মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী আলীনগর বিন্দারানী দিঘীরপাড় বাজার শেডঘর উন্নয়নের কাজ থমকে আছে তিন বছর ধরে। দেশব্যাপী গ্রামীণ বাজার অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এ বাজার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সমাপ্তে গড়িমসির অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
২০১৯-২০২০ অর্থবছরে শুরু হওয়া প্রায় সাড়ে তিন কোটি ৩৯ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে বিন্দারানী দিঘীরপাড় বাজার শেডঘর উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ বছরখানেক আগে শেষ হলেও বর্তমানে থমকে থাকা প্রকল্পে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই কাজ বাস্তবায়নে। নানা জটিলতায় সরকারের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের এতো বড় একটি উন্নয়নমূলক কাজের মেয়াদের দুই বছর পেরিয়ে আরো এক বছর চলে গেলেও এ কাজ বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এতে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীসহ এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সরেজমিন প্রকল্প এলাকা ঘুরে স্থানীয়দের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সরকারি এ বাজারটি উন্নয়নের জন্য ২০২০ সালের অক্টোবরে তিন কোটি ঊনচল্লিশ লক্ষ পঁচাত্তর হাজার টাকা ব্যয়ে কাজ শুরু করে শ্রীমঙ্গলের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সেলিম কন্সট্রাকশন। ওয়ার্ক অর্ডার পেয়ে কাজ শুরুর এক বছরের মধ্যে ঠিকাদার শেডঘরের পাইলিংয়ের কাজ সমাপ্ত করেন। পরবর্তিতে করোনা মহামারির সময়ে কাজের গতি কমে আসে।
এই প্রকল্পটির কাজের অগ্রগতি দেখতে এলজিইডি’র প্রকল্প পরিচালক স্বপন কান্তি ২০২২ সালে বিন্দারানী দিঘীরপাড় বাজার পরিদর্শন করেন। এসময় কাজের ডিজাইনে ভুল ও জেলা প্রশাসকের অনাপত্তিপত্র (এনওসি) না নিয়ে কাজ করায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে চলমান কাজের প্রথম ধাপের বিল পরিশোধ করেনি এলজিইডি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজের বিল না পেয়ে বাকি কাজ অসমাপ্ত রেখে বছর খানিক থেকে মালপত্র ও শ্রমিক নিয়ে প্রকল্প সাইট থেকে চলে যায়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল শেষ হলেও বর্তমানে বাজারের কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন না পাওয়ায় আর্থিক সংকটে রয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মখলিছ মিয়া, ফয়জুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তিরা জানান, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী এই বাজারে নিয়মিত ব্যবসা পরিচালনা করতো। বাজারের উন্নয়ন কাজের কারণে আমাদের দোকানপাট প্রকল্পে চলে গেলে আমরা বর্তমানে ব্যবসা থেকে বঞ্চিত রয়েছি। গত তিন বছর থেকে কোন রকমের ক্ষতিপূরণ না পাওয়া ও চলমান কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় চরম হতাশায় রয়েছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য তাহির আলী জানান, উন্নয়ন কাজের জন্য সরকারি এই বাজারে বর্তমানে দোকানপাট বসাতে পারছেন না স্থানীয়রা। এতে এলাকার মানুষজন দূরবর্তী রবিরবাজার, মুরইছড়া বাজারে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী ক্রয়-বিক্রয় করছেন।
এই কাজটি সম্পূর্ণ না হওয়ায় স্থানীয়রা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও স্থানীয় বাসিন্দা কমরেড মো. আব্দুল লতিফ জানান, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে জরাজীর্ণ এই বাজারের শেডঘরটি প্রায় সাড়ে তিন কোটি ব্যয়ে উন্নয়ন কাজ আসে। কিন্তু প্রকল্পে মেয়াদ শেষ হয়ে এক বছর অতিবাহিত হলেও কাজের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না থাকায় আমরা খুবই হতাশ।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সেলিম কন্সট্রাকশনের স্বত্ত্বাধিকারী মো. সেলিম মিয়া বলেন, ২০২০ সালে বিন্দারানী দিঘীরপাড় বাজার উন্নয়ন কাজ ওয়ার্ক অর্ডার পেয়ে কাজ শুরু করি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বাজার উন্নয়নের জন্য এনওসি না নিয়ে এ কাজ আমাদেরকে দিয়ে করিয়েছে। প্রকল্প পরিচালক স্বপন কান্তি বাজারের কাজ সরেজমিন দেখতে আসলে কাজের ডিজাইনের ভুল ধরা পড়ে। প্রকল্পের কাজে কর্তৃপক্ষের তদারকিতে আমি প্রায় দেড় কোটি টাকার উপরে বিনিয়োগ করি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তিন বছরে আমাকে একটি বিলও প্রদান করেনি। ডিজাইনের ভুল থাকলে তা এলজিইডি’র। এজন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ দায়ভার আমি কেন নেব। ওনারা যেভাবে ওয়ার্ক অর্ডার দিয়েছেন আমি সেভাবে কাজ করিয়েছি। তিনি আরো বলেন, কাজ শুরুর সময়ে সিডিউলে যে মূল্য ধরা হয়েছে তা বর্তমান সময়ে দ্বিগুণ হয়েছে মালামালের দাম বৃদ্ধির কারণে। একদিকে জিনিসপত্রের বাজারমূল্য বৃদ্ধি অন্যদিকে এখন পর্যন্ত কোনো বিল না পেয়ে আমি বাকি কাজ কিভাবে করবো। কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করে প্রকল্পের ডিজাইন পরিবর্তন করে নতুন ডিজাইনের কপি না পাওয়াতে বর্তমানে কাজ বন্ধ রয়েছে।
এলজিইডি’র কুলাউড়া উপজেলা প্রকৌশলী তারেক বিন ইসলাম বলেন, বিন্দারানী দিঘীরপাড় বাজারের উন্নয়ন কাজের ডিজাইনে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তিত ডিজাইন অনুযায়ী পুনরায় আবার কাজ শুরু হবে।
এলজিইডি’র মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ আব্দুল্লাহ জানান, ডিজাইন পরিবর্তন হওয়ায় সঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে বিলম্ব হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহমুদুর রহমান খোন্দকার জানান, বিন্দারানী দিঘীরপাড় বাজার উন্নয়ন কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাপ্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করবো।