দেশের তথ্য ডেস্ক।।
কোচের কৌশল নিয়ে সমালোচনামুখর ছিলেন কাজী সালাউদ্দিন। তবে হাভিয়ের কাবরেরার কণ্ঠে এখন সন্ধির আভাস। কোন শর্তে সেই সন্ধি, এ বছর চুক্তি শেষ হতে যাওয়া কাবরেরার ভবিষ্যত্ ভাবনাটাই বা কী, নিজের বা দলের পারফরম্যান্স নিয়ে কী তাঁর মূল্যায়ন—এসব বিষয়েই তিনি কথা বলেছেন কালের কণ্ঠের শাহজাহান কবির-এর সঙ্গে।
প্রশ্ন : জুনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঘরের মাঠে ম্যাচ।
সেই ম্যাচে মেলবোর্নে প্রথম লেগের ভিন্ন কিছু কি দেখা যাবে?
হাভিয়ের কাবরেরা : আমাদের লক্ষ্যের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের ফল খুব একটা সম্পর্কিত নয়। তবে অবশ্যই চেষ্টা থাকবে আরো ভালো খেলার। মেলবোর্নে কিছু ভালো জিনিস ছিল, যেটি আমরা ঘরের মাঠে লেবাননের বিপক্ষে কাজে লাগাতে পেরেছি। এই ম্যাচ থেকেও তেমন ইতিবাচক কিছু নিতে চাই, যা লেবাননের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচে আমাদের সাহায্য করবে।
প্রশ্ন : ফিলিস্তনের সঙ্গে অ্যাওয়ে ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আশা করেছিলেন, কিন্তু বড় ব্যবধানে হারতে হয়েছে।
কাবরেরা : সেই ম্যাচটি থেকে আমাদের শেখার আছে। আমরা আক্রমণাত্মক মনোভাবে ম্যাচটা শুরু করেছিলাম। খুব সাহসী ছিলাম।
৪৫ মিনিট পর্যন্ত তা ইতিবাচকও ছিল। কিন্তু এরপর আমাদের নিজেদের একটু লাগাম টানা প্রয়োজন ছিল, আমাদের সুরক্ষার কথাটাও ভাবতে হতো। কিন্তু সেটা না করে আমরা একইরকমভাবে ওপরে উঠেছি, প্রেসিং করার চেষ্টা করেছি। তাতে বিরতির আগেই দুটি গোল হজম করি। খেলোয়াড়রা তখনই মনোবল হারিয়ে ফেলে।
অবশ্যই চাইব সামনে এমন কিছু যেন না হয়। ওখানে ৪০-৪৫ মিনিট ইতিবাচকই ছিল। কিন্তু এরপর যা হয়েছে সেখান থেকে আমাদের শেখার আছে। সাহসী থেকেও এমন পরিস্থিতি কী করে এড়ানো যায়, সেই ভারসাম্যটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।
প্রশ্ন : লেবাননের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ভালো করেছেন, কিন্তু প্রতিপক্ষের মাঠে খেলা নিশ্চয় ভিন্ন।
কাবরেরা : এখানে কতগুলো ব্যাপার আছে। আমরা ওদের মুখোমুখি হওয়ার আগে ওরা ফিলিস্তিনের বিপক্ষে খেলবে। জিতলে আমাদের হারিয়ে ওদের সুযোগ থাকবে এশিয়ান কাপে যাওয়ার। আর হারলে আমাদের বিপক্ষে ওদের খুব বেশি কিছু পাওয়ার থাকবে না। তো, এই ব্যাপারগুলোর প্রভাব থাকবে ম্যাচে। তবে আমাদের লক্ষ্য অ্যাওয়েতে আরো ভালো করা। ঘরের মাঠে আমরা শক্তিশালী, অ্যাওয়েতেও আমাদের উন্নতি করতে হবে। ফিলিস্তিন ম্যাচের মতো খেলার অর্ধেকেই নিঃশেষ হয়ে যেতে চাই না। আমরা কিছু পেতে চাই লেবাননের বিপক্ষে এই ম্যাচে।
প্রশ্ন : তাহলে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ম্যাচের কৌশলেই কিছুটা ভুল ছিল, এটাই এখন আপনি মনে করছেন?
কাবরেরা : হোম ম্যাচেও আমরা সাহসী ছিলাম। তবে সতর্ক ছিলাম এর বিপরীতে কী হতে পারে সেটা নিয়ে। এই সতর্কতা আমাদের সাহায্য করেছে। ধরুন, সাফ অঞ্চলের দলগুলোর বিপক্ষে ঝুঁকি নিয়েও আমরা বিপদে পড়তে পারি, কিন্তু ফিলিস্তিনের মতো মধ্যপ্রাচ্যের দলগুলোর বিপক্ষে সেই ঝুঁকি নিলে বিপদের আশঙ্কা আরো বেশি থাকে। আমাদের আক্রমণাত্মক হতে হবে, কিন্তু সেটি প্রতিপক্ষ বিবেচনায় নিয়ে। ফিলিস্তিন এই মুহূর্তে ওদের সেরা সময় পার করছে। তাদের বিপক্ষে আমরাই ভুল করেছি। আর সেটা আমার থেকেই শুরু। সেই ভুল থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি।
প্রশ্ন : কাজী সালাউদ্দিন কি এই বিষয়টিই শোধরানোর কথা বলেছেন আপনাকে?
কাবরেরা : উনি মিডিয়ায় কী বলেছেন, আমি ঠিক জানি না। সভাপতি হিসেবে উনি মতামত দিতেই পারেন। আমাকেও উনি উনার কথা বলেছেন, আমার কথা শুনেছেন। পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বলেছেন, গেম প্ল্যান কখনো কাজ করে কখনো করে না, সেটা থেকে আমরা শিখি। আমাদের সংশোধনের সুযোগ আছে। অবশ্যই আমরা ভুল করি। তবে পরে যেন তা আর না হয়, আমাদের লক্ষ্য তো আরো ভালো দল হওয়া।
প্রশ্ন : তার মানে সভাপতির সঙ্গে আলোচনা ছিল ইতিবাচক?
কাবরেরা : তিনি আমার কাছে কী চান, সেটা সরাসরি বলেছেন। এটা স্বাভাবিক। তিনি দলের কাছে আরো ভালো কিছু চাইবেন, আমার কাছেও তা চাইবেন। আমরা আরো ভালো দল হতে চাই, আমরা পরের ধাপে যেতে চাই। আমরা আগামী বছর সাফ জিততে চাই। সে জন্য আমাদের ভালো করার চাহিদা বাড়ছে, সভাপতিও তাই চাচ্ছেন। আগামী সাফে বাংলাদেশকে যেন আরো ভালো দল হিসেবে দেখা যায়।
প্রশ্ন : আপনি নিশ্চয় জানেন, সর্বশেষ জেমি ডে, তার আগে ডাচ লোডউইক ডি ক্রুইফ—কেউই সাফে দ্বিতীয়বার সুযোগ পাননি। আপনার চুক্তি এ বছর শেষ হচ্ছে। আপনি সেই সুযোগ পাবেন বলে মনে করেন?
কাবরেরা : আমি পেশাদার। আমি দল নিয়ে ভাবি। আমি এখানে থাকব কি থাকব না সেটা আমার ভাবনা না। গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমার যত দিন চুক্তি আছে তত দিনে দলটা যেন উন্নতির পথে থাকে। স্বলমেয়াদি মানসিকতায় আমি বিশ্বাসী না। আমরা পরের সাফের জন্য এখনই দল তৈরি করছি। এশিয়া কাপ বাছাইয়ের পরের ধাপটার জন্যও। আমার লক্ষ্য এটাই। এরপর ফেডারেশন ঠিক করবে আমি সঠিক ব্যক্তি কি না। না হলে অন্য কোচ আসবে। কাজ করবে। ফুটবলে এটাই হয়ে থাকে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশ দলকে ঘিরে এ বছর আপনার পরিকল্পনা কী?
কাবরেরা : এই গ্রুপ পর্বটা যতটা ভালোভাবে সম্ভব শেষ করতে চাই। দুটি কঠিন ম্যাচ বাকি আছে। এখানে নিজেদের উন্নতির ধারা ধরে রাখাই মূল লক্ষ্য। আশা আছে লেবাননের বিপক্ষে পয়েন্টও পাব। তবে অগ্রাধিকার উঁচু মানে পারফরম করা। এরপর সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বরে তিনটি ফিফা উইন্ডো আছে। আমরা পরিকল্পনা করছি প্রীতি ম্যাচ খেলার, যেগুলো আমাদের আগামী মার্চে এশিয়ান বাছাইয়ের জন্য তৈরি করবে। বছর শেষে খুব গুরুত্বপূর্ণ উইন্ডো এটি। আমাদের ভালো দল খুঁজতে হবে। র্যাংকিংয়ে ১৩০, ১৪০ বা ১৫০-এর দিকের দলগুলো দেখব, যারা খুব এগিয়ে নয় তবে চ্যালেঞ্জিং। আমাদের চোখ থাকবে জয়ে। সেটি পরের বছরকে লক্ষ্য ধরে। কারণ, ২০২৫ সাল আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।