কেয়ামতের যেসব আলামত এরই মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে

.png

দেশের তথ্য ডেস্ক।।

 

কেয়ামত আরবি শব্দ। এটির অর্থ উঠে দাঁড়ানো। এটি আরবি কিয়াম শব্দ থেকে এসেছে। নির্ধারিত সময় এলেই কেয়ামত সংঘটিত হবে। মহান আল্লাহ কেয়ামত সংঘটনের দায়িত্বশীল ফেরেশতাকে শিঙায় ফুৎকার দিতে নির্দেশ দেবেন। এক আঘাতে সব চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। আর আকাশ বিদীর্ণ হয়ে যাবে। গ্রহ-নক্ষত্র খসে পড়বে। গোটা পৃথিবী অন্ধকার হয়ে যাবে।

ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় কেয়ামত বলা হয় ওই দিনকে, যেদিন সৃষ্টিকুল ধ্বংস হবে, যেদিন লোকেরা তার রবের সামনে দাঁড়াবে। (রূহুল মাআনি: ৫/১২২)

  

কোরআনে কেয়ামতের আলোচনা

মহান আল্লাহ বলেন, 
  

হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর। নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ংকর ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা দেখবে সেদিন প্রত্যেক স্তন্যদানকারিণী আপন দুগ্ধপোষ্য শিশুকে ভুলে যাবে এবং প্রত্যেক গর্ভধারিণী তার গর্ভপাত করে ফেলবে, তুমি দেখবে মানুষকে মাতালের মতো অথচ তারা মাতাল নয়। তবে আল্লাহর শাস্তি বড়ই কঠিন। (সুরা হজ ১-২)

 

আরেক আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন,
  

আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সবকিছু ধ্বংস হবে। বিধান তারই এবং তোমরা তারই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে (সুরা কাসাস, আয়াত: ৮৮)

 

মহান আল্লাহ আরও বলেন,
  

কাফেররা বলে আমাদের ওপর কেয়ামত আসবে না। বলুন কেন আসবে না? আমার পালনকর্তার শপথ, অবশ্যই আসবে। (সুরা সাবা ৩)

কেয়ামত কবে সংঘটিত হবে?

 

মহান আল্লাহ বলেন, 
  

আপনাকে জিজ্ঞেস করে, কেয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে? বলে দিন এর খবর তো আমার পালনকর্তার কাছেই রয়েছে। তিনিই তা অনাবৃত করে দেখাবেন নির্ধারিত সময়ে। আসমান ও জমিনের জন্য সেটি অতি কঠিন বিষয়। যখন তা তোমাদের ওপর আসবে অজান্তেই এসে যাবে। আপনাকে জিজ্ঞেস করতে থাকে, যেন আপনি তার অনুসন্ধানে লেগে আছেন। বলে দিন, এর সংবাদ বিশেষ করে আল্লাহর কাছেই রয়েছে। কিন্তু তা অধিকাংশ লোকই উপলব্ধি করে না। (সুরা আরাফ ১৮৭)

 

অনেকে জিজ্ঞেস করেন, কেয়ামত সংঘটিত হবে, কিন্তু কখন সংঘটিত হবে এর তারিখ বলা হয়নি কেন? মহান আল্লাহ কোরআনে এর উত্তর দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, 
  

কেয়ামত অবশ্যই আসবে, আমি তা গোপন রাখতে চাই; যাতে প্রত্যেকেই তার কর্মানুযায়ী ফল লাভ করে। (সুরা তহা ১৫)

 

কেয়ামতের যেসব আলামত এরই মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে

 

কেয়ামতের আলামত তিন প্রকার। ১. আলামতে বায়িদা- যা প্রকাশিত হয়ে গেছে। ২. আলামতে মুতাওয়াসসিতা- যা কিছু প্রকাশিত হয়েছে; কিন্তু শেষ হয়নি আরও হবে। ৩. আলামতে কাবিরা- যা বড় আলামত। একের পর এক প্রকাশিত হয়ে দ্রুত কেয়ামত হয়ে যাবে।
 
হাদিসের আলোকে আলামাতে বায়িদা বা যে আলামতগুলো প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলো ১৪টি। ১. নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমন। (বুখারি ৪৯৩৬) ২. নবীজির মৃত্যু। ৩. বাইতুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের হাতে বিজয়। ৪. হযরত আউফ বিন মালেক (রা.)-এর অসুস্থ হয়ে  শাহাদতবরণ। (ইবনে মাজাহ ৪০৪২) ৫. ওমর (রা.)-এর শাহাদত। (বুখারি ৫২৫) ৬. উসমান (রা.)-এর শাহাদত। (আলবিদায়া ওয়াননিহায়া ৭/১৯২)
 
৭. জঙ্গে জামাল, জঙ্গে সিফফীন, হাররাহ-এর ঘটনা। হযরত হুসাইন (রা.)-এর শাহাদত। (মুসতাদরাক হাকেম ৫৫৭৩, ৪৬১০)। ৮. তাতারি ফিতনা। (বুখারি ২৯২৮, ২৯২৭; শরহে নববি ১৮/৩৭)
 
৯. হেজাজ থেকে আগুন বের হওয়া। হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কেয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না হিজাজের জমিন থেকে এমন আগুন বের হবে, যা (ইরাকের) বসরা শহরের উটগুলোর গর্দান আলোকিত করে দেবে। (বুখারি ৭১১৮)
 
এ ঘটনা হয়েছে ৬৫৪ হিজরিতে। এক মাস পর্যন্ত স্থির ছিল। আগুনটির দৈর্ঘ্য ১২ মাইল ও প্রশস্ততা ছিল ৪ মাইল। যে পাহাড় পর্যন্ত তা পৌঁছত তা মোমের মতো গলিয়ে দিত। স্ফুলিঙ্গ থেকে বিজলির মতো ও সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো গর্জন শোনা যেত। মদিনার কাছে এসে তা থেমে যায়। আগুনের আলোয় রাতও দিনের মতো আলোকিত হয়েছিল।

১০. খারেজিদের উদ্ভব। (বুখারি ৬৯৩০) ১১. রাফেজিদের উদ্ভব। ১২. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার পরে পৃথিবীতে সর্বপ্রথম ইরাকে ফিতনা সৃষ্টি হবে। নবীজির এ ভবিষ্যদ্বাণী আজ সত্যে পরিণত হয়েছে।
 
১৩. অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, তীব্র ঠান্ডা ও দাবদাহসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যাপক হারে দেখা দেবে; এতে করে মাঠঘাট ফসলহীন হয়ে পড়বে। আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসলের উৎপাদন কী পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
 
১৪. হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মানুষের মধ্য থেকে যখন আমানতদারিতা উঠে যাবে, তখন তোমরা কেয়ামতের অপেক্ষায় থাকো। বর্তমানে ধোঁকাবাজি, প্রতারণা ও চুরি-ডাকাতি এত পরিমাণ বেড়ে গেছে যে, পৃথিবীতে আমানতদারিতা নেই বললেই চলে।

Share this post

PinIt
scroll to top