্গতদের উদ্ধার, ত্রাণ বিতরণের মতো কাজে ব্যস্ত ছিল। এ সুযোগে নদীপথে চোরাচালানের দ্রুত বিস্তার ঘটে। নৌপথে নানা সুবিধা।

পথে পথে চাঁদাবাজি নেই, পুলিশের ভয়ও কম। চোরাকারবারিদের নেতা ও সোর্সরা ত্রাণকাজে যুক্ত হয়ে সহজেই পুলিশের গন্তব্য জেনে মোবাইল ফোনে তাদের লোকজনকে জানিয়ে দিতে পারছে। এতে পুলিশের চোখ এড়িয়ে অন্য পথগুলোতে নির্বিঘ্নে চলছে চোরাচালান। এখন বন্যার পানি কমে যাওয়ায় নদীপথ আর হাওর ব্যবহার করে সুবিধা নিচ্ছে তারা।

জলপথে পুলিশের লজিস্টিক সাপোর্ট কম থাকায় তাত্ক্ষণিক অভিযান চালানোও সম্ভব হয় না।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নৌকার সুবিধা হচ্ছে সরাসরি জিরো পয়েন্টে চলে যাওয়া যায়। ফলে অধিক শ্রমিকের দরকার পড়ে না। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ছনবাড়ী সীমান্ত থেকে ভারতীয় চিনির বস্তা আগে ছনবাড়ী বাজার পর্যন্ত কাঁধে করে নিয়ে এলে শ্রমিককে বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা দিতে হতো। সেখান থেকে ভোলাগঞ্জ পর্যন্ত মোটরসাইকেলে পৌঁছে দিলে আরো ২৫০ টাকা।

প্রতি বস্তায় সর্বমোট পরিবহন খরচ হতো ৪৫০ টাকা। এখন সীমান্ত থেকে নৌকায় তিন কিলোমিটারের মতো পথ পাড়ি দিয়ে রাবার ড্যামের পাশে থাকা বাল্কহেডে তুলে দেওয়া পর্যন্ত খরচ হয় ২৫০ টাকা। অর্থাৎ বস্তাপ্রতি খরচ কমেছে ২০০ টাকা।

তিন উপজেলার চোরাচালানের নৌ রুট

সিলেটের চিনি চোরাচালানের বড় গন্তব্য জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর। গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট কোম্পানীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে নামা চিনির চালানের বড় অংশ প্রথমে আসে হরিপুর ইউনিয়নে। এ ক্ষেত্রে নৌ রুটগুলো হচ্ছে নলজুরী খাসি নদী, আসামপাড়ার খোয়াইখাল, ৪ নম্বর বাংলাবাজারের রাংপানি নদী, বিরাইমারী হাওরের শিকারখাল নদী, জৈন্তাপুর সদরের নয়াগাং, বড়গাং, সারি ও পুড়াখাই নদী এবং সারিঘাটের লাইম নদী দরবস্ত বাজার ও চতুল বাজার হয়ে হাওরের ওপর দিয়ে হরিপুর পর্যন্ত।

একইভাবে কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে আসা চোরাই চিনি বোঝাইয়ের পর নৌকা কানাইঘাট ফাবিজুরী ও পুটিজুরী নদী হয়ে গাছবাড়ী হাওরে প্রবেশ করে, তারপর মেদল হাওর হয়ে কাপনা ও করিচ নদী হয়ে হরিপুরে আসে।

গোয়াইনঘাট সীমান্ত দিয়ে আসা ভারতীয় চিনি নৌকায় বোঝাইয়ের পর পিয়াইন নদী হয়ে কখনো কাপনা নদী আবার কখনো হেমু করিচ নদী হয়ে অথবা সারী গোয়াইনঘাট রাস্তার পুড়াখাই ব্রিজের নিচ দিয়ে হরিপুর বাজার মসজিদঘাট, ভেড়াই চেয়ারম্যানের ঘাট, ৭ নম্বর গ্যাসকূপের ঘাট, বালীপাড়া ঘাটে এসে পৌঁছে। মূলত তিন উপজেলা থেকেই হরিপুরে এসে জমা হয় চোরাই চিনি। পরে তা সিলেট নগরের পাইকারি আড়ত কালিঘাট ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়।

তীরে এসে তরিও ডুবছে

বন্যা কমতে থাকায় এখন পুলিশের তৎপরতা বাড়ছে। নদীপথে ধাওয়া করে চিনি জব্দ না করলেও নৌকাগুলো তীরে এলে পুলিশের হাতে ধরা পড়ছে। গত মঙ্গল ও বুধবার ২৪ ঘণ্টার কম সময়ে চোরাই চিনির দুটি চালান জব্দ করেছে পুলিশ। গত বুধবার ভোর ৫টার দিকে জৈন্তাপুর উপজেলার বাউরবাগ স্কুলের সামনে বড় সবড়ু নদী এলাকায় দুটি নৌকা থেকে ১১১ বস্তা চিনি জব্দ করে পুলিশ। আগের দিন ভোর ৬টায় উপজেলার নয়াগাং নদীর চাঙ্গিল নামক স্থানে দুটি নৌকায় আনা ৪২ বস্তা চোরাই চিনি জব্দ করা হয়। দুটি অভিযানেই চোরাচালানচক্রের সদস্যরা পালিয়ে যায়। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন জৈন্তাপুর থানার ওসি তাজুল ইসলাম।

ওসি তাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বন্যার সময় আমরা যখন স্থল অভিযান করছি, চেকপোস্ট বসিয়ে গাড়ি আটকাচ্ছি, চোরাকারবারিরা তখন বিকল্প পথ (নৌপথ) বের করে নিয়েছে।’

Share this post

PinIt
scroll to top