মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে

5-12.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক।।

দিন দিন সঞ্চয়পত্রে মানুষের বিনিয়োগ কমছে। ফলে নিট বিক্রি কমার ধারা অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ গত মার্চে নিট বিক্রি কমেছে তিন হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) নিট বিক্রি কমার পরিমাণ সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক মানুষ নতুন করে আর সঞ্চয় করতে পারছে না। তারা বাধ্য হয়ে সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকে আমানতের সুদের হার যখন বাড়ছে, তখন সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ আকর্ষণহীন হয়ে পড়েছে। ব্যাংকে আমানতের সুদহার বেশি হলে সঞ্চয়পত্রে মানুষের বিনিয়োগ কমবেই।

এতে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিতে প্রভাব পড়বে। আবার নানা কড়াকড়ির কারণেও সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মানুষ।
চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের প্রতিবেদন বলছে, সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে নিট বিক্রি হয়েছে তিন হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা।

আগের মাসে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল এক হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে নিট বিক্রি কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়েও নিট বিক্রিও কম ছিল। তবে ওই সময় এর পরিমাণ ছিল চার হাজার ১৬২ কোটি টাকা।
গত অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৫ হাজার কোটি টাকা।

তবে বিক্রি কমতে থাকায় সংশোধিত বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ধরা হয় ৩২ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে নিট বিক্রি কমে দাঁড়ায় প্রায় তিন হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের পুরো সময়ে সঞ্চয়পত্রের মোট বিক্রি হয় ৮০ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। একই সময়ে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর পরিমাণ ছিল ৮৪ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। এর মানে পুরো অর্থবছরে এই খাত থেকে সরকার এক টাকাও ঋণ পায়নি। মূলত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে বেশি ভাঙানোর প্রবণতা বাড়তে থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকারের নেওয়া ঋণের পরিমাণ ২০২৩ সালের মার্চে ছিল তিন লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের মার্চ শেষে দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৫৪ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্র থেকে ভাঙানো বাবদ (নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে বা মেয়াদান্তের আগে) আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে নিট বিক্রি বলা হয়। নিট বিক্রিকে সরকারের ধার বা ঋণ হিসেবে গণ্য করা হয়।

২০২১-২২ অর্থবছরেও সঞ্চয়পত্র থেকে তুলনামূলক কম ঋণ পেয়েছিল সরকার। পুরো অর্থবছরে ৩২ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে নিট ঋণ আসে ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। অথচ করোনার পরও ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ হয়েছিল প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। এটি তার আগের অর্থবছরে ছিল মাত্র ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা।

সঞ্চয়পত্রে তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য বিনিয়োগ করতে হয়। মেয়াদপূর্তির আগে সঞ্চয়পত্র ভাঙানো হলে মুনাফার হার সর্বনিম্ন ৭.৭১ শতাংশ। মেয়াদ ও টাকার পরিমাণের ওপর নির্ভর করে সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ ১১.৭৬ শতাংশ মুনাফা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে যাদের এ খাতে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে, তাদের মুনাফা কমে যায়।

বর্তমানে পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থাকলে রিটার্নের সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দেয় সরকার। তার আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ সীমা কমিয়ে আনা হয়। এ ছাড়া ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎস করের হার ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। দুর্নীতি বা কালো টাকায় সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধে ক্রেতার তথ্যের একটি ডাটাবেইস তৈরি করা হয়েছে।

বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১.৫২ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১১.৭৬ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১১.২৮ শতাংশ, তিন বছর মেয়াদি ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১.৪ শতাংশ।

Share this post

PinIt
scroll to top