সোনাগাজীতে প্রবাসী নারীকে আঁটকে ধর্ষণ, চালক গ্রেফতার

sonagazi.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক ফেনী প্রতিনিধি :-  ফেনীর সোনাগাজীতে জোর পূর্বক বিয়ে, আটকে রেখে নির্যাতন। কথিত স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক নারী। শুক্রবার (২১ জুলাই) রাতে প্রবাসী মোমেনা আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

অভিযুক্ত মহিন উদ্দিন সোনাগাজী সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি এবং ওই ইউনিয়নের চরখোয়াজ গ্রামের বাসিন্দা। গত কয়েক বছর ধরে সে সোনাগাজী পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খোকনের ব্যাক্তিগত গাড়ি চালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। মামলার পর মহিন উদ্দিনকে শুক্রবার রাত আটটার দিকে পুলিশে সোপর্দ করেছেন মেয়র খোকন।

বিয়ের কাবিননামা ও নোটারি পাবলিক কার্যালয়ের এফিডেভিটের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তারা উভয়ে চলিত মাসের ৮ তারিখে বিয়ে করেছেন।যদিও ঘটনাটি সাজানো বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।

জানা গেছে, মোমেনা আক্তার সোনাগাজী পৌরসভার তুলাতুলি গ্রামের মৃত মহিন আহম্মেদের মেয়ে। ১২ বছর আগে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরহাজারী গ্রামের ছায়েদুল হকের ছেলে আব্দুল আউয়ালের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। আব্দুল আউয়াল যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। বিয়ের পর মোমেনা স্বামীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র চলে যান এবং নাগরিকত্ব লাভ করেন। তাদের ছয় বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

অভিযুক্ত মহিন উদ্দিনও বিবাহিত,তার দুটি সন্তান রয়েছে।

অভিযোগে মোমেনা আক্তার বলেন, চলিত মাসের ৭ তারিখে সন্তানকে নিয়ে দেশে ফেরার পর ফেনীতে বোনের বাড়িতে উঠি। পরদিন চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার জন্য ট্রাংক রোডে পৌঁছলে মহিন উদ্দিন তাকে কথা আছে বলে পাশের গলিতে নিয়ে যায়। ওই সময় আরও কয়েকজন তার সঙ্গে যোগে দেয়। তারা আমাকে ছুরি দেখিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে একটি বাসায় নিয়ে যায়। এ সময় এক ব্যাক্তি নিজেকে উকিল পরিচয় দিয়ে কয়েকটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে বলেন। রাজি না হলে তারা সবাই সঙ্গে থাকা মেয়ে ও আমাকে হত্যার হুমকি দেন। পরে প্রাণভয়ে আমি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হই। পরে তারা আমাকে ছেড়ে দিলে বাসায় গিয়ে বোনকে পুরো ঘটনা অবহিত করি। গত ১০ জুলাই ফেনী থেকে সোনাগাজী পৌরসভার তুলাতুলি গ্রামের নিজ বাড়িতে যাই।

১৪ তারিখে আমেরিকান গ্রীন কার্ড ও পাসপোর্ট ফটোকপি করার জন্য কোর্ট বিল্ডিংয়ের সামনের রাস্তায় অপেক্ষা করার সময় মহিন উদ্দিন ও তার দুই সহযোগী ঘটনাস্থলে এসে আমাকে ও সঙ্গে থাকা মেয়েকে জোরপূর্বক প্রাইভেট কারে তুলে ফেনীর দিকে নিয়ে যেতে থাকে। আমি চিৎকার করলে তারা আমার নাকে স্প্রে জাতীয় কিছু ধরলে অজ্ঞান হয়ে যাই। পরে তারা আমাকে ফেনীর একটি বাসাতে আটক রাখে। তিনদিন আটক রাখার সময়ে মহিন উদ্দিন আমাকে একাধিকবার ধর্ষণ করে এবং আমার নগ্ন ছবি ও ভিডিও ধারণ করে। পরে ওই ছবি আমার ভাই ও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা আমার স্বামীর কাছে পাঠায় সে। একপর্যায়ে আমি তার পা ধরে কান্নাকাটি করলে সে আমাকে ছেড়ে দেয়।

তবে অভিযুক্ত মহিন উদ্দিন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মোমেনা আক্তারের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চলে যাওয়ার পরও তার সঙ্গে সম্পর্ক অব্যহত থাকে। মোবাইলে তার স্বামী তাকে নির্যাতন করে বলে কান্নাকাটি করে। সে তার স্বামীকে তালাক দিয়ে আমাকে বিয়ে করার আশ্বাস দেয়। এর মধ্যে সে আমাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার টাকা চাইলে আমি তাকে কয়েক দফায় ১৭ লাখ টাকা প্রদান করি। গত বছর আগস্টে সে নোটারি পাবলিক ও চরহাজারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তার স্বামীকে তালাক দেয়। চলিত মাসের ৮ তারিখে আমরা নোটারি পাবলিক কার্যালয়ে এফিডেভিট করার পর কাবিনে স্বাক্ষর করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। এ সময় প্রমাণ হিসেবে গনমাধ্যম কর্মীদের কাছে কাবিননামা,নোটারি পাবলিকের এফিডেভিটের ফটোকপি ও স্বামীকে তালাক দেওয়ার ফটোকপি হস্তান্তর করেন। তিনি আরও বলেন, পরে বিষয়টি জানাজানি হলে তার সাবেক স্বামী ও দুই ভাই তাকে জিম্মি করে আমার বিরুদ্ধে মামলা করতে বাধ্য করে।

এ বিষয়ে সোনাগাজী মডেল থানার ওসি খালেদ হোসেন দাহিয়ান বলেন, অভিযুক্ত মহিন উদ্দিনকে শনিবার (২২ জুলাই) দুপুরে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার বাদীর শারীরিক পরীক্ষা শেষে তাকে জবানবন্দি গ্রহণের জন্য ফেনীর জুডিশিয়াল আদালতে নেওয়া হয়েছে।

Share this post

PinIt
scroll to top