গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলের ভেতর গভীরতম হামলা চালাল হিজবুল্লাহ

attack-20240424113334.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক।।  ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় টানা প্রায় সাত মাস ধরে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। এর জেরে লেবানন সীমান্তেও হামলার মুখে পড়েছে ইহুদিবাদী এই দেশটি।

লেবাননের ইরান-সমর্থিত শক্তিশালী সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। এমন অবস্থায় হিজবুল্লাহ ইসরায়েলি ভূখণ্ডের আরও অভ্যন্তরে হামলা চালিয়েছে।

হিজবুল্লাহর এই হামলাকে গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে গভীরতম আক্রমণ বলে মনে করা হচ্ছে। বুধবার (২৪ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ বলেছে, একজন যোদ্ধাকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে তারা একর শহরের উত্তরে ইসরায়েলি ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে হিজবুল্লাহর এই হামলাকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে সবচেয়ে গভীর আক্রমণ চিহ্নিত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ বলেছে, হিজবুল্লাহ একর ও নাহারিয়ার মধ্যবর্তী দুটি ইসরায়েলি ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে ‘ডিকয় এবং বিস্ফোরক ড্রোন ব্যবহার করে সম্মিলিত হামলা চালিয়েছে’।

ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠীটি বলেছে, ইসরায়েলি হামলায় তাদের একজন যোদ্ধা নিহত হওয়ার প্রতিশোধ হিসেবে তারা এই হামলা চালিয়েছে। হামলার পর তারা একটি স্যাটেলাইট ছবিও প্রকাশ করেছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, হিজবুল্লাহ হামলা চালিয়ে তাদের কোনও স্থাপনাকে আঘাত করেছে কিনা সে বিষয়ে তারা অবহিত নয়, তবে এর আগে তারা বলেছিল, তারা ইসরায়েলের উত্তর উপকূলে দুটি ‘উড়ন্ত লক্ষ্যবস্তুকে’ বাধা দিয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার লেবাননের সরকারি বার্তাসংস্থা এনএনএ জানিয়েছে, দক্ষিণ লেবাননের হানিনের একটি আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে দুইজন নিহত এবং ছয়জন আহত হয়েছেন।

এনএনএ বলেছে, ‘ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান আকাশ থেকে দুটি সারফেস ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে একটি দোতলা বাড়িতে আঘাত করেছে। এই ভবনটিতে একটি পরিবার বসবাস করছিল। ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পরও তারা এই শহর ছেড়ে যায়নি।’

হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা দুই বেসামরিক নাগরিকের হত্যার প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার গভীর রাতে উত্তর ইসরায়েলে কয়েক ডজন রকেট নিক্ষেপ করেছে।

এক বিবৃতিতে গোষ্ঠীটি বলেছে, বেসামরিক বাড়িঘরে ইসরায়েলি আক্রমণের প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসাবে, বিশেষ করে হানিনে ভয়াবহ গণহত্যা এবং বেসামরিকদের হত্যা ও আহত করার প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসাবে হিজবুল্লাহ উত্তর ইসরায়েলে ‘কয়েক ডজন কাতিউশা রকেট’ নিক্ষেপ করেছে।

এর আগে মঙ্গলবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, তাদের বিমান হামলায় দক্ষিণ লেবাননে দুই হিজবুল্লাহ যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। হিজবুল্লাহ পরে তাদের যোদ্ধা হুসেইন আজকউলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে, কিন্তু বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

পৃথক ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর অভিজাত রাদওয়ান বাহিনীর যোদ্ধা মোহাম্মদ আত্তিয়া নিহত হয়েছেন বলে সামরিক বাহিনী জানিয়েছে। তবে এই দাবির বিষয়ে হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

মূলত গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েলের সংঘাত শুরুর পর থেকে হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী নিয়মিতভাবেই সীমান্তে গুলিবিনিময় করছে। হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর এটিই ইসরায়েল-লেবানিজ সীমান্তে সবচেয়ে খারাপ সহিংসতার ঘটনা।

বার্তাসংস্থা এএফপির তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলের এই লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত লেবাননে কমপক্ষে ৩৭৬ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই হিজবুল্লাহ যোদ্ধা। এছাড়া নিহতদের মধ্যে ৭০ জন বেসামরিক নাগরিকও রয়েছেন।

অন্যদিকে হিজবুল্লাহর হামলায় ১০ ইসরায়েলি সৈন্য ও ৮ বেসামরিক নাগরিকসহ মোট ১৮ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। এছাড়া নিয়মিত গোলাবর্ষণের কারণে সীমান্তের উভয়পাশে কয়েক হাজার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

 

 

Share this post

PinIt
scroll to top