দেশের তথ্য ডেস্ক।।
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে এখনও পাদপ্রদীপের আলোয় আছেন যুক্তরাষ্ট্রে পালানো আক্তারুজ্জামান শাহীন। তবে শাহীনের পেছনে কেউ না কেউ আড়ালে থেকে ঘুঁটি চালতে পারেন- এমন সন্দেহ থেকে সরছে না তদন্ত দল। তাই এমপি হত্যায় স্থানীয় রাজনীতির যোগসূত্র নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ঝিনাইদহের রাজনীতির মাঠের কোন কোন নেতা এমপি আজীম না থাকায় লাভবান হতে যাচ্ছেন, তাদের ওপর ফেলা হচ্ছে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি।
এ পটভূমিতে ঝিনাইদহের বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা আছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের চোখে চোখে, যাদের সঙ্গে অনেক দিন ধরে শাহীনের সখ্য ছিল। এ ছাড়া কারও কারও সঙ্গে ছিল আজীমের বিরোধ। যদিও শুরু থেকে তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলে আসছেন, চোরাচালানকেন্দ্রিক দ্বন্দ্বসহ বেশ কয়েকটি কারণ সামনে রেখে তারা রহস্য ভেদের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
মোবাইল ফোনে মেসেজ ‘মিশন সফল’: তদন্ত-সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্র বলছে, হত্যার পরপরই ঝিনাইদহের কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার মোবাইল ফোনে খুনিরা খুদে বার্তা পাঠায়। ‘মিশন সফল’ এটা তাদের বলা হয়।
ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল গিয়াস আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুর মোবাইল ফোনে বার্তা যায়। জড়িতরা তাঁর ফোনে আজীমের নিথর দেহের ছবি পাঠায়। এ ছাড়া খুদে বার্তা পাঠানো হয় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর ফোনেও।
এক ঢিলে দুই পাখি মারা’ হলো কিনা- গোয়েন্দা নজর: জেলার সাবেক এক সংসদ সদস্যকে প্রায় একই ধরনের খুদে বার্তা দেওয়া হয়। কেন খুনিরা গিয়াস, মিন্টুসহ অন্যদের এ ধরনের বার্তা পাঠাল- সে বিষয় নিয়ে তদন্ত চলছে। হত্যা মিশনে তারা জড়িত ছিল, নাকি ফাঁসানোর জন্য অভিনব কৌশল হিসেবে তাদের খুদে বার্তা দেওয়া হয়- নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে। স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ে বিরোধের জের ধরে আজীমকে হত্যা করে ‘এক ঢিলে দুই পাখি মারা’ হলো কিনা- নিশ্চিত হতে নজর গোয়েন্দাদের।
এদিকে আজীমের পরিবারের সন্দেহ, রাজনৈতিক বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তারা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামাল গিয়াস বাবুসহ আরও কয়েকজনকে সন্দেহ করছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে নতুন অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছে আজীমের পরিবার।
আজীমের বড় ভাই এনামুল হক ইমান দেশের তথ্যকে বলেন, হত্যার পরিকল্পনাকারী হিসেবে শাহীন নামে যাকে গোয়েন্দারা চিহ্নিত করেছেন, তাঁর ফুফাতো ভাই আওয়ামী লীগ নেতা কামাল গিয়াস বাবু। এ ছাড়া হত্যা মিশনের আরেক সদস্য চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহর দূরসম্পর্কের বোনজামাই গিয়াস। এরা পরস্পর আত্মীয়।
এনামুল হক আরও বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টুর সঙ্গে ছায়ার মতো থাকেন গিয়াস। তাঁর গাড়িতে বেশির ভাগ সময় চলাফেরা করেন। ভাইয়ের মৃত্যুর পর আমাদের সান্ত্বনা দিতে গিয়াসের গাড়িতে মিন্টু এসেছিলেন। মিন্টুর সঙ্গে কয়েকটি বিষয়ে আজীমের দ্বন্দ্ব ছিল। মিন্টুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা হয়েছিল। এ ঘটনায় আজীমকে সন্দেহ করেছিলেন তিনি।
এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অধিকাংশ নেতা আজীমকে চেয়েছিলেন। মিন্টুর ধারণা, ওই পদে যে কোনো সময় আজীম চলে আসবেন। আমরা মনে করি, মিন্টুসহ কালীগঞ্জের আরও কয়েকজন নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে। এরই মধ্যে তাদের কেউ কেউ গা-ঢাকা দিয়েছেন। এ ছাড়া মিন্টুর এক ভাই দীর্ঘদিন কলকাতায় থাকেন। তাঁর ব্যাপারেও তদন্ত হওয়া দরকার। কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব হোসেন ও সাবেক যুবলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বিজুকেও জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানাচ্ছি।
তদন্তের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত এক কর্মকর্তা বলেন, কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ঘিরে আজীমের পরিবারের যে সন্দেহ, সে ব্যাপারে তদন্ত চলছে।
ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি।
এদিকে চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে গিয়াসের টাকা লেনদেনের কথোপকথনের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিংয়ের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। শাহীনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে এ হত্যা মিশনে জড়িতদের সঙ্গে গিয়াস টাকা লেনদেনে জড়িত কিনা- বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে।