সহযোগী দেশগুলোর পাঠানো বার্তা পাচ্ছে তো আইসিসি?

Khulna-Gazette-News.-6-1.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক।।

 

 ঘরের মাটিতে বাংলাদেশকে বেশ হেসেখেলেই হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বকাপ প্রস্তুতির ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের কাছে ২০ রানের ব্যবধানে হেরেছে শ্রীলঙ্কা। ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও এই নেদারল্যান্ডসই হারিয়ে দেয় শিরোপাপ্রত্যাশী দক্ষিণ আফ্রিকাকে। কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচটা যেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের আদর্শ এক বিজ্ঞাপন।

বিশ্বকাপের তৃতীয় ম্যাচে ওমান এবং নামিবিয়ার মধ্যেকার লো-স্কোরিং এই ম্যাচও মন ভরিয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। রানের দেখা না মিললেও লো-স্কোরিং এই ম্যাচের রোমাঞ্চের রসদের ঘাটতি ছিল না কোনোক্রমেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাপুয়া নিউগিনির ম্যাচটাও নজর এড়ায়নি কারোরই। দুই বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের কড়া পরীক্ষা নিয়েছে সহযোগী দেশ পাপুয়া নিউগিনি।

সহযোগী দেশগুলোর এমন পারফরম্যান্স নিঃসন্দেহে একটা বার্তাই পাঠাচ্ছে আইসিসির কাছে। পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা এবং খেলার সুযোগ পেলে সহযোগী এই দেশগুলোও যে ভালো কিছু করে দেখাতে সক্ষম, সেটাই যেন বারবার জানান দিচ্ছে তারা। ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসের জয়, ওয়ানডে নেদারল্যান্ডসের বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় কিংবা আফগানিস্তানের উত্থান নিশ্চিতভাবেই বড় একটা বার্তা সহযোগী এবং পিছিয়ে পড়া ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে।

কিন্তু, বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি আদতে কোনো বার্তা গ্রহণ করছে কি না সেটাই বড় প্রশ্ন। ক্রিকেটে তিন মোড়ল দেশের আধিপত্য কারোরই অজানা নয়। তেমনই আর্থিক কাঠামো এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বিবেচনায় অন্যান্য দেশগুলোও যে পিছিয়ে আছে, সেটাও এক তিক্তসত্য।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা আইসিসির বর্তমান আর্থিক কাঠামো অনুযায়ী, সংস্থাটির লাভের ৩৮.৫ শতাংশ পাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড বিসিসিআই। গত বছরের জুলাই মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে আইসিসির বার্ষিক সভা শেষে আগামী চার বছরের জন্য লভ্যাংশ বণ্টন চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

আইসিসির লভ্যাংশ বণ্টনের এই হিসেবে ভারত পাবে প্রায় ২ হাজার ৪৫০ কোটি টাকারও বেশি। লভ্যাংশ বণ্টনের হিসেবে ভারতের ধারেকাছেও নেই কেউ। ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড পাবেন ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডের কাছে যাবে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। বণ্টনের হিসেবে বাংলাদেশ পাবে ৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ!

অপরিচিত হওয়ার কারণে অনেক দেশকেই ভুগতে হচ্ছে স্পন্সর সংকটে। একসময়ে বিশ্ব ক্রিকেটের পরিচিত মুখ জিম্বাবুয়েও এখন আছে স্পন্সর সংকটে। কয়েক বছর আগে দলটির ক্রিকেটার রায়ান বার্লের জুতার ছবি পোস্ট করে স্পন্সর চাওয়ার ঘটনা নিশ্চয়ই এখন পর্যন্ত মনে রেখেছে ক্রিকেট অনুরাগীরা।

তবে অন্যান্য বোর্ডের সাথে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের এমন বিস্তর ব্যবধানের কারণও ব্যাখ্যা করেছে আইসিসি। সংস্থাটির ভাষ্য, এই বন্টনের ক্ষেত্রে কাউকেই বাড়তি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। অনেকগুলো বিষয়কে কেন্দ্র করেই বেশি ভাগ পাচ্ছে ভারত।

আইসিসির এমন লভ্যাংশ বিতরণের সমালোচনা করেছে সহযোগী দেশগুলো। তাদের মতে একটি দেশের এত বড় অংশ নিতে নেওয়ার কারণে বাকি দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বর্তমান কাঠামো অনুযায়ী, মোট লাভের ৮৮ দশমিক ৮১ শতাংশ পাবে ১২ টি পূর্ণ সদস্য। বাকি ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ পাবে ৮২ টি সহযোগী দেশ।

সহযোগী দেশ এবং পূর্ণ সদস্যের মাঝে আইসিসির এমন ব্যবধান তুলনামূলক পিছিয়ে পড়া এসব দেশের ক্রিকেট উন্নয়নের জন্য বেশ বড় হুমকি। বিশেষ করে কিছুটা অপরিচিত হওয়ার কারণে অনেক দেশকেই ভুগতে হচ্ছে স্পন্সর সংকটে। একসময়ে বিশ্ব ক্রিকেটের পরিচিত মুখ জিম্বাবুয়েও এখন আছে স্পন্সর সংকটে। কয়েক বছর আগে দলটির ক্রিকেটার রায়ান বার্লের জুতার ছবি পোস্ট করে স্পন্সর চাওয়ার ঘটনা নিশ্চয়ই এখন পর্যন্ত মনে রেখেছে ক্রিকেট অনুরাগীরা।

আইসিসির লভ্যাংশ ভাগ করা নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বকাপ জেতা অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড সরাসরিই সমালোচনা করেছিলেন আইসিসির। ভারতেই এক অনুষ্ঠানেই তিনি বলছিলেন, ‘আমি মনে করি, সবার সবকিছুর সমান ভাগ পাওয়া উচিৎ। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে তাকান ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কি লিভারপুলের চেয়ে বেশি অর্থ পায়? আর্সেনাল কি চেলসির চেয়ে বেশি পায়? না, তারা সমান ভাগ পায়।’

নিজের দেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদাহরণ টেনে বলেছিলেন, ‘ভুলে যাবেন না, ওয়েস্ট ইন্ডিজে আমরা কিন্তু ১৪টি দ্বীপ, যেখানে অন্য দেশগুলো একটা দেশই। আমাদের ওখানে কোনো টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে প্রচুর খরচ হয়। কারণ নানা জায়গায় ভ্রমণ করতে হয়। তাই আমার মনে হয়, সবার সমান ভাগ পাওয়া উচিৎ। হ্যাঁ, নেতৃত্বে থাকলে হয়তো কিছু বেশি পেতে পারে…তাই বলে তিনটি দেশ মিলে বাকিদের অগ্রাহ্য করবে, সেটা অনুচিৎ।’

এরপরেও অবশ্য আইসিসি নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি। অন্তত ২০২৭ সাল পর্যন্ত নিজেদের এমন আর্থিক কাঠামো থেকে সরে আসার সম্ভাবনা নেই। বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা যখন ফুটবলের সম্প্রসারণে নিয়মিত কাজ করে চলেছে, তখন আইসিসি বিশ্বকাপকে আটকে রেখেছে ১০ থেকে ১৪ দলের মাঝে।

যদিও এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ২০ দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে আইসিসি। তাতেও বিশ্বকাপের সৌন্দর্য্যেও কিছুটা উন্নতি এসেছে বলেই মন্তব্য অনেকের। সেইসঙ্গে তুলনামূলক পিছিয়ে পড়া দলগুলোও সন্তুষ্ট বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে খেলার সুযোগ পেয়ে।

২০২৭ বিশ্বকাপে অবশ্য ১৪ দলের অংশগ্রহণের কথা জানিয়েছে আইসিসি। সেই বিশ্বকাপের পর থেকে সহযোগী দেশ আর নেদারল্যান্ডস-আফগানিস্তানের মতো পিছিয়ে পড়া ক্রিকেট বোর্ডকে আইসিসিকে কতখানি সাহায্য করে সেটাই দেখবার বিষয়।

Share this post

PinIt
scroll to top