দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর চুয়াডাঙ্গা-যশোরে স্বস্তির বৃষ্টি

chuadanga2-20240506193158.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক।।

 টানা এক মাসেরও বেশি মৃদু থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহের পর অবশেষে  চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে স্বস্তির বৃষ্টি নেমেছে। ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে শিলাবৃষ্টির দেখা মিলেছে চুয়াডাঙ্গায়। তীব্র গরমের পর এই বৃষ্টিতে জনজীবনে নেমে এসেছে স্বস্তি। প্রকৃতি ফিরে পেয়েছে প্রাণ।


চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (৬ মে) সন্ধ্যা ৬টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আজও জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। বিকেল ৩টা ৩৭ মিনিট থেকে বিকেল ৫টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত জেলায়  বৃষ্টিপাতের পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে ২৪ মিলিমিটার।

এর আগে গত ২৩ এপ্রিল রাত ১টা ১০ মিনিট থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত জেলায় ১ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।

এদিকে অনেক দিন পর বৃষ্টি পেয়ে অনেককেই ভিজতে দেখা গেছে। কেউ কেউ সড়কে, বাড়ির ছাদে ভিজছেন। তবে সদরের বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যে ধান কৃষকরা কর্তন শুরু করেছেন। তারা কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

চুয়াডাঙ্গা সদরের কুন্দিপুর গ্রামের কয়েকজন কৃষক ঢাকা পোস্টকে বলে, আজ সকালে ধান কেটেছি। মাঠে এখনো ধান আছে। দুপুরে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো। কালও যদি বৃষ্টি হয় তাহলে ক্ষতি হবে আমাদের।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি অফিসার মো. আনিছুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে আমরা সদরের কৃষকদের আগে থেকেই জানিয়েছি। প্রায় ৯৫ শতাংশ কৃষক ধান কর্তন করে ঘরে তুলেছেন। যেগুলো এখনো মাঠে আছে তাতে এই বৃষ্টিতে ক্ষতি হবে তা বলা যাবে না।

সদরের দীননাথপুর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ সকালে ১ বিঘা ২ কাঠা মাঠের ধান কেটেছি। যদি দুই-তিন দিন বৃষ্টি হয় তাহলে বিচুলি করা সম্ভব হবে না।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগামী ১২ মে পর্যন্ত জেলায় কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

অন্যদিকে শীতের পর টানা এক মাসেরও অধিক সময় তাপদাহে পুড়েছে যশোর। অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি নেমেছে। সোমবার (৬ মে) বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে ঝোড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টিপাত শুরু হয় জেলায়। প্রায় আধাঘণ্টা বর্ষণ অব্যাহত থাকে।

এর আগে সকাল থেকেই মেঘাচ্ছন্ন ছিল গোটা শহর। দুপুর গড়িয়ে বিকেল ৪টা থেকে ধীরে ধীরে কালো মেঘে ছেয়ে যায় পুরো আকাশ। এরপর দমকা ঝোড়ো হাওয়ার সাথে শুরু হয় বৃষ্টি। যশোর শহর ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলায় একই সময়ে বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া গেছে।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, গত ১৯ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত যশোরের তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রির ওপরে। এর মধ্যে ৩০ এপ্রিল সারাদেশে মধ্যে তিন দশকের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এছাড়া গত এক মাসে একাধিকবার সারাদেশে মধ্যে যশোরের তাপমাত্রা পারদ সর্বোচ্চ স্থানে ছিল।

সোমবার যশোরে আধাঘণ্টার বৃষ্টিতে অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। মৌসুমের প্রথম কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিতে ভিজেছেন অনেকে। অনেক পথচারীকে বৃষ্টিতে ভিজে আনন্দ উল্লাস করতে দেখা গেছে।

শহরের এমএম আলী সড়কে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখা যায় তিন শিক্ষার্থীকে। তাদের মধ্যে সাদিয়া আফরিন নামে এক ছাত্রী বলেন, আজকে বৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছে অনেকদিন বৃষ্টি দেখি না। এক ফোঁটা বৃষ্টি গায়ে পড়ায় মনটা আনন্দে ভরে গেল। এটা অন্যরকম একটা অনুভূতি।

নাসরিন জাহান নামে আরেক ছাত্রী বলেন, অনেকদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম যে মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিতে ভিজবো। আজ কোচিং থেকে ফেরার পথেই বৃষ্টি শুরু হলো। এজন্য বান্ধবীরা সকলে মিলে ভিজতে ভিজতে বাসায় যাচ্ছি।

সলেমান শেখ নামে এক অর্ধবয়স্ক রিকশাচালক বলেন, অনেকদিন ধরে ৪০ ডিগ্রি, ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে রিকশা চালিয়েছি। এর মধ্যে অনেকবার গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আজ বৃষ্টি দেখে স্বস্তি পাচ্ছি। গরম অনেকটাই কম। শীতল বাতাসে রিকশা চালাতে সমস্যা হচ্ছে না।

শহরের তজবীর হলের পাশে আমির হোসেন নামে এক চা-দোকানী বলেন, এই এক মাসের বেশি সময় ঘরেও শান্তি পাচ্ছিলাম না, বাহিরেও শান্তি পাচ্ছিলাম না। ফ্যানের বাতাসেও বাহিরের গরম টেনে নিয়াসতো। আজকে শান্তির ঘুম হবে।

যশোর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, সোমবার যশোরে এক মিলিমিটারেরও কম বৃষ্টিপাত হয়। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার।

Share this post

PinIt
scroll to top