যে কারণে খুলনা বিভাগে তীব্র তাপপ্রবাহ

-প্রবাহ-1.png

দেশের তথ্য ডেস্ক।।  সপ্তাহখানেক ধরেই খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে এই বিভাগের যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় এ মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। প্রতিদিনই তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি করে বাড়ছে। এখন সেখানে বইছে আগুনের হলকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীত ও গ্রীষ্মে ভূমিকা রাখা মহাদেশীয় বায়ুপ্রবাহের প্রবেশদ্বার যশোর ও চুয়াডাঙ্গার কাছাকাছি এলাকাগুলো। গরমের সময় ভারতের গুজরাট বা অন্যান্য এলাকায় সৃষ্টি হওয়া তপ্ত হাওয়া নানা পথ পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে ঢোকে মূলত এই দুই জেলা দিয়ে। ফলে ভৌগোলিক ও ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের কারণে এখানে গরম ও শীত তীব্র হয়।

শনিবার যশোরে তাপমাত্রা আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর চুয়াডাঙ্গায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সপ্তাহখানেক ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায়।

শুধু গরম নয়, শীতকালেও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে এ জেলায়। দেশে প্রচণ্ড শীত পড়ে এমন তিনটি স্থানের একটি চুয়াডাঙ্গা। প্রায় অভিন্ন অবস্থা পার্শ্ববর্তী যশোরের। আবহাওয়াবিদ ও ভূতত্ত্ববিদরা বলছেন, ভূপ্রাকৃতিক কিছু কারণেই এ ঘটনা ঘটে। সঙ্গে আছে ভৌগোলিক অবস্থান।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, উত্তর গোলার্ধ থেকে আসা শীতল বায়ু বাংলাদেশ বা এ অঞ্চলে সোজা হয়ে ঢুকতে পারে না। এ বায়ুর একটি অংশ কাশ্মীর, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের একাংশ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। গরমের দিনে দিল্লির তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমতে কমতে বাংলাদেশে আসতে থাকে। আবার শীতকালে দিল্লির অতি শীত ধীরে ধীরে কমতে কমতে বাংলাদেশে আসে। শীতের সময় এই উত্তরের হাওয়া বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অংশ চুয়াডাঙ্গা ও যশোর দিয়ে প্রবেশ করে।

বজলুর রশীদ ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, শীত ও গ্রীষ্মে ভূমিকা রাখা মহাদেশীয় বায়ুপ্রবাহের প্রবেশদ্বার চুয়াডাঙ্গা এবং এর কাছাকাছি এলাকাগুলো। গরমের সময় ভারতের গুজরাট বা এসব এলাকায় সৃষ্টি হওয়া তপ্ত হাওয়া নানা পথ পেরিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে ঢোকে। আর তা আসে চুয়াডাঙ্গার প্রান্ত দিয়ে।

স্থানীয় ভৌগোলিক ও ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের কারণে চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে গরম ও শীত তীব্র– এমনটা ধারণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ভূঁঞা। তিনি বলেন, এ এলাকায় জলাভূমি অপেক্ষাকৃত কম। জলাভূমি বেশি থাকলে শীতকালে তা শীত ধারণ করে ঠান্ডা কমিয়ে দিতে পারে। কিন্তু এ জনপদে তা হয় না। এ কারণে শীত দীর্ঘায়িত হয়। আবার গরমের সময় জলাভূমির স্বল্পতার জন্য আর্দ্রতা ধরে রাখা যায় না। ফলে গরম বাড়ে।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়া পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসানের দাবি, কর্কটক্রান্তি রেখার খুব কাছাকাছি অবস্থানে আছে চুয়াডাঙ্গা। মূলত, ভৌগোলিক কারণেই এ জেলায় শীত মৌসুমে তীব্র শীত ও গরমকালে তীব্র গরম হয়।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বইছে। তিনি আরও বলেন, পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর ওপর দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা চলে গেছে। চুয়াডাঙ্গা পাশাপাশি হওয়ায় জেলাতে বেশি গরম পড়ছে। এ ছাড়া ঈশ্বরদীর পাশ দিয়ে দেশের বৃহত্তম পদ্মা নদী বয়ে গেছে। তবে চুয়াডাঙ্গায় উল্লেখযোগ্য তেমন নদী নেই, যা আছে তাও মৃতপ্রায়। বেশি নদী ও নদীতে পানি থাকলে এমন অবস্থা হতো না।

 

Share this post

PinIt
scroll to top