প্রতিবছর ঈদের ছুটিতে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র বা পঙ্গু হাসপাতালে বাড়ে রোগীর চাপ। গত ২৭ থেকে ৩০ জুন হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে এক হাজার ২৬ জন, যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি।
হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক ডা. মো. গোলাম সরোয়ার কালের কণ্ঠকে জানান, স্বাভাবিক সময়ে গড়ে প্রতিদিন চিকিৎসা নেন ২০০ জন, অস্ত্রোপচার হয় ৮৫ জনের। এবার ঈদের ছুটিতে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের প্রায় অর্ধেক ৪৯৮ জনকে অস্ত্রোপচারের পর তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
<>নোয়াখালীর লক্ষ্মীপুর উপজেলার কিশোর মেহেদী হাসান তুরাগ। সে ঈদের দিন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হয়ে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসা নিচ্ছে। গতকাল তোলা। ছবি : লুৎফর রহমানপ্রতিবছর ঈদের ছুটিতে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র বা পঙ্গু হাসপাতালে বাড়ে রোগীর চাপ। গত ২৭ থেকে ৩০ জুন হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে এক হাজার ২৬ জন, যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি।হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক ডা. মো. গোলাম সরোয়ার কালের কণ্ঠকে জানান, স্বাভাবিক সময়ে গড়ে প্রতিদিন চিকিৎসা নেন ২০০ জন, অস্ত্রোপচার হয় ৮৫ জনের। এবার ঈদের ছুটিতে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের প্রায় অর্ধেক ৪৯৮ জনকে অস্ত্রোপচারের পর তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।ডা. মো. গোলাম সরোয়ার বলেন, ঈদের ছুটিতে সড়কে যানবাহন দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন এমন রোগীর সংখ্যা ১৬৮, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১০৭ জন, পড়ে গিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত ৪১০ জন, ট্রমা ১১৬ জন, মেশিনারিজ ইনজুরি ২০ জন, ফিজিক্যাল ইনজুরি ৩২ জন, শোল্ডার ইনজুরি চারজন এবং কোরবানির গরু জবাই ও কাটতে গিয়ে ১৬৯ জন।
গতকাল রবিবার সরেজমিনে হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগে কোনো শয্যা খালি নেই। অপারেশন থিয়েটারের সামনে অনেক রোগীর স্বজনদের ভিড়।
তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা স্বজনের জরুরি অপারেশনের অপেক্ষায় আছেন। এসেছেন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে।হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালে বর্তমানে ৮৭১ জন রোগী ভর্তি আছেন, শয্যাসংকট থাকায় রোগী ভর্তি করা হয় পরিস্থিতি বুঝে। তবে কোনো রোগীকে ফেরত দেওয়া হয় না।
হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, ভেতরে কোনো শয্যা ফাঁকা নেই। রোগীদের অনেকে দুই মাসের বেশি সময় ধরে এখানে ভর্তি আছেন। এমনই একজন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার নাহিদ শেখ। গেল ঈদুল ফিতরে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় পা, কোমর ও মাথায় আঘাত পান। এর পর থেকে ভর্তি রয়েছেন এই হাসপাতালে।নাহিদ শেখের মা রেশমা আক্তার চালাতে গিয়ে ওর এমন হয়েছে। মাথায় আঘাত পেয়েছে, কোনো কিছু বলতে পারে না। ইশারা করেও বলে না। এভাবেই সারা দিন শুয়ে থাকে।’
হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক সাবিত্রী রানী চক্রবর্ত্তী কালের কণ্ঠকে বলেন, ঈদের ছুটিতে যত রোগী আসে তাদের বেশির ভাগই বয়সে তরুণ। ঢাকার বাইরে থেকে আসা রোগী সবচেয়ে বেশি। এদের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে স্থানান্তর করা হয়েছে।
সাবিত্রী রানী বলেন, এবার ঈদে পড়ে গিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন এমন রোগীর সংখ্যা বেশি। এ ছাড়া কেউ গরুর শিঙের আঘাত পেয়েছেন, আবার কেউবা ছুরি চালাতে গিয়ে আঙুল কেটে ফেলেছেন। এ রকম ঘটনাই বেশি। এর বাইরে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন, যাদের বেশির ভাগেরই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঈদের ছুটির কারণে শুধু জরুরি বিভাগে প্রতি শিফটে ২৮ জন, জরুরি অপারেশন থিয়েটারে এবং জরুরি ওয়ার্ডে ৭১ জন ডাক্তার কর্মরত ছিলেন।
হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক ডা. মো. গোলাম সরোয়ার জানান, সারা দেশের সব সরকারি হাসপাতালের মতো পঙ্গু হাসপাতালেও ঈদের ছুটিতে অমুসলিম চিকিৎসক-নার্সরা চিকিৎসা দিচ্ছেন। চিকিৎসক ও নার্সের কোনো সংকট না থাকলেও হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সংকট রয়েছে বলে জানান তিনি।