দেশের তথ্য ডেস্ক।।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক অবস্থা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখীসহ নানা কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকার বেকাদায় পড়বে এমনই আলোচনা আছে বিএনপিতে। ক্ষমতাসীনদের ওপর চাপ আরও বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফের রাজপথের কঠোর আন্দোলনে ফিরতে চায় দলটি। এজন্য চলছে প্রস্তুতি। এরই অংশ হিসেবে তৃণমূল থেকে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে ধীরে ধীরে কেন্দ্রের দিকে আসতে চাচ্ছে বিএনপি।
বিএনপির উচ্চপর্যায়ের এক নেতা বলেন, এ করকম বিনা বাধায় আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসায় বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাঝে হতাশা নেমে আসে। তাদের মধ্যে ধারণা তৈরি হয় গত তিনবারের মতো এবারেও ক্ষমতাসীনরা মেয়াদ পূর্ণ করবে। কিন্তু অর্থনৈতিক অবস্থা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাসহ বেশ কয়েকটি কারণে ক্ষমতাসীনরা যে চাপে আছে তা আস্তে আস্তে দৃশ্যমান হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই চাপ আরও বাড়তে পারে। এই চাপ বাড়াতে বিএনপিও আবারও আন্দোলনে নামার বিষয়ে ভাবছে। তবে এই পরিস্থিতি তৈরি হতে আরও কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। এ সময়ের মধ্যে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে নিজেদের শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকীর ১৫ দিনের কর্মসূচি, এরপরে ঈদুল আজহা, বর্ষাকাল আসছে। এমন সময় আন্দোলন হবে না। এই সময়টিকে সাংগঠনিকভাবে শক্তি বৃদ্ধি এবং শরিকদলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করে যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তুতির জন্য কাজে লাগাতে চান তারা।
সূত্র মতে, আন্দোলনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে ফের রাজপথে নামানোর বিষয়টি। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে দলের চার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে মাঠে নামানো হয়েছে। তারা বিভিন্ন জেলা ও মহানগর এমনকি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সফর করে নেতাকর্মীকে চাঙা করার উদ্যোগ নেবেন। তারা বিগত আন্দোলনে গুম, খুন, পঙ্গু, গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সফরে সরকারের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহŸান জানিয়ে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিষয়গুলো সামনে এনে নেতাকর্মীদের চাঙা করতে দিকনির্দেশনা দেবেন।
জানা গেছে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর হামলা, মামলা, নির্যাতনসহ নানা কারণে নেতাকর্মীরা বিচ্ছিন্ন ছিলেন। এখন পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক। কিন্তু নেতাকর্মীরা আগের মতো সক্রিয় হতে পারছেন না। মনোবলও নেই আগের মতো। নিষ্ক্রিয় ও হতাশ নেতাকর্মীদের আগের অবস্থানে নিতে ফের আন্দোলনের উপযোগী করতে আপাতত জনমত তৈরির কর্মসূচির বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, সুশীল আর বুদ্ধিজীবীদের সক্রিয় করারও পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। এ লক্ষ্যে তৃণমূল থেকে ফের সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে গত রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে চার অঙ্গসংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় সহআন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, স্বনির্ভর-বিষয়ক সম্পাদক নিলোফার চৌধুরী মনি, নির্বাহী সদস্য শেখ রবিউল আলম রবি ও ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ উপস্থিত ছিলেন। পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৈঠক সূত্র জানায়, জেলা, মহানগর সফরে কোন দিকগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে, কোন বিষয়ে নেতাকর্মীর মনোযোগ সৃষ্টি করতে হবে, নেতাকর্মীর কোনো সমস্যা থাকলে সেসব সমাধানে কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে সেসব বিষয়ে নেতারা কথা বলেছেন। সেখানে বলা হয়েছে সংগঠনের নেতাকর্মীর খোঁজ নেওয়া, পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন এটাই জেলা সফরের মূল জিনিস। সর্বোপরি সংগঠনকে শক্তিশালী করাই হবে মূল লক্ষ্য।
এ বিষয়ে দলের সহআন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘তৃণমূলের নেতাকর্মীসহ সবার সঙ্গেই নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের জেলা-উপজেলা সফরের উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এর ফলে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙা হবে।’
জানা গেছে, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনায় এরই মধ্যে ছাত্রদল চলতি মাসে সিরাজগঞ্জ জেলা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মহানগর ও রাজশাহী জেলা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা, নওগাঁ, জয়পুরহাট, পাবনা জেলা, ফরিদপুর মহানগর ও জেলা, রাজবাড়ী জেলা এবং মাদারীপুর জেলায় কর্মী সম্মেলন করেছে। এসব সম্মেলনে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির উপস্থিত ছিলেন।
এ দিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দু’টি টিম পৃথকভাবে গত ১৭ মে থেকে কাজ শুরু করেছে। এর মধ্যে বগুড়া, নওগাঁ, রাজশাহীতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসানের নেতৃত্বে একটি টিম সফর করেছে।
অন্যদিকে সংগঠনের সভাপতি এস এম জিলানীর নেতৃত্বে আরেকটি টিম ময়মনসিংহ মহানগর ও দক্ষিণ জেলা সফর করে সেখানে বিগত আন্দোলনে আহত-নিহত নেতাকর্মীর পরিবারের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সান্ত¡না দেওয়া ছাড়াও এসব ইউনিটের নেতাকর্মীর সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এছাড় যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতারা সংগঠনকে সুসংগঠিত, শক্তিশালী ও গতিশীল করতে জেলা সফরে যাচ্ছেন। শুক্রবার থেকে এই সফর শুরু হয়েছে। দেশের ৮২ সাংগঠনিক জেলায় পর্যায়ক্রমে সফর করবে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল। এর জন্য যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটিকে ৩৫ টিমে বিভক্ত করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা সুবিধাজনক সময়ে তাদের নির্ধারিত জেলা কিংবা সাংগঠনিক ইউনিট সফর করবেন। জাতীয়তাবাদী কৃষক দল ও শ্রমিক দলও সারা দেশে কর্মিসভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ বিষয়ে কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, তাদের জেলা সফর কর্মসূচিতে তৃণমূলকে আরও সংগঠিত করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত করা হচ্ছে।