দেশের তথ্য ডেস্ক।।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ৭০ শতাংশ রাজস্ব আদায় হয়েছে। অন্যদিকে অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের যে সংশোধিত লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে, তার চেয়ে ২৬ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা কম আদায় করতে পেরেছে এনবিআর। মূল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এই আদায় ৪৬ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা কম। প্রতিবছরের মতো এবারও অর্থবছরের শুরু থেকেই লক্ষ্য অর্জনে পিছিয়ে পড়েছে এনবিআর।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া ঋণের শর্ত হিসেবে এবার বাড়তি রাজস্ব আদায়ের শর্তও পূরণ করতে হবে সংস্থাটিকে। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, রাজস্ব খাতে সংস্কারের পাশাপাশি প্রতিবছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ০.৫ শতাংশ হারে বেশি রাজস্ব আদায় করতে হবে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত সব মিলিয়ে দুই লাখ ৮৭ হাজার ৩২১ কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায় হয়েছে। এই সময় সংস্থাটির রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল তিন লাখ ১৩ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা।
গত ১০ মাসে মাসওয়ারি হিসাবে গড়ে ২৮ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। চলতি অর্থবছরে সব মিলিয়ে চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল এনবিআরকে। পরে অবশ্য লক্ষ্য অর্জনে কোনো সম্ভাবনা না থাকায় এই লক্ষ্য কমিয়ে চার লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আমদানি, ভ্যাট ও আয়কর—এই তিন খাতের মধ্যে কোনোটিই গত ১০ মাসে লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি।
এর মধ্যে আমদানি পর্যায়ে ৮২ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা, ভ্যাটে এক লাখ ১১ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা ও আয়করে ৯৩ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছে এনবিআর। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ থেকে অনেক পিছিয়ে থাকলেও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪.৭৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে। এর মধ্যে আয়কর আদায়ে সর্বোচ্চ ১৯.৩৩ শতাংশ, ভ্যাটে ১৩.৭৯ শতাংশ ও আমদানি পর্যায়ে ১১.৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, আইএমএফের অগ্রাধিকারের বিষয় ছিল উন্নত বিশ্বের মতো ধীরে ধীরে আয়কর আদায় বাড়ানো। আয়কর আদায়ে প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি।
সেই সঙ্গে ভ্যাটের প্রবৃদ্ধিও লক্ষ্যণীয়। তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতি, ডলার সংকট বিবেচনায় আমদানি কমেছে। যার প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ে।
অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণত অর্থবছরের শেষ দিকে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পায়। তবে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে এনবিআরের পরামর্শ নেওয়া কিংবা সক্ষমতা বিবেচনা করা হয় না।
লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে না পারলে সরকারের বিভিন্ন খাতে খরচ কমাতে হয়। খরচ কমানোর অংশ হিসেবে বরাদ্দ কমানো হয় উন্নয়ন প্রকল্পে। কারণ, বেতন-ভাতা, ঋণের কিস্তি পরিশোধ, ভর্তুকি—এসব খাতে সরকারের খরচ কমানোর সুযোগ নেই।
অথচ চলতি অর্থবছর এনবিআরকে তিন লাখ ৯৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। অর্থ বিভাগের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হলেও এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অসম্ভব রাজস্ব আদায়ের নানা কৌশল আইএমএফের কাছে তুলে ধরেছিল এনবিআর।
অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অতিরিক্ত ২৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায় করতে হতো। এর মধ্যে আয়কর খাতে ৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা, ভ্যাট থেকে তিন হাজার ৯৫০ কোটি টাকা ও ১১ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা কাস্টমস খাতে।
সে সময় এনবিআরের পক্ষ থেকে রাজস্ব আদায়ের নানা পরিকল্পনা জানানো হয়েছিল। শুল্ক অনুবিভাগের পরিকল্পনার কেন্দ্রে ছিল পেট্রোবাংলার বকেয়া আট হাজার ৮০২ কোটি টাকা আদায়। এ ছাড়া আমদানি পর্যায়ে শুল্কহার পরিবর্তন ও অন্যান্য পদক্ষেপের মাধ্যমে বাকি টাকা আদায় করার পরিকল্পনা ছিল অনুবিভাগটির। আয়কর বিভাগের পরিকল্পনায় ছিল ভূমি রেজিস্ট্রেশন, ভ্রমণ কর, টোব্যাকো কর, পরিবেশ সারচার্জ, করের পরিধি বৃদ্ধি, কার্বোনেটেড বেভারেজ ও বকেয়া কর আদায়ের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা আদায়। ভ্যাট বিভাগ সিগারেটের করহার বৃদ্ধি, মোবাইল ফোন, পলিপ্রপাইলিন স্ট্যাপল ফাইবার, বল পয়েন্ট কলম, সফটওয়্যার, এলপিজির অব্যাহতি উঠিয়ে ও ইএফডি মেশিন স্থাপনের মাধ্যমে অতিরিক্ত লক্ষ্য পূরণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল।