দেশের তথ্য ডেস্ক।।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অস্বাভাবিক উষ্ণতা ও তীব্র দাবদাহের কারণে বঙ্গোপসাগরের ওপরের স্তরে ইলিশসহ সব প্রজাতির মাছের বিচরণ কমেছে। এতে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না কাঙ্ক্ষিত মাছ। এক মাসের বেশি সময় ধরে মাছ শিকার না হওয়ায় একদিকে ঘাট শ্রমিকরা বেকার, অন্যদিকে লোকসানে মৎস্যবন্দর আলীপুর ও মহিপুরের হাজারো ট্রলার মালিক ও ব্যবসায়ী।
গত শনিবার সকালে সরেজমিনে কলাপাড়ার মৎস্যবন্দর আলীপুর ও মহিপুরে গিয়ে দেখা গেছে, শত শত ট্রলার সারি সারি নোঙর করে আছে শিববাড়িয়া নদীর দুই তীরে।
একসময়ে বেচা-বিক্রিতে সরব থাকা মাছের আড়তগুলোতে এখন সুনসান নীরবতা। মাছ শিকারে না গিয়ে সেখানে অলস সময় কাটানোর কারণ জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর মাঝি জানান, চার দিন ধরে বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। তাই সাগরে টিকতে না পারায় নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে তীরে অবস্থান নিয়েছেন। এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি আনোয়ার বলেন, সাগরের অবস্থা মোটেও ভালো নয়।
অনাবৃষ্টি আর তাপ বেড়ে যাওয়ায় সামুদ্রিক মাছ সাগরের গভীরতম স্তরে চলে গেছে। এতে উপকূলীয় অঞ্চলের কাছাকাছি মাছের চলাচল কমেছে। এ কারণে তাঁদের জালে মাছ ধরা দিচ্ছে না। বৃষ্টিপাত ও তীব্র বাতাস প্রবাহিত না হলে মাছের দেখা না-ও মিলতে পারে।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ৪৭৫ প্রজাতির মাছের ভাণ্ডার বঙ্গোপসাগর। প্রতিবছর এপ্রিল ও মে মাসে কমবেশি বৃস্টিপাত হয় উপকূলীয় অঞ্চলসহ সমুদ্রে। বর্ষাকে ঘিরে সমুদ্রের বিভিন্ন পয়েন্টে মাছের বিচরণ থাকে ব্যাপক। চলতি বছর কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সমুদ্রের ওপরের স্তরে মাছের বিচরণ কমেছে। এ কারণে মাছের দেখা মিলছে না জেলেদের জালে।
আলীপুর মৎস্যবন্দরের ঘাট শ্রমিক মো. ইব্রাহীম বলেন, ‘যখন বন্দরে মাছ বোঝাই করে ট্রলার আসে, তখন আমাদের হাজারো শ্রমিকের কথা বলার সময় থাকে না। প্রতি ট্রলার থেকে ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ খালাস করে প্রতিদিন প্রত্যেকে এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করি। কিন্তু এক মাস ধরে জেলেদের জালে মাছ ধরা না পড়ায় আমরা আর্থিক সংকটে আছি।’
আলীপুর মৎস্য বন্দরের মোল্লা ফিশের মালিক মো. মাসুদ মোল্লা বলেন, ‘গত রমজান মাসের মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত ধারাবাহিক লোকসানে কলাপাড়ার আড়াই হাজার ট্রলার মালিক।’
আলীপুর পাইকারি মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আয়নাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টানা এক মাসের বেশি সময় ধরে জেলেদের জালে মাছের দেখা না দেওয়ায় আমরা পঙ্গু হয়ে গেছি। আমাদের এখন প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রণোদনা ও সহজ শর্তে ঋণ।’
এ ব্যাপারে মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা মো. আশিকুর রহমান বলেন, এ বছর বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং সমুদ্রে তীব্র গরম ও উষ্ণতা বাড়ায় মাছের বিচরণ কমেছে। অনুকূল আবহাওয়া ও তাপমাত্রা না থাকায় সামুদ্রিক মাছ গভীর সমুদ্রে চলে যেতে পারে বলে প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে।
ঢাকা শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকোয়াকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, সমুদ্রকে ঘিরে ব্লু ইকোনমির সক্ষমতা অর্জনের ধারাবাহিকতা অর্জন করতে হলে জেলেদের পেশাকে টিকিয়ে রাখা দরকার। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সামুদ্রিক মাছ আহরণে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে দেশের জেলেদের। সেটিকে মাথায় রেখেই সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।